রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আহত শ্রমিককে হাসপাতালে ফেলে রেখে ভবন মালিক পলাতক

0
617

মাধবী ইয়াসমিন রুমা: আহত শ্রমিক মন্নান (২২) কে হাসপাতালে ফেলে রেখে ভবন মালিক বশীর পলাতক। ঘটনাটি ঘটেছে, গত ২২ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার চাঁন উদ্যান হাউজিং এলাকায়। জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টায় ভবন ঢালায়ের কাজ শেষে শ্রমিক আঃ মন্নান চা খাওয়ার জন্য চায়ের দোকানে যায়। ওই সময় ভবন মালিক বশীর শ্রমিক মন্নানকে ঢালায় মেশিন পরিস্কার করতে বলেন। তখন মন্নান ঢালায় মেশিন পরিস্কার করতে অস্বীকার করলে, ভবন মালিক বশীর তাকে ধমক দেন। পরে শ্রমিক সর্দার আমীর আলী মেশিন চালু করে দেয় এবং ভবন মালিক মন্নানকে চটের বস্তা দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করতে বলেন। পরিস্কার করার সময় আকস্মিকভাবে চটের বস্তার সাথে মন্নানের ডান হাত মেশিনের মধ্যে ঢুকে যায়। ফলে মন্নান গুরুতর আহত হয়। ওই সময় ভবন মালিক বশীর, ঠিকাদার শাহ আলম, শ্রমিক সর্দার আমীর আলী সহ কয়েকজন শ্রমিক আহত মন্নানকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার অপারেশনের কথা বলেন।

 

ওই সময় হাসপাতালে অপারেশন করার মতো কোনো ডাক্তার উপস্থিত না থাকায়, আহত মন্নানকে দ্রæত সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। ভবন মালিক বশীর মন্নানকে সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে না নিয়ে নূরজাহান অর্থপেডিক এন্ড জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তারও তাৎক্ষণিকভাবে অপারেশন করার কথা ব্যক্ত করেন।

একইসাথে জানান, অপারেশনের জন্য ৪০ হাজার টাকা লাগবে। টাকার অঙ্ক শুনে ভবন মালিক বশীর টাকা নিয়ে আসার কথা বলে কৌশলে সেখান থেকে গা ঢাকা দেয়। পরে কৌঁশল খাঁটিয়ে ঠিকাদার শাহ আলম ও শ্রমিক সর্দার আমীর আলীও কেটে পড়েন বলে সূত্রে জানা গেছে। সময়ক্ষেপন হওয়ায় আহত মন্নানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। ওই সময় মন্নানের আত্মীয়-স্বজন তার মা রানু বিবিকে জানান। অসহায় মা রানু বিবি এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ধার-দেনা ও সুদে টাকা এনে পাঠিয়ে দেয়। ওই দিন রাতেই অপারেশন করে মন্নানের ডান হাত কনুইয়ের উপর থেকে কেটে ফেলে দেয়। আহত মন্নান ভোলা জেলার লালমোহন থানার চরকালিদাস গ্রামের বাদশা মিয়ার পুত্র।

আহত মন্নানের মা রানু বিবি জানান, অপারেশন সহ মোট ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেলে মন্নানকে আনতে হয়েছে। ধার-দেনা ও সুদ করে এবং ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করতে হয়েছে। ছেলের চিকিৎসার জন্য মালিক, ঠিকাদার ও শ্র্রমিক সর্দার কেউ এ পর্যন্ত এগিয়ে আসেননি।

ছেলে এখনো সুস্থ্য হয়নি। কি করে চিকিৎসা করে ছেলেকে সুস্থ্য করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেলো ছেলেটা। আমার ৭ জন মানুষের সংসার চলবে কিভাবে? ছেলেটা আমার সংসার চালাতো। ওর বাবা অসুস্থ্য মানুষ। আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে আহত মন্নানের অসহায় মা রানু বিবি বিচারের আশায় মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

থানার অফিসার ইনচার্জ জি.জি বিশ্বাস ও ইন্সপেক্টর তদন্ত আবুল কালাম আজাদ অভিযোগটি আমলে নিয়ে এস. আই বুলবুল আহম্মেদকে তদন্তভার দেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 1 =