Site icon Aparadh Bichitra

সরকারের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে অভিনব কৌশলে চলছে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও সরকারের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে অভিনব কৌশলে চলছে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য।

 

গোপনে বাসায় প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছেন হোসেনপুর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের অনেক শিক্ষক। স্কুলের ক্ষেত্রে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তেমন কঠোর অবস্থান না থাকায় কলেজের শ্রেণিকক্ষে প্রকাশ্যেই প্রাইভেট পড়াচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক। কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে সরকারের রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। আদালত ও মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ অমান্য করে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অভিভাবকদের বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে। গত কয়েকদিন সরেজমিনে ঘুরে পৌর সদরের একাধিক শিক্ষককে প্রাইভেট পড়াতে দেখা গেছে। ঐতিয্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোসেনপুর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাতি শাখার গনিতের শিক্ষক মোছাঃ সেলিনা আক্তার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে দিনে কয়েকটি ব্যাচে প্রায় ২০০ ছাত্র ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ান। দরজা-জানালা বন্ধ করে কৌশলে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন তিনি। যার নিজের হোসেনপুর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেদরক পিটনির অভিযোগসহ স্কুলের যেতে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহী করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরজমিনে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে গোপন দরজা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেন শিক্ষক মোছাঃ সেলিনা আক্তার । প্রাইভেট পড়ানোর দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করা হলে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালান তিনি। হোসেনপুর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ জহির রায়হান বলেন, ‘নীতিমালা অনুসারে মোছাঃ সেলিনা আক্তারসহ কোনো শিক্ষক আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেননি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রমতে, হোসেনপুর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের একাধিক শিক্ষক ছাড়াও হোসেনপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক আরিফুল ইসলাম, হোসেনপুর আদর্শ মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মোঃ নরুল আজম পারভেজসহ অনেকেই সরকারি নীতি মালা ভঙ্গ করে প্রাইভেট ও কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জন শিক্ষক প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা’২০১২’ এর ১৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ ধারায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধি’১৯৮৫’ এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ থাকলেও নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না এই শিক্ষকরা। হোসেনপুর আদর্শ মহিলা কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মোঃ নরুল আজম পারভেজ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়াচ্ছিলেন। তিনি দাবি করেন, অধ্যক্ষের অনুমতিক্রমেই নীতিমালা অনুসরণ করে অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন। তবে সকাল বেলায় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাসের কারন জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি। হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষ জানান, এইচ এস সি পরীক্ষা চলাকালে সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে। কেউ যদি নীতিমালা বহির্ভূতভাবে প্রাইভেট ও কেচিং লুকিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করেন সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।