Site icon Aparadh Bichitra

তুমি যা অপছন্দ করছো, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে

যুবতীয় প্রশংসা শুনেই বিয়েতে রাজি হয়ে যান যুবক। খুব ধুমধাম করে সম্পন্ন হয় বিয়ের উৎসবও। কিন্তু বাসরঘরে গিয়ে স্ত্রীকে দেখেই কুপোকাত বর। তিনি তার স্ত্রীকে দেখে খুবই মনোক্ষুন্ন হন। দেখেন, তার পরম কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী রূপসী নয়, কালো। তাই তিনি স্ত্রীর কক্ষ ত্যাগ করেন।

 

মনের দুঃখে স্ত্রীর কাছে আর ফিরে আসেন না। নাম তার আমের বিন আনাস। এমতাবস্থায় স্ত্রী নিজেই তার কাছে যান। প্রিয় স্বামীকে বলেন, ‘ওগো! তুমি যা অপছন্দ করছো, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে, এসো।’ অতঃপর আমের তার স্ত্রীর কাছে যান এবং বাসর রাতযাপন করেন। কিন্তু পরেরদিন সকালে স্ত্রীর অসুন্দর চেহারার দিকে তাকাতেই মন খারাপ হয়ে যায় আমের। মনের দুঃখে তিনি এবার বাড়ি ছেড়ে দেন। চলে যান বহুদূরে, অন্য শহরে। এদিকে বাসর রাতেই যে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেছেন, এ খবর তিনি রাখেন না। আমের অন্যদেশে গিয়ে দীর্ঘ বিশ বছর কাটান। বিশ বছর পর নিজ শহরে ফেরেন আমের। এসে প্রথমে নিজ বাড়ির কাছের তার প্রিয় মসজিদে ঢোকেন। ঢুকেই দেখেন এক সুদর্শন যুবক পবিত্র কোরআনের মর্মস্পর্শী দরস পেশ করছেন। আর বিশাল মসজিদ ভরা মানুষ পরম আকর্ষণে তা হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছে। তার হৃদয়গ্রাহী দরস শুনে আমেরের অন্তর বিগলিত হয়ে যায়। আমের লোকদের কাছে এই গুণী মুফাসসিরের নাম জানতে চাইলে লোকেরা বলেন, ‘ইনি ইমাম মালেক।’ আমের ওই যুবকের সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তিনি আশেপাশের লোকের কাছে জানতে চান, ‘ইনি কার ছেলে?’, লোকেরা বললো, ‘এই এলাকারই আমের বিন আনাস নামের এক ব্যক্তির ছেলে। যিনি বিশ বছর আগে বাড়ি থেকে চলে গেছেন, আর ফিরে আসেননি।’ এরপর আবেগে উত্তাল আমের ইমাম মালেকের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে চলুন। তবে আমি আপনার মায়ের অনুমতি ছাড়া আপনার ঘরে প্রবেশ করবো না। আমি আপনার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো। আপনি ভেতরে গিয়ে আপনার মাকে বলবেন, দরজায় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন। এবং তিনি বলেছেন ‘তুমি যা অপছন্দ করছো, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে’। এরপর মালেক তার মায়ের কাছে ঘিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলেন। ‘তুমি যা অপছন্দ করছো, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে’- এ কথা শুনেই ইমাম মালেকের মা বললেন, ‘হে মালেক! দৌঁড়ে যাও, সম্মানের সঙ্গে উনাকে ভেতরে নিয়ে আসো, উনিই তোমার বাবা। দীর্ঘদিন দূরদেশে থাকার পর উনি ফিরে এসেছেন।’এই হলেন সেই গুণবতী মা, যিনি ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতো সন্তান গড়ে তোলার কারিগর। রূপবতী নারী দ্বারা নয়, গুণবতী নারীদের মাধ্যমেই পৃথিবী আলোকিত হয়।