গণফোরামের প্যাড ‘চুরি’ করে স্পিকারের কাছে শপথ নেয়ার চিঠি পাঠিয়েছে মোকাব্বির খান-এড. সুব্রত চৌধুরী

0
675

সিলেট-২ আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে নির্বাচিত মোকাব্বির খানের শপথ ঘিরে গণফোরামে চলছে তালগোল। মোকাব্বির বলছেন- দলীয় প্রধান ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত নিয়েই তিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন। আর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী সভাপতি বলছেন- ভিন্নকথা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে একাদশ নির্বাচন বর্জন ও এই সংসদে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় গণফোরাম।

এদিকে মোকাব্বির খান দলীয় প্যাডে স্পিকারের কাছে শপথের ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছেন। গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলছেন- মোকাব্বির দলীয় প্যাড চুরি করে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে মোকাব্বিরের শপথে তার ব্যক্তিগত সায় রয়েছে। এসব নিয়ে গণফোরামে চলছে তোলপাড়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও এ নিয়ে গণফোরামকে চাপে রেখেছে।

মোকাব্বিরকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মোকাব্বির খানের শপথের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পিকারের একান্ত সচিব এমএ কামাল বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শপথ নেবেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সদস্য।’ শপথের বিষয়ে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমি গণফোরামের সিদ্ধান্তেই শপথ নিচ্ছি। আমার পার্টি থেকে বলা হয়েছে শপথ নিতে। আমি তো বিএনপির প্রার্থী না। তাই তাদের বিষয়ে কিছু জানি না। আমি সোমবার বিকালে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি। তবে সময় কখন সেটি জানি না।’

গতকাল সোমবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার মতিঝিলের চেম্বারে যান মোকাব্বির খান। উদ্দেশ্য শপথের আগে ড. কামালের আশীর্বাদ কামনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মোকাব্বির খান জানান, ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথগ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ বা ৩ মার্চ আমার শপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।’

তিনি জানান, তার শপথের বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপির সঙ্গে সরাসরি কোনো কথা হয়নি। অফিসিয়ালি তাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে কেন শপথ নিতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা পুরো নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থা থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সেটি কিন্তু প্রত্যাখ্যান করিনি। অর্থাৎ যেখানে জনগণ ভোট দিয়েছে, সেখানে তো আমাদের প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। যেখানে ভোট হয়েছে, সেটি তো গণরায়। ২৯২টি সংসদীয় আসনে ভোট হয়নি, সেটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ ৮টি আসন দিয়ে তো পুরো বাংলাদেশকে বিচার করা যায় না। এ জন্য আমরা বলছি যে, নির্বাচনটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা যে নির্বাচনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছি, সেটি বলার জন্য সংসদে যাওয়া। এটি তো অলিগলিতে বললে হবে না। সংসদে গিয়ে বলতে হবে যে এই নির্বাচন হয়নি।’

শপথ নেয়ায় সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তা হলে আপনাকে কেন গণফোরাম শপথের অনুমতি দেবে—জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেননি বলেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। এ জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই শপথ নিতে যাচ্ছি।

নির্বাচনের পর বলেছিলেন শপথ নেবেন না, তা হলে এখন কেন শপথ নিচ্ছেন— জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা সবসময় বলেছি যে, এ মুহূর্তে শপথ নেব না। আমি প্রথম থেকে বলেছি যে— আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের ইচ্ছা ও আশঙ্কা, আমার ব্যক্তিগত মতামত এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমার দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি আমারও সিদ্ধান্ত- গণফোরামের সিদ্ধান্ত। সেই কথায় আমি এখনও আছি। আর গণফোরামের নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন— আমরা শপথের বিষয়ে ইতিবাচক। পরে যখন স্যার ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন যে, আমরা এ মুহূর্তে শপথ নিচ্ছি না। কারণ তখন শপথ নেয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ নিতে যাচ্ছি। তবে মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, দলীয় ফোরামে মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আর গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন।’ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথগ্রহণ করে থাকে, সেটি তার নিজ দায়িত্বে। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

গণফোরামের প্যাডে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোকাব্বির খান গণফোরামের প্যাড ‘চুরি’ করে সেই কাগজে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। মোকাব্বিরের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরে বৈঠক করে তা জানানো হবে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম বলেন, মোকাব্বির ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, মোকাব্বির খান দলকে ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। যদি উনি শপথ নেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গণফোরামের প্যাড তিনি কোথায় পেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লতিফুল বারী হামিম বলেন, উনি কোথা থেকে প্যাড পেলেন এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। হয়তো অফিসের ড্রয়ার থেকে নিতে পারেন। যদি তিনি প্যাড ব্যবহার করেন, তা হলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই এ প্যাডে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর স্বাক্ষর থাকার কথা। কিন্তু ওই প্যাডে মন্টুর কোনো স্বাক্ষর নেই। এ ছাড়া স্পিকারের কাছে উনি যে চিঠি দিয়েছেন তাতেও মন্টুর স্বাক্ষর ছিল না।

ড. কামালের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে মোকাব্বির শপথ নিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে গণফোরামের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন কিন্তু গণফোরামের মালিক নন। তিনি দলের সভাপতি এবং আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া তিনি একা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। এর আগে ৭ মার্চ শপথ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত পাল্টান মোকাব্বির খান। দলীয় চাপের মুখে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে ওই দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ শপথ নেন গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গণফোরামের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোকাব্বির খান। তিনি সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন। এই আসনে প্রথমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার মনোনয়ন বাতিল হলে মোকাব্বিরকে সমর্থন দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + three =