ঢাকার বাসচালক ও হেল্পারদের ৫০ শতাংশই দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগছেন

0
785

ঢাকার বাসচালক ও হেল্পারদের ৫০ শতাংশই দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগছেন। ৯৪ শতাংশই মনে করেন যে তাদের চোখের সমস্যা আছে। অথচ ৭২ শতাংশ জীবনে একবারও চোখের ডাক্তারের কাছে যাননি। বাসচালক ও হেল্পারদের ২১ শতাংশই দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন।

 

১২ শতাংশের চোখের ছানির কারণে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এই অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের চিন্তা করাটাই অবাস্তব। রোববার বনানীর বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে এক প্রেজেন্টেশন এবং আলোচনাসভায় এই চিত্র উঠে আসে। ৫ম বিশ্ব নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ উদযাপনের অংশ হিসেবে এই প্রেজেন্টেশন এবং আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) ঢাকা ওয়েস্ট-এর যৌথ আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ-র পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী, বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. তারা কেশরাম, জেসিআই-এর প্রেসিডেন্ট ইরফান ইসলাম, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি রুস্তম আলী খান, ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হোসাইন আহমেদ মজুমদার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) ড. সৈয়দা তাসমিয়া আহমেদ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফেরদৌসী প্রমুখ। এর আগে, গত ২৩-২৪ এপ্রিল ব্র্যাক ও জেসিআই-এর উদ্যোগে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এক চক্ষুশিবির পরিচালিত হয়। এই শিবিরে ১২ শতাধিক ড্রাইভার ও হেল্পারের চক্ষুপরীক্ষা, ডাক্তারের পরামর্শ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ৩০ জন ডাক্তার ও মেডিকেল আ্যসিসটেন্ট এই সেবা দেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চোখে অস্ত্রোপচারেও সহযোগিতা করে জেসিআই। এই চক্ষুশিবিরে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত প্রকাশ করতেই আজকের এই প্রেজেন্টেশন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আগের চক্ষুশিবিরে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান কামরান উল বাসেত। এতে উল্লেখ করা হয়- চক্ষুশিবিরে সেবা দেয়া হয়েছে ১২ শতাধিক ব্যক্তিকে। দুইদিনের চক্ষুশিবিরে ৭৬ শতাংশকে চশমা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। ১২ দশমিক ৬ শতাংশের চোখে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর শুধু ওষুধ দেয়া হয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশকে। বিআরটিএ-র পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘ড্রাইভারদের চোখের চিকিৎসায় আরও উদ্যোগ নেয়া জরুরি।’ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফেরদৌসী তার আলোচনায় ড্রাইভারদের চোখের স্ক্রিনিং করার উপর জোর দেন। একই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, ড্রাইভারদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি গাইডলাইন তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং এ কাজে তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরিবহন মালিক সমিতির দুই নেতা রুস্তম আলী খান ও হোসাইন আহমেদ মজুমদার ড্রাইভারদের চক্ষুপরীক্ষা ও চিকিৎসার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে এই কর্মকান্ডে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাসে দেন। জেসিআই-এর প্রেসিডেন্ট ইরফান ইসলাম বলেন, ‘আমরা বছরজুড়েই সমন্বিতভাবে এ ধরনের কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করব।’ সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরেন। এতে ব লা হয়, পরিবহনমালিকরা নিয়মিত তাদের শ্রমিকদের চক্ষু পরীক্ষা ও চিকিৎসার উদ্যোগ নেবেন, গাড়িচালকদের চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদানে ব্র্যাক, বিআরটিএ এবং জেসিআই নিয়মিত এ ধরনের উদ্যোগ নেবে, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট গাড়িচালকদের চক্ষুসেবায় একটি জাতীয় গাইডলাইন প্রণয়ন করবে এবং বিআরটিএ এই গাইডলাইনটির বিষয়ে তাদের সকল কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 − 1 =