এনসিসি ব্যাংকের এমডি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের একাউন্টে ৩৫ কোটি অবৈধ টাকার সন্ধান

2
830

এজাজ রহমানঃ ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাংক হিসাবের ৫টি একাউন্টে অবৈধ আয়ের ৩৫ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঘুষের বিনিময়ে ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দিয়ে এই পরিমান টাকা কুক্ষিগত করেছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি গণমাধ্যমে চলে এসেছে। দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এর পর তথ্য যাচাই-বাছাই করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সুত্র বলছে এমডি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ তার অবৈধ আয়ের ৩৫ কোটি টাকার বিপরীতে দুদক সহ কেন্দ্রী ব্যাংকের তদন্ত ধামাচাপা দিতে উপর মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বিশেষ অনুসন্ধানে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবৈধ লেনদেনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তার অ্যাকাউন্টে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার টাকা ছাড়াও পরামর্শক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শেয়ারবাজার থেকেও টাকা জমা হয়েছে।
ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন। মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের আয়ের উৎস ও সম্পদের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে দুদক যাতে তদন্ত না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয় এজন্য মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন ভাবে উক্ত তদন্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার জন্য দেনদরবার চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে মাত্র ৩৫ কোটি টাকার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু তার কাছে এর চাইতে শতগুণ বেশী টাকা আছে। কারন এযাবৎকালে তিনি প্রতিটি ক্লাইন্টের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ কারণে এমডি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইউ’র প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে বিভিন্ন সময় তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়। আমরা প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট হিসাব জব্দ করেছি। তবে কতটি হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং হিসাবগুলোতে কি পরিমাণ অর্থ জমা ছিলো সে বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি বিএফআইইউ’র ওই কর্মকর্তা। বিএফআইইউর তদন্ত অনুযায়ী, ৫ ব্যাংক, ২ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৪টি ব্রোকারেজ হাউসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে। ৫টি ব্যাংকে থাকা মোসলেহ উদ্দিনের হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। ব্যাংকগুলো হলো এনসিসি, যমুনা, প্রাইম, সিটি ও প্রিমিয়ার ব্যাংক।
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সাল পর্যন্ত যমুনা ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর তিনি এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এনসিসি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব নেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংকের এমডিরা নিজেরাই এখন নিয়মকানুন মেনে চলেন না। পর্ষদের পরিচালকদের নির্দেশে চলেন। সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ না দেখে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত তারা। যা ব্যাংক খাতের জন্য দুঃখজনক।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen + 14 =