ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাতে ব্যস্ত ফল ব্যবসায়ীরা

0
1367

অস্থিরতা বিরাজ করছে ফলের বাজারে। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাতে ব্যস্ত ফল ব্যবসায়ীরা। কোথাও কোনো শৃঙ্খলা নেই। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা চড়ামূল্যে ফল বিক্রি করে অতি মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। ফলে ক্রেতারা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

 

গত কয়েক দিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে যেসব ফল বেশি বিক্রি হয় মূলত সেসব ফলের দামই চড়া। এর মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙুর, খেজুর, পেয়ার বা নাক ফল, মাল্টা, পেয়ারা, আনারসসহ বেশ কয়েকটি ফল অতি উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। রমজানের আগে আঙুরের দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। এখন বিক্রি করা হচ্ছে তিন শ’ টাকা থেকে তিন শ’ ৬০ টাকা পর্যন্ত। আপেল ছিল কেজিপ্রতি ১২০ টাকা থেকে প্রকারভেদে ১৪০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকায়। রমজানের আগে খুচরা বাজারে মাল্টা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। একলাফে সেটা এখন ১৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পেয়ার বা নাক ফল রমজানের আগের দিনও বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। ওই ফল বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। পেয়ারার দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। লিচু সম্প্রতি বাজারে এসেছে। এখন একটু ভালোমানের ১০০ লিচু বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। প্রতিটি লিচুর মূল্য পড়ছে ৬ টাকা ৫০ পয়সা। এর থেকে একটু নি¤œমানের লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। খেজুরের হরেক রকম দাম লক্ষ করা গেছে। ১২০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। খেজুরের বাজারেও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এলাকাভেদে একই খেজুর একেক দামে বিক্রি করা হচ্ছে। গতকাল হাইকোর্ট মোড়ে ফুটপাথে এক ব্যবসায়ী আম্মার খেজুর বিক্রি করেন ৮০০ টাকা কেজি দরে। ওই একই খেজুর পল্টন ওভারব্রিজের নিচে বিক্রি করা হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে নি¤œমানের খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকায়। প্রকারভেদে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে হরেক রকম দামের খেজুরে বাজার সয়লাব। গতকাল রাজধানীর বিএমএ ভবনের সামনের ফুটপাথে ফল ব্যবসায়ী হৃদয় জানান, মাল্টার দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা, আপেলের কেজি ২০০ টাকা। পেয়ার বা নাক ফল ৩০০ টাকা। পাশের দোকানদার ওই সব ফল একই দামে বিক্রি করলেও মাল্টার ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন। তিনি ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। সামান্য একটু দূরে গিয়ে ফুটপাথে ফল নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ী সিরাজ। আপেল, নাকফল, খেজুরসহ অন্যান্য ফলের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও মাল্টার দাম জানান কেজি প্রতি ১৮০ টাকা। দামের পার্থক্য কেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, হয়তো তারা বেশি দামে কিনছে, তাই সে বেশি টাকায় বিক্রি করছে। কোথা থেকে ফল নিয়ে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে সিরাজ জানান, বাদামতলী থেকে রাজধানীর সব ফল কিনে এনে আমরা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। দৈনিক বাংলা মোড়ের ফল ব্যবসায়ী শফিক জানান, বাজারে ফলের দাম চড়া। তাই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গুলিস্তান, মতিঝিল, হাইকোর্ট মোড়, তোপখানা রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের তুলনায় পল্টন ওভারব্রিজের নিচে ফলের দাম খুবই চড়া। সেখানে আঙুর (সাদা) ৩৬০ টাকা, আঙুর (কালো) ৫৫০ টাকা, নাকফল ৩৫০ টাকা, আপেল ২০০ টাকা ও মাল্টা কেজি প্রতি ২৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। পল্টনের ওভার ব্রিজের উত্তর-দক্ষিণ পাশ মিলে বেশ কয়েকটি ফলের দোকান রয়েছে। বিশেষ করে খেজুরের দাম একেক দোকানে একেক রকম। এক দোকানের সাথে পাশের দোকানের দামের তেমন কোনো মিল নেই। ক্রেতারাও বুঝে উঠতে পারেন না, কোন খেজুরের দাম কত, কোন খেজুর কোথা থেকে আমদানি করা হয়। হরেক রকম খেজুর থাকায় খেজুরের মানও নির্ণয় করা খুবই কঠিন। এই সুযোগে বেশি দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। মতিঝিলের পাম্পের বিপরীতের গলি থেকে ইফতারের জন্য ফল ক্রয় করেন মকবুল হোসেন। তিনি নিয়মিত ফল ক্রয় করেন শাপলা চত্বরের আশপাশ থেকে। দাম বেশি হওয়ায় ওই গলিতে এসেছেন ফল কিনতে। তিনি জানান, রমজান মাসে ফলের দাম চড়া। যে যার মতো করে দাম হাঁকাচ্ছে। একেক জায়গায় একেক রকম দাম। রমজানের আগে আঙুর কিনেছি ১৮০ টাকায়। এখন তা ৩৫০ টাকা নিচ্ছে। এখানে একটু কম বলে এসেছি। বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ছোট ছোট ঝাঁকা নিয়েও যেখানে সেখানে অলিতে গলিতে ফল নিয়ে বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ফলে দামের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্থিতিশীলতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − 4 =