আরডিএ’র সাবেক মহাপরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

0
502

অবি ডেস্ক: ২ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আব্দুল মতিনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় দুদকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।  মঙ্গলবার দুপুরে এ মামলা করা হয়। বগুড়া জেলা দুদক সূত্রে জানা গেছে দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুর ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পল্লী জনপথ প্রকল্পের জন্য বরাদ্ধকৃত টাকা থেকে ২ কোটি ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।

 

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান, পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, উপ-পরিচালক আবিদ হোসেন, উপ-পরিচালক শেখ শাহারিয়ার, সহকারী পরিচালক আরিফ হোসেন এবং হিসাবরক্ষক রুনিয়া ইসলাম রুমী। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত শেষে এ মামলা দায়ের করা হয়।

এর আগে গ্রাম পর্যায়ে স্বল্প খরচে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য নেয়া ‘পল্লী জনপদ’ নামে বড় একটি প্রকল্পসহ ২০১২ সাল থেকে নেয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নথি, ব্যাংক হিসাব, নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র তলব করে দুদক কর্মকর্তারা। ওইসব নথি ও রেকর্ডপত্র চেয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আরডিএ’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এম এ মতিনকে চিঠি দেয়া হয়।

দুদকের তথ্যসূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া ইতোপূর্বে বাস্তবায়ন করা চরজীবিকায়ন প্রকল্পসহ পানি সরবরাহ (ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প) এবং খামার এবং স্কুল প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হয়।

পল্লী এলাকায় বসতবাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে ফসলি জমি নষ্ট না হয় সেজন্য গ্রাম পর্যায়ে সরকারিভাবে স্বল্প খরচে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ২০১৪ সালের ১ জুলাই ‘পল্লী জনপদ’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। দেশের ৭টি বিভাগের অধীন সাত জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আরডিএ’কে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪২৪ কোটি টাকা।

রাজশাহী বিভাগের জন্য বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) কার্যালয়ের অদূরে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর মৌজায় ৩ দশমিক ৯১ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিন বছর আগে ওই প্রকল্পের জন্য জমি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল শাখার (এলএ) মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ অর্থাৎ কেনার কথা থাকলেও আরডিএ তা মানেনি। বরং স্থানীয় কিছু মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৩০ জুন সম্পাদিত দলিলে প্রকৃত মূল্যের চাইতে দ্বিগুণের বেশি দাম দেখানো হয়। এভাবে আরডিএ’র মহাপরিচালকের (ডিজি) নামে জমি কিনতে গিয়ে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা গচ্চা যায়।

পল্লী জনপদ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুধু বগুড়াতেই নয় অন্য বিভাগের অধীন জেলাগুলোতেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। যে কারণে নির্ধারিত সময় ২০১৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে বলা হলেও আরডিএ তা পারেনি। যে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে।

বগুড়ায় আরডিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এম এ মতিন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক ছিলেন। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল তৎকালীন মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম বদলি হয়ে গেলে পরিচালক এম এ মতিন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা সম্পন্ন আরডিএর মহাপরিচালকের পদটি বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এম এ মতিন নন ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও নানা কৌশলে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাপরিচালকের পদ ধরে রাখেন। এমনকি নিজে ওই পদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি সবখানে নিজেকে মহাপরিচালক পরিচয় দেন। তাছাড়া আরডিএ’র ওয়েব সাইটেও তার পদবি ‘মহাপরিচালক’ লেখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আরডিএ’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. এম এ মতিন বলেন, এখনই এ বিষয়ে কিছু বলবো না। আমি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো। আর প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ কিংবা কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 5 =