স্প্যান বসানোয় পদ্মা সেতু এখন দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান

0
718

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১০ম স্প্যানটি বসানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ১৩৫০ মিটারের সেতু এখন ১৫শ মিটার দৈর্ঘ্যে রূপ নিয়েছে।

 

বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এই স্প্যান বসানোয় পদ্মা সেতু এখন দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান। পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ১৫ মাসের মধ্যে পুরো সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাইয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে পদ্মা সেতু। জানা গেছে, নতুন নকশা অনুযায়ী পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৪৭টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৪৭টি পাইলের মধ্যে ১৫টি পাইলের অর্ধেক বসানো হয়ে গেছে। ২৯৪টি পাইলে থাকবে মোট ৪২টি খুঁটি। এসব খুঁটির ওপরে ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২২টি খুঁটির নির্মাণ পুরোপুরি হয়ে গেছে। এই জুন মাসের মধ্যে ১০টি খুঁটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। ২২ মার্চ পদ্মা সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর সবশেষ নবম স্প্যানটি বসানো হয়। ওই দিন ১৩৫০ মিটারের সেতু দৃশ্যমান হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০ এপ্রিল জাজিরায় প্রমত্তা এই নদীর ওপর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর আরও একটি স্প্যান বসানো হতে পারে। এপ্রিলের শেষ দিকে আরেকটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। সবশেষ ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের এটিই শেষ স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়। দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিলারের রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। পিলার ও স্প্যানের পাশাপাশি সেতুতে রেলপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × five =