ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়লেও চাষ-আবাদেও ব্যাপক সফল হয়েছেন জ্যোৎস্না ডোন্ডে

0
474

শিক্ষাজীবনে অনেকের অনেক ধরণের স্বপ্ন থাকে। কেউ হতে চান ডাক্তার আবার কেউ ইঞ্জিনিয়ার। করো মনে থাকে সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন।

 

কিন্তু সবার তো আর স্বপ্ন পূরণ হয়না। আবার কারো কারো স্বপ্ন পূরণ হলেও পারিবারিক কারণে তা বিসর্জন দিতে হয়। এমনই একজন হলেন জ্যোৎস্না ডোন্ডে। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে ইঞ্জিনিয়ারিং বাদ দিয়ে এখন বাবার মতোই চাষ-আবাদ করছেন তিনি! ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়লেও চাষ-আবাদেও ব্যাপক সফল হয়েছেন তিনি। ভারতের মাহারাষ্ট্রের নাসিকের বাসিন্দা জ্যোৎস্না। ছোট থেকেই জ্যোৎস্না ভীষণ মেধাবী ছাত্রী। মেয়ে পড়াশোনা করে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবেন। বাবা-মায়েরও সেই ইচ্ছাই ছিল। কিন্তু জ্যোৎস্নার ভাগ্যে সেটা ছিল না বোধহয়। তাই চাকরি পেয়েও তাকে ছেড়ে দিতে হয়। ভারতী একটি গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, জ্যোৎস্নার বাবার ছিল আঙুরের চাষ। জ্যোৎস্নার বয়স যখন ৬ বছর তখন তার বাবার একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে। অকেজো হয়ে যায় পা। এরপর তিনি আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারতেন না। চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য মা আঙুর চাষের হাল ধরলেন। মায়ের হাত ধরে সেই প্রথম আঙুর চাষের সঙ্গে পরিচয় হন জ্যোৎস্না। মায়ের হাত ধরে প্রতিদিন দু’বেলা জমিতে যেতে শুরু করেন জ্যোৎস্না। স্কুলের বাইরে এই চাষের জমিই যেন তার আস্তানা হয়ে উঠে। স্কুলে যাওয়ার আগে, স্কুল থেকে ফিরে চাষের কাজ করার ফাঁকে জমিতে বসেই পড়াশোনা চালাতেন তিনি। ২০০৫ সালে বাবা অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। হাঁটাচলাও করতে শুরু করেন। চাষের কাজ ছেড়ে জ্যোৎস্না পড়াশোনায় মন দেন। কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লক্ষ্যে এগোতে থাকেন। চাকরিও পান। কিন্তু ভাগ্যের হাতছানিতে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। এরপর এক বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় নাসিকে। আঙুর গাছের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। গাছ বাঁচাতে আঙুরের জন্য সার কিনতে গিয়ে ফের দুর্ঘটনায় পড়েন জ্যোৎস্নার বাবা। পা পিছলে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে সারা জীবনের জন্য পা অকেজো হয়ে যায় তার। জ্যোৎস্না তখন একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। অকেজো পা নিয়ে বিছানায় শুয়েও ক্রমাগত আঙুর চাষের দুশ্চিন্তাই লেগে থাকত তার বাবার মনে। চাষ-আবাদের প্রতি তার তীব্র ভালবাসার কাছে হার মানল মেয়ের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে এলেন জ্যোৎস্না। দিন রাত এক করে মন দিয়ে চাষ-আবাদ শুরু করলেন। শয্যাশায়ী বাবার মুখে শুনে ট্রাক্টর চালানোও শিখে ফেলেন। যেখানে গাছের একটি শাখায় ১৫ থেকে ১৭টা আঙুর ফলতো। বর্তমানে সেখানে ২৫ থেকে ৩০টি আঙুর ফলেছে। ফলে আয়ও দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮ সালে ‘কৃষিথন বেস্ট ওম্যান ফার্মার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন জ্যোৎস্না। বাবার মুখে হাসি ফুটিয়ে নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্নও সয়ে ফেলেছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + 13 =