তার কোনো ডাক্তারির ডিগ্রিও নেই

0
431

কলকাতার লেকটাউনের ‘ক্রিটিক্যাল ক্যানসার ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিসার্চ সেন্টার এন্ড ক্লিনিক’-এর সামনে বছরের সব সময়ই লেগে থাকতো ভিড়। আর এর মধ্যে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা থাকতো অর্ধেকের বেশি।

 

সকলেই আসতেন সোরিনাম থেরাপিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরোদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে চিকিৎসা করাতে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এ চিকিৎসক ১৫০০ রুপি ফি নিতেন। অসহায় রোগীর পরিবার যে এই চিকিৎসকের কাছে বছরের পর বছর প্রতারিত হয়েছেন তা জানতেও পারেননি কেউ। তবে বৃহস্পতিবারই জানা গেছে অরোদীপ আসলেই চিকিৎসক নয়। তার কোনো ডাক্তারির ডিগ্রিও নেই। আপাতত এই বিশেষজ্ঞ নামধারী চিকিৎসক শ্রীঘরে। গত বৃহস্পতিবারই  পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভেক ধরে প্রতারণা, জালিয়াতি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি, নথি জাল করে জালিয়াতি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে নকল বৈদ্যুতিক নথিকে আসল বলে চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বুধবারই মুমূর্ষু পিতাকে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন সাতক্ষীরার মাহবুব আলি। তিনি তো অরোদীপের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে অবাক হয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের বহু মানুষ অরোদীপের কাছে চিকিৎসা করাতে আসেন। আমিও বাংলাদেশে বসেই অরোদীপের কথা শুনে ক্যানসার আক্রান্ত পিতাকে নিয়ে এসেছিলাম। তিনি হতাশ গলায় বলেছেন, কত মানুষ যে প্রতারিত হয়েছেন তা কে জানে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই অরোদীপের কাছে দেখানোর জন্য বাংলাদেশের রোগীদের লাইন পড়ে যেত। তা গত ৫ বছরে হাজারের বেশি রোগী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে তারা মনে করেন। মাসখানেক আগে পশ্চিমবঙ্গে ভুযা ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে পুলিশ জানতে পারছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতিমধ্যে কলকাতার বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের তালিকায় থাকা নামি ও মোটা টাকার ফিজ নেয়া চিকিৎসকেরও খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যাদের কোনো ডাক্তারি করার ডিগ্রিও নেই। হয় জাল ডিগ্রি ও জাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট জোগাড় করে দিব্যি বছরের পর বছর নামি চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা করেছেন হাজার হাজার মানুষের। ইতিমধ্যে গোটা রাজ্য থেকে প্রায় ৫০-এরও বেশি ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবশ্য পুলিশের সিআইডির মতে, রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এমন ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যা ৫০০-রও বেশি। তবে ক্যানসার চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারী অরোদীপের আইনজীবীরা অবশ্য আদালতে জানিয়েছেন, অরোদীপ কখনোই চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে দাবি করেননি। তিনি আসলে একজন গবেষক। তাঁর বহু গবেষণাপত্র নাকি বিশ্বের বহু জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশ এ নিয়েও সন্দিহান। অরোদীপ তার প্যাডে ডিগ্রি হিসেবে লিখতো এমডি (ইন্টিগ্রেটিভ অনকোলজি)। অরোদীপের আইনজীবী বলেছেন, ওই ক্লিনিকে রোগী দেখতেন অরোদীপের বাবা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। তবে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রেসক্রিপশনে বাবার সইয়ের পাশে অরোদীপও সই করতো। এখন অবশ্য অরোদীপ গ্রেপ্তার হওয়ায় অনেক রোগী পড়েছেন বিপাকে। ভুয়া চিকিৎসক জানা সত্ত্বেও তারা ওষুধ পাবেন কোথা থেকে তা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত। যারা উপকার পেয়েছেন তারা তো অরোদীপ ভুয়া চিকিৎসক শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × three =