চৈত্র মাসেই বৃষ্টিতে পানি জমে একাকার হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা

0
616

চৈত্র মাসেই বৃষ্টিতে পানি জমে একাকার হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকার রাস্তা। কোনো কোনো এলাকায় কোমরসমান পানিতে অসহনীয় বিড়ম্বনায় পড়ে নগরবাসী।

 

বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই জলাবদ্ধতা নগরবাসীর অন্যতম প্রধান ভোগান্তির কারণ হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে তা স্থায়ীভাবে নিরসন করা যাচ্ছে না। অসময়ের বৃষ্টিতেই রাজধানীর সড়কে পানি জমে যাওয়ার জন্য ওয়াসার খাল পরিষ্কার না করাকেই অনেকাংশে দায়ী করছেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের নর্দমাও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। নর্দমা না থাকায় দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করেছেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা। সিটি করপোরেশনের দাবি, ঢাকার ৪৩টি খাল খনন ও উন্নয়ন না করায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। কিন্তু খাল খনন, পরিষ্কার ও উন্নয়নে ঢাকা ওয়াসার দুটি আলাদা প্রকল্প কবে আলোর মুখ দেখবে তা জানা নেই সংস্থাটির কর্মকর্তাদের। ওয়াসার তথ্য মতে, খাল খনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গত বছর দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ী খালের আশপাশের ভূমি অধিগ্রহণ করে সম্প্রসারণ ও খনন করার জন্য নেওয়া হয় একটি প্রকল্প। গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রকল্পটি পাস হয় একনেকে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ওই পাঁচটি খাল সম্প্রসারণ ও খনন করা গেলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে আসত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও কার্যত কোনো কাজ শুরুই করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন এলাকার ৩০ লাখের বেশি বাসিন্দা জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পেত। ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজই শেষ করতে পারেননি কর্মকর্তারা। কবে নাগাদ প্রকল্পটি শেষ করা যাবে সে সম্পর্কে এখনো কিছু বলতে পারছেন না তাঁরা। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প আছে ঢাকা ওয়াসার। ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় গত বছরের ২২ মে। ওই প্রকল্পের আওতায় ১৬টি খাল খনন করার কথা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র একটি খাল খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে পেরেছে ঢাকা ওয়াসা। ওই প্রকল্পের পরিচালক শওকত মাহমুদ বলেন, এডিপি বরাদ্দের ভিত্তিতে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্প এলাকায় ১৬টি খালের মধ্যে রামচন্দ্র খাল নামে একটি খাল খননের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মোট দুই হাজার ১৬২ কিলোমিটার নর্দমা থাকলেও তা পরিষ্কার করা হয় না নিয়মিত। ফলে অল্প বৃষ্টিতে সড়কে জমে যায় পানি। এ ছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে এখনো নর্দমা তৈরি করা হয়নি। ফলে বৃষ্টির পানি সংশ্লিষ্ট এলাকার খাল হয়ে নদীতে পড়তে পারবে না। তাই সিটি করপোরেশনের আওতায় এলেও ওই সব ওয়ার্ডে ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন  বলেন, ‘নর্দমায় পানিপ্রবাহের ছিদ্র কম থাকায় সড়কে জমে যাচ্ছে পানি। এ ছাড়া ওয়াসার অপরিষ্কার খাল জলাবদ্ধতার জন্য অনেকাংশে দায়ী।’ ডিএসসিসির তথ্য মতে, ১২৩ জন কর্মী দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় নর্দমা। এ ছাড়া গভীর নর্দমা পরিষ্কারের জন্য তিনটি মেশিন রয়েছে। পরিষ্কার থাকলেও রাস্তা থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য নর্দমায় পর্যাপ্ত ছিদ্র না থাকায় পানি জমে যায়। এ ছাড়া খাল ভরাট থাকায় নর্দমার পানি ধারণ করে নদীতে ফেলতে না পারার কারণে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নিয়মিত কর্মীরা ড্রেন পরিষ্কার করে। তবে জনবল সংকটের কারণে নর্দমা ঠিকমতো পরিষ্কার করা যায় না।’ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সংস্থাটির আওতাধীন এক হাজার ২০০ কিলোমিটার নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ১৯৫ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করা হয়, কিন্তু এ বছর নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় পানি।স্থানীয় সরকার মন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, রাজধানীতে বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের কাজ এবং নর্দমা সংস্কার ও তৈরির কাজ চলমান থাকায় সাময়িকভাবে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে। এ ছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওয়াসাকে। এই মৌসুমে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে জলাবদ্ধতা কম হবে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম  বলেন, ‘সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার জন্য দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে নিয়ে সভা করেছি। সভায় বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প মেয়াদি কাজগুলো সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা শুরু করেছে। খাল খনন, সংস্কার ও উন্নয়নের দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে কিছুটা। তবে এবার জলাবদ্ধতা কম হবে বলে আশাবাদী আমি।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen + two =