অন্তহীন দুর্নীতি ও অপরাধের নায়ক সাবেক বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী

5
1758

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অন্তহীন দুর্নীতি ও অপরাধের নায়ক দুর্নীতিবাজ ইউনুছ আলী বন বিভাগের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক তিনি শুধু দুর্নীতিতে হাত পাকিয়েছেন তা নয় তিনি সাংবাদিক নির্যাতনেও চ্যাম্পিয়ানশীপ অর্জন করেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় বন বিভাগের দায়িত্ব পালন করায় নানা সুবিধা সৃষ্টি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ইউনুছ আলী কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) থাকাকালে সিলেটের বড়শী জোড়া ইকোপার্কের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এ সময় তিনি সিলেটের তৎকালীন ডিএফও’র সাথে আঁতাত করে বনায়ন সৃজন ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ না করে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। ইউনুছ আলী কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক থাকাবস্থায় রিডল্যান্ড এফর স্টেশন প্রকল্পের প্রায় ১৬০০ হেক্টর বাগান শুধুমাত্র কাগজ-কলমে দেফিয়ে তা সৃজন না করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। সূত্র আরো জানায়, ইউনুছ আলী দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন ১ কোটি টাকার উপরে ঘরবাড়ি মেরামতের টাকা কোন কাজ না করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন।

 

ইউনুছ আলী সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক (সাধারণ) থাকাকালীন বায়োডাইভারসিটি প্রকল্পের প্রায় ৪ কোটি টাকার গাড়ি, কম্পিউটার ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন যা অতি নিম্নমানের। সেগুলো কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই মালামাল এখনও গুদামজাত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে, সারাদেশের বন বিভাগের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরে প্রায় একশ কোটি টাকার উপরে সরকারি রাজস্ব অনাদায়ী ছিল। উক্ত রাজস্ব আদায়ে ইউনুছ আলী প্রধান বন সংরক্ষকের দায়িত্ব পালনকালীন অবস্থায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিধি-বিধান লংঘন করে বন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনে ক্যাডার কর্মকর্তার পরিবর্তে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা পোস্টিং দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বদলির নীতিমালা লংঘন করে কতিপয় কর্মচারীকে রাঙামাটি সার্কেল থেকে চট্টগ্রাম সার্কেলে বদলি করেন ইউনুছ আলী। চেক স্টেশনে ১ বছরের বেশি দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকলেও তার আস্থাভাজনরা ২ বছর থেকে ৪ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন যার ভাগ ইউনুছ আলী নিয়মিত পেয়েছেন। কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের অধীন সুয়াগাজী ফরেস্ট চেক স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা রেজাউল আলম ইউনুছ আলীর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। রেজাউল আলম বদলি ও নিয়োগ বিধি লংঘন করে ১ বছরের অধিককাল সুয়াগাজী চেক স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে উপার্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি পুনরায় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে পোস্টিং পেয়েছিলেন এবং লোভনীয় পোস্টিং বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে সূত্র জানায়। সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী বিগত দিনে তার স্ত্রী ও সন্তানদের মালয়েশিয়া পাঠিয়ে সেখানে সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন এবং ঢাকা শহরে রয়েছে তার ২০ টির ও বেশী বাড়ি বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়। এছাড়া সারাদেশে বন বিভাগের কোটি কোটি টাকার জব্দকৃত বনজ দ্রব্য বিক্রয়ের কোন ব্যবস্থা ইউনুছ আলী গ্রহণ করেননি। যার ফলে তা নষ্ট হয়েছে এবং সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে একটি ফরেস্ট চেক স্টেশন রয়েছে। সেখানে বিগত দিনে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের উন্নয়নের অর্থ তছরূপকারী ফরেস্ট রেঞ্জার শিব প্রসাদ ভট্টাচার্যকে পোস্টিং দেওয়া হয়। তার পোস্টি অর্ডার ডিএফও’র এখতিয়ারাধীন হলেও সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী ফরেস্ট রেঞ্জার শিব প্রসাদ ভট্টাচার্যেকে সরাসরি অফিস আদেশ দেন ,ওয়াইল্ড লাইফ থেকে নরমালে একই ব্যাক্তি একই সাথে দুইটি পোষ্টের দ্বায়ীত্তে থাকতে পারেন না বা এমন কোন নজির নেই যা স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্ব্যবহারের শামীল। এই চেক স্টেশনে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, লামা বন বিভাগ, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ থেকে ট্রাকভর্তি প্রতিটি গাড়ি থেকে নির্ধারিত হারে সোনারগাঁও চেক স্টেশনসহ ঐ পথে আসা সকল স্টেশনে ঘুষ দেওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া ফার্নিচারের গাড়ি কিংবা ট্রাক এবং জোতের গাছ (নিজের বাগানে লাগানো গাছ) বহনকারী গাড়ি থেকেও ঘুষ দিতে হত সোনারগাঁও চেক স্টেশনের স্টেশন অফিসার শিব প্রসাদ ভট্টাচার্যকে। অবৈধ টাকার জোরে তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। তিনি ইউনুছ আলীর ডানহস্ত বলে পরিচিত। ইউনুছ আলীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বন প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছিল। যা তিনি নিজেও স্বীকার করেন।

তিনি সারাদেশের বন প্রশাসনে রাম রাজত্ব কায়েম করেন। তার দুর্নীতির খবর পত্রিকায় যাতে না আসে সেজন্য সাংবাদিকদেরও নির্যাতন করেছে।
তার পোষ্য কর্মচারী দিয়ে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করিয়েছিলেন। তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দৈনিক পাঞ্জেরী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক তালুকদার রুমী। তালুকদার রুমীর নামে মিথ্যা ৪টি চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করিয়েছিলেন ইউনুছ আলী। যার ২টি ইতোমধ্যে পুলিশ প্রতিবেদনে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালত মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের হাতিয়া রেঞ্জের তৎকালীন দুর্নীতিবাজ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলীর আত্মীয় ফজলুর রহমান মিয়া হাতিয়া আদালতে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক তালুকদার রুমীর নামে। পুলিশ প্রতিবেদনে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ধুমঘাট ফরেস্ট চেক ষ্টেশনের তৎকালীন দুর্নীতিবাজ স্টেশন অফিসার হুমায়ুন কবির চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ আদালতে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করেন। যার নেপথ্যে ছিলেন নায়ক সাবেক সিসিএফ ইউনুছ আলী। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন চট্টগ্রামের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে। পুলিশ তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। এছাড়া আরো ২টি মামলা তার দুর্নীতিবাজ কর্মচারী দিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কুমিল্লার জেলার সদর দক্ষিণ থানায় দায়ের করিয়েছেন। সাবেক সিসিএফ ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
তার বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে দেশ এবং জাতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞমহল। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগীমহল। স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও লুটপাটের বিষয়ে ইউনুছ আলীর সাথে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে এই প্রতিবেদক কে সাবেক এই বন কর্মকর্তা ইউনুছ আলী ও তার ভাতিজা সিলেট ক্যান্টম্যান্ট প্যারা কমান্ডের সিও কর্নেল ইম্রুল মোবাইল ফোনে ফোন করে সংবাদ প্রচারে বাধা দেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন এ ব্যাপারে প্রতিবেদক মতিঝিল থানায় গত ০৯/০৩/২০১৯ ইং তারিখে একটি সাধারন ডায়েরী করেন যার নং ৫৪৪ ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 2 =