গণতন্ত্রের মানসকন্যা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, সাংবাদিকবান্ধব, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন এর স্মারকলিপি।

0
2657

বরাবর

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা।

 

বিষয়ঃ তৃণমুল এবং মধ্যমসারির সাংবাদিকদের উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে     ফেডারেশন অব বাংলাদেশ

জার্নালিস্ট র্গানাইজেশন এর স্মারকলিপি।

জনাব

আস্সালামুআলাইকুম।

প্রথমেই ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন’ এর পক্ষ থেকে “দেশরতœ জননেত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি, প্রেসবান্ধব সফল প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি জেনে খুশি হবেন যে. ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন’ দেশের সকল জেলা, উপজেলা, থানা থেকে শুরু করে সকল বিভাগ ও রাজধানীর সাংবাদিকদের অধিকার ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি দেশের সকল সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠনের জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে চলেছে। দেশের নানা ক্রান্তিলগ্নে এই সংগঠন সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন দিবস উদযাপন করে আসছে। রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন’-এর ভূমিকা অতিব গুরুত্বপুর্ণ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইন করে সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গঠন করে দিয়েছেনÑ যা বর্তমানে সারা বিশ্বে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত। সার্কভুক্ত দেশের প্রেস কাউন্সিলগুলোর অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছেÑ মধ্যম সারি এবং তৃণমুল সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করা। সে ভিশনকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে চলেছি। জাতির জনক সাংবাদিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৪ ফেব্রুয়ারী প্রেস-কাউন্সিল আইন তৈরীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের শৃংখলা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। কিন্তু আজও এর বাস্তবায়ন হয়নি সঠিকভাবে।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশের  সরকারের প্রধান হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সারা দেশে নিয়োজিত সংবাদকর্মীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি, রাজস্ব ফাঁকিবাজ, চোরাচালানি, মজুদদার, ভুমিদস্যু, খাদ্যে ভেজালকারী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মেচন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সকল গোয়েন্দা সংস্থা, রাজস্ব বিভাগসহ দুদককে সহযোগিতা তথা দেশের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে সকল অপরাধীদের জিঘাংসার শিকার হয়ে অনেক সংবাদকর্মী, সাংবাদিক, সম্পাদক, বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ে নিজের জীবন বিসর্জন পর্যন্ত দিয়েছেন। প্রকারান্তরেÑসে সকল সাংবাদিকের হত্যার বিচার আজও হয়নি। অনেক সময় অপরাধীদের প্রভাবে সম্পাদক বা সাংবাদিকের নামে হয় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা বা হয়রাণীমুলক নানা ধরনের মিথ্যা মামলায় অনেকেই আজও হয়রানী, হত্যা, নির্যাতিত হচ্ছেন। আবার এত কিছুর পরও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের খবর এ সকল সংবাদপত্রগুলো নিয়মিত দেশবাসির সম্মুখে তুলে ধরছে।

সংবাদপত্র শুধু রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভই নয়। এটি এখন বর্তমান সরকার কর্তৃক ঘোষিত একটি শিল্প। তাই এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখা আবশ্যক। জাতির বিবেক হিসাবে খ্যাত এই শিল্পখাতকে বাদ দিয়ে বা এড়িয়ে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশ সম্ভব নয় বরং এর সঠিক প্রণোদনা ও পরিচর্যার মাধ্যমেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এ জন্য প্রথমেই প্রেস-কাউন্সিলকে যুগোপযোগি শক্তিশালী করতে হবে।  এ সেক্টরে সারা দেশে কত সাংবাদিক কাজ করছে, কতগুলো সংগঠন রয়েছে এর প্রকৃত কোন তথ্যচিত্র তথ্য মন্ত্রণালয় বা তথ্য অধিদফতর বা অন্য কোন দায়িত্বশীল সংস্থার কাছে নেই।

এছাড়াও সাংবাদিক সংগঠনগুলো কেউ রেজিষ্ট্রেশনবিহীন, কেউ সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন আবার কেউবা জয়েন্ট ষ্টক রেজিষ্টার অব ফার্মস থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন। কিন্তু কেউই  তথ্য অধিদপ্তর বা প্রেস কাউন্সিলের কাছে নিবন্ধন করেননি বা করতে হবে এমন কোন নীতিমালাও নেই। দেশের অন্যান্য সেক্টরে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা বোধ হয় আর কোথাও নেই। আমরা মনে করি, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংগঠনগুলোরও একটি শৃঙ্খলা থাকা আবশ্যক। সে জন্য উক্ত সংগঠনগুলোরও নিবন্ধন পদ্ধতি, বিধিমালা প্রণয়নসহ জাতীয় নীতিমালা আবশ্যক। এ নীতিমালা না থাকায় অনেক অপেশাদার ব্যক্তি, যেমন পান দোকানদার, মাদক ব্যবসায়ী, ডিম বিক্রেতা, ভুমিদস্যুগণ, কালোবাজারী, নারী শিশু পাচারকারীসহ নানা পেশার নানা অনৈতিক লোকজন এখন সাংবাদিকতার কার্ড বহন করে সাংবাদিক সেজেছেন। এমনকি গাড়িতে প্রেস/সাংবাদিক স্টিকার লাগিয়ে রাজপথে ট্রাফিকদের নিকটও দাপটের সাথে প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। এতে করে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফলে এ অঙ্গনে এক প্রকার নৈরাজ্য চলছে। বিভিন্ন পেশায় যেমন রেজিষ্ট্রেশন থাকা বাধ্যতামুলক তেমনি সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা, নৈতিকতা, বাধ্যবাধকতা, দায়বদ্ধতা থাকাও আবশ্যক। তা না হলে ভবিষ্যতে এ পেশায় চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। যা জাতির বিবেক হিসাবে পরিচিত রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকেই নয়, এ শিল্পেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। যা সংঙ্গত কারনে রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হবার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।

এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রস্তাবনা সমুহ নিম্নরূপ :

১। ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃত সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ১ম, ২য়,ও তয় স্তম্ভের সাথে ( ১ম মাননীয় সংসদ সদস্য, ২য় প্রশাসন বিভাগ, ৩য় বিচার বিভাগ) তুলনা মুলক মুল্যায়ন করতে হবে। যথা:-

ক) এ প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের জন্য পৃথক বাজেট দিতে হবে। এ বাজেটের মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় সাংবাদিকদের জন্য একটি বহুতল ভবন তৈরি করে দিতে হবে।

যেটি ঐ উপজেলার সাংবাদিকদের অফিস রুম, কনফারেন্স হল হিসাবে ব্যবহার হবে। অতিরিক্ত জায়গা ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে যে আয় হবে তা দিয়ে বিভিন্ন জনসচেতনতা মুলক কর্মকান্ডসহ সভা-সেমিনার পরিচালিত হবে। এর আয় দিয়ে ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, অবসর ভাতা প্রভৃতি তহবিল সংগ্রহ করা হবে।

খ) সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যায় সকল সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে প্রতি বৎসর অনুদান প্রদান করতে হবে।

২। দেশের সকল সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ প্রেস কাউন্সিল এর মাধ্যমে শৃঙ্খলা রক্ষায় ও শনাক্ত করণে নিবন্ধন করতে হবে। তাহলে দেশে কতজন সাংবাদিক রয়েছে তা নির্ধারন করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে যথাযথ আইন তৈরীর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

(আইনজীবিগন আইন মন্ত্রনালয়ের অধীন, ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন এবং ডাক্তারগন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন নিবন্ধিত তেমনি সাংবাদিকরাও তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন নিবন্ধন হওয়া বাঞ্চনীয়। তা হলে দেশে কতজন আইনজীবি, কত জন ডাক্তার এবং কতজন ব্যবসায়ী রয়েছে তা যেমন জানা সম্ভব তেমনি কতজন সাংবাদিক রয়েছেন তা জানা সম্ভব হবে এবং সরকারের কাছে তার একটি রেকর্ড থাকবে।

৩। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করতে হবে। ঐ দিবসে প্রতিটি জেলা, উপজেলার সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধানে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।

৪। সাংবাদিকদের সার্বিক অধিকার রক্ষায় যুগোপযোগী আইন তৈরী করে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করণ এবং সাংবাদিকদের যে কোন মামলার বিচারিক ক্ষমতা কেবল মাত্র প্রেস কাউন্সিলরকে দিতে হবে। অন্য কোন আদালতে সাংবাদিকদের বিচার এর ক্ষমতা রহিত করতে হবে।

৫। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে ফেডারেশনের মনোনিত ব্যাক্তিকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।

৬। রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল কমিটিতে রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে ফেডারেশনের মনোনিত সাংবাদিককে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। প্রেস কাউন্সিল পরিচালনা বোর্ডে, পিআইবি পরিচালনা বোর্ড, কল্যান ট্রাষ্ট পরিচালনা বোর্ডে ফেডারেশন মনোনিত প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। ওয়েজবোর্ড বঞ্চিত দেশের সকল সাংবাদিককে কল্যান ট্রষ্টের সদস্য করতে হবে।

তাহলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তৈরী করা সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষার সেই আইন এবং  প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের মর্যাদা, শৃঙ্খলা রক্ষায় ও জাতি গঠন এবং উন্নত  দেশ গঠনে আরো জোরালে ভুমিকা রেখে রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে ব্যাপক ভুমিকা রাখা সম্ভব হবে।

 

এস এম মোরশেদ

চেয়ারম্যান

০১৯১১-৩৮৫৯৭০।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 1 =