শরিয়তপুরে মোয়াজ্জেম বাহিনীর তান্ডব

1
1025

স্টাফ রিপোর্টারঃ শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর থানার ওসি মোঃ এনামুল হকের শেল্টারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ন মোল্লার ক্যাডার মোয়াজ্জেম বাহিনীর তান্ডবিয় হামলায় গুরুতর আহত হয়ে রাজধানী পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা সরদার। এঘটনায় মোস্তফার বোন হাওয়া বেগম আসামীদের বিরুদ্ধে সখীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের ৪ দিন পর ঢাকাস্থ পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার অনুরোধে মামলা রুজু করতে বাধ্য হলে ভিকটিমকে কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি ওসি মো: এনামুল হক। বরং মোয়াজ্জেম বাহিনীর পরবর্তী হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মোস্তফা সরদারের পরিবার পরিজনেরা।

মোয়াজ্জেম বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলেন, খলিল ঢালীর পুত্র মনির ঢালী (২২)ওরফে হাতুড়ি মনির (মানুষকে পেটানোর জন্য মনির সব সময় নিজের কোমরে হাতুড়ি রাখে। এজন্য এলাকাবাসীর কাছে সে হাতুড়ি মনির নামে পরিচিত), হাতুড়ি মনিরের বাবা খলিল ঢালী(৪৫), ওহাব কাজীর ছেলে ফারুক ঢালী(৩৫), আক্কাস মাঝি(৪৫), মৃত আলী হোনেসন খার ছেলে রশিদ খা(৩৫), আজাহার ঢালীর ছেলে শাহিন ঢালী(২৫) ও সাকিল ঢালী(২২), আমজাদ কাজীর ছেলে সোহেল কাজী(২০), আবুল কালাম মাঝি(৪৫), রফিজল মাঝি(৫০) ও মহিজল ঢালীর ছেলে রাসেল ঢালী(২২)। আসামীরা সবাই সখীপুর থানাধীন উত্তর চরকুমারিয়া মাঝি কান্দি গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, উত্তর চরকুমারিয়া হাওলাদার কান্দি গ্রামের কাজী মমিন আলী গং একই গ্রামের মৃত আহাম্মদ সরদারের ছেলে ঢাকাস্থ মুদিব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা সরদারের বাড়ীর উপর দিয়ে তাদের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা নির্মানের জন্য মোস্তফার ঘরদরজা ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলার হুমকি দেয়। ঘরদরজা ভেঙ্গে রাস্তা নির্মান করা হলে বসবাসের কোন কোন জায়গা থাকবে না বিধায় মোস্তফা বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলে তারা বাড়ীর উপর দিয়ে রাস্তা নির্মানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। কিন্তু মমিন আলী সহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মোস্ফার বাড়ীর উপর দিয়ে রাস্তার নির্মানের পায়তারায় আটসাট বেঁধে চেষ্টা চালাতে থাকে। তারা বিভিন্নভাবে মোস্তফাকে নাজেহাল করতে থাকে। মোস্তফার প্রতি মমিন কাজীর নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকে। উপায়ান্ত না পেয়ে মোস্তফা ৩ এপ্রিল-২০১৯ বিজ্ঞ ভেদরগঞ্জ সহকারী জজ আদালত-শরিয়তপুর এর মাধ্যমে কাজী মমিন আলী গংদের বিরুদ্ধে তার বাড়ীতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করান। এতে কাজী মমিন আলী গং মোস্তফার প্রতি আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। ফলশ্রুতিতে কাজী মমিন আলী গং মোস্তফাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। আর তাই কাজী মমিন আলী গং একাজে সফল হতে ভাড়া করে আনেন কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোয়াজ্জেম বাহিনীকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোয়াজ্জেম বাহিনীর মোয়াজ্জেম তার বিশ্বস্ত ক্যাডার হাতুড়ি মনিরকে সহ ১৫/২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপকে নিয়ে ৫ এপ্রিল বিকালে দাশেরচর গ্রামের আলী হোসেন খার বাড়ীর পাশের রাস্তার উপর ফিল্মমি স্টাইলে মোস্তফা ও তার বোন জামাই ফিরোজ কাজীর উপর আক্রমন করে এলোপাথারী পেটাতে থাকে। সন্ত্রাসীরা এসময় মোস্তফাকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে দুই হাত ও দুই পায়ের হাড়গুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলে। আঘাতের চোটে মোস্তফা ও ফিরোজ মুমূর্ষ হয়ে পড়লে মোস্তফার কাছে জমির বায়নাকৃত ৩ লাখ টাকা ও একটি দামি সামসাং মোবাইল ফোন এবং ফিরোজের সঙ্গে থাকা আরো একটি সামসাং মোবাইল ফোন মোয়াজ্জেম বাহিনী ছিনিয়ে নেয়। অত:পর সন্ত্রাসীরা মোস্তফা ও ফিরোজকে একটি ভ্যানগাড়িতে করে তাদের বাড়ীর কাছাকাছি সোহরাব ঢালীর দোকানের সামনে এনে রাখিলে এলাকার লোকজনের সোরগোলে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এসে মোস্তফা ও ফিরোজকে ভেদরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান। ভেদরগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মোস্তফার অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। মোস্তফা এখনো চার হাতপায়ের হাড় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উন্নতমানের কোন চিকিৎসা না হলে মোস্তফা কোন দিন হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারবে না।

এঘটনার বর্ণনা দিয়ে ৬ এপ্রিল মোস্তফার বোন হাওয়া বেগম সখীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু ওসি মো: এনামুল হক অভিযোগটি চারদিন পর্যন্ত তার টেবিলে নিচে ফেলে রেখে ৯ এপ্রিল রাতে ঢাকাস্থ পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুরোধে মামলাটি রুজু করে করেন। মামলা নং-০৪, ধারা-১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/১১৪ দ: বি:। অথচ এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া সাথে সাথে থানার ওসি তার এমার্জেন্সী ফোর্স পাঠিয়ে অথবা নিজে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার বিধান থাকলেও ওসি এনামুল হক কেন? কোন ব্যবস্থা নিলেন না এমন প্রশ্নের উত্তর গুলো সামনে চলে এসছে।
সুত্র জানায়, মোয়াজ্জেম বাহিনীর মোয়াজ্জেম উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ন মোল্লা ও তার ভাই চরকুমারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল মোল্লার বিশ্বস্ত ক্যাডার। প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতেই তারা এই বাহিনীকে ব্যবহার করেন। মোয়াজ্জেম বাহিনীর সকল অপকর্মকে তারাই শেল্টার দেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের হুমায়ন মোল্লার টাকার নেশায় ওসি এনামুল সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন। চেয়ারম্যানের উক্তি “ওসি সাহেব মামলা নেয়া লাগবে না আমি দেখতেছি, সুস্থ্য বিচার করে দিচ্ছি”। আর বিচারের নামে চলে অর্থ আদায়ের মহোৎসব।
এব্যাপারে সখীপুর থানার ওসি মো: এনামুল হক বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম, ঘটনা জানার পর সাথে সাথে মামলা রেকর্ড করেছি। এখন মামলাটি তদন্ত চলছে। আমার কাছ থেকে ভিকটিমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা পাবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 + fifteen =