সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে সুশিল সমাজের ঘরে ঘরে কোরআনের দিক নির্দেশনা দিতে হবে

0
669

সম্প্রতি সমগ্র বাংলাদেশে ঘরে ঘরে অপরাধ হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, নির্মম নৃশংস হত্যাকান্ড, ধর্মীয় উগ্রবাদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহন, পাবলিক প্লেস, বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার, রাস্তা ঘাট কোথাও কোন স্থান এখন আর নিরাপদ নয়

এজাজ রহমান: পবিত্র মাহ রমজানে সুশিল সমাজের ঘরে ঘরে কোরআনের নির্দেশনায় আল্লাহপাকের শিক্ষা হচ্ছে আত্মীয় স্বজন, পরিচিত-অপরিচিত, প্রতিবেশি মুসলমান-অমুসলমান সবার সঙ্গেই উত্তম ব্যবহার করা। ইসলাম এমন শান্তিপ্রিয় ধর্ম, যেখানে কারো কোন ক্ষতির চিন্তা মাথায় আসতেই পারে না। অথচ আজ কতই না এমন ঘটনা অহরহ। ঘটছে, ভাই-ভাইকে হত্যা করছে, ছেলে মা-বাবাকে হত্যা করছে, নিস্পাপ শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, ধর্মীয় মতবিরোধের কারণে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে অথচ আল্লাহপাকের আদেশ হচ্ছে তোমারা সবার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করো। আমরা যদি পবিত্র কোরআনের শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচলানা করতাম, তাহলে সমাজ ও দেশে কোন ধরণের অন্যায় কাজ হতো না। যত ধরণের অন্যায় কাজ হচ্ছে এর মূল কারণ হলো আমরা পবিত্র কোরআনের শিক্ষা ভুলে বসেছি। কোরআনকে বাদ দিয়ে জাগতিকতায় মত্ত হয়েছি। যে যেভাবে পারছি বৈধ-অবৈধ কোন চিন্তা না করে সম্পদের পেছনে ছুটছি আর এ সম্পদ অর্জনে কাউকে হত্যা করতেও দ্বিধা করছি না। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম তুমি আমার সেবা-শুশ্রষা করোনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রভু, তুমি সারা বিশ্বের প্রতিপালক, আমি তোমার সেবা-শুশ্রুষা কীভাবে করতে পারি? আল্লাহতাআলা বলবেন, আমার উমুক বান্দা অসুস্থ ছিল তুমি তা জানতে পেরেও তার সেবা-শুশ্রুষা করোনি। তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তুমি আমাকে তার পাশে পেতে- এটি কি তুমি জানতে না হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি দাওনি। এটি শুনে আদম সন্তান বলবে, হে আমার প্রভু : তুমি তো হলে আলামিন, আমি কীভাবে তোমাকে খাওয়াতে পারি। আল্লাহতাআলা বলবেন, তোমার কি মনে নেই আমার অমুক । বন্দী রায় চেয়েছিল, তুমি তাকে খাবার খাওয়াউনি। তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে তাহলে তুমি আমার কাছে এর প্রতিদান পেতে, তুমি কি এটি জানতে না। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। আদম সন্তান বলবে, হে আমার প্রভু! তুমিই তো সারা বিশ্বের প্রতিপালক, তোমাকে কীভাবে আমি পানি পান করাতে পারি। এতে আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি তাকে পানি পান কালে এর প্রতিদনি তুমি আমার কাছে পেতে’ (মুসলিম কিতাবুল বিরের ওয়াস সিলা, বাব ফাজলে ইয়াদতিল মারিজ)। তাই আমাদের উচিত হবে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া। ‘ এ ছাড়া আমরা যদি সব ধরণের অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি এর ফলে আমরা নিজেরা যেমন আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করব, তেমনি এর ফলে একটি সুন্দর ইসলামি সমাজ গড়ে উঠবে। আর এমন অনুপম একটি সমাজ গঠিত হবে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর . বিবাদ-বিষাদ থাকবে না, শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়াও থাকবে না, ভাই-ভাইয়ের মধ্যে কোন দ্বন্ধ-কলহ থাকবে না, প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর কোন ঝগড়া-বিত-া থাকবে না। আমরা সবাই যদি কেবল আল্লাহতাআলার প্রীতি ও ভালোবাসা লাভের জন্য এসব কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করি তাহলে আল্লাহতাআলাও আমাদের সাহায্য করবেন। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের জাগতিক কোন অস্থিরতা ও কষ্ট বা সমস্যা দূর করছে এবং যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্তের সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে এবং তার জন্য কোন বিষয় । সহজ করে দিয়েছে আল্লাহতাআলা পরকালে তার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের গোপনীয়তা রক্ষা করে আল্লাহতাআলা পরকালে তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকে, আল্লাহতাআলা তার সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকেন। যে ব্যক্তি জ্ঞানের অন্মেষায় বের হয়; আল্লাতাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহতাআলার ঘরের মধ্যে কোন কোনায় বসে আল্লাহতাআলার কিতাব পাঠ করে এবং এর অধ্যয়ন ও চর্চায় লেগে থাকে, আল্লাহতাআলা তার ওপর সুখ ও প্রশান্তি অবর্তীণ করেন। আল্লাহতাআলার রহমত তাদের আচ্ছাদিত করে রাখে। ফেরেশতা তাদের ঘিরে রাখে। আল্লাহতাআলা তার নৈকট্যপ্রাপ্তদের কাছে তাদের উল্লেখ করতে থাকেন। যে ব্যক্তি আমলের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখায় তার পরিবার ও বংশধররা তার মধ্যে গতি সঞ্চার করতে পারে না। অর্থাৎ বংশের জোরে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে ইজতেমা আলা তেলাওয়াতিল কোরআন ওয়া আলাজ জিকরে)। আল্লাহ করুন, আমরা যেন শুধু নিজের চিন্তা না করে অন্যের দিকও লক্ষ রাখি এবং সরার খোঁজখবর নিই আর সেই সঙ্গে সব ধরণের অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 4 =