মাদকের মতো ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

0
1302

মাদকের মতো ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, নির্বাহী বিভাগের কাজের অগ্রাধিকার কি হবে সেটা আমরা নির্ধারণ করে দিতে পারি না।

 

তবে খাদ্যে ভেজাল রোধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যেমনটি করা হয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তেমনিভাবে সরকার ও সরকার প্রধানের প্রতি আহবান জানাচ্ছি যাতে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রয়োজনে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। নামি-দামি ব্র্যান্ডের নিম্নমানের ৫২ পণ্যের উত্পাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপণন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে মান উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিম্নমানের ওইসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দশ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছে, খাদ্যপণ্যের পরীক্ষা শুধু রোজার মাসেই হওয়া উচিত নয়, এটা সারা বছরই চলা দরকার। কারণ, ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের কারণে এদেশে বাস করাটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। আমাদের তো দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই, এদেশ ছেড়ে তো কোথাও যেতে পারব না, ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে দেশেই থাকতে হবে। এ কারণে খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তার ব্যাপারে আপসের কোনো সুযোগ নেই। এই সমস্যা থেকে উত্তোরণে সরকারি প্রতিটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অংশগ্রহণ করা দরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তা হিসেবে নয়, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে যেন তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। বিএসটিআই কর্তৃক প্রমাণিত নিম্নমানের ৫২ পণ্যের উত্পাদন ও বিক্রি বন্ধের নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটির পক্ষে আইনজীবী শিহাবউদ্দিন খান। ওই রিটের তলব আদেশে গতকাল হাইকোর্টে হাজির হয় বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। পরে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

‘আইনে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, প্রয়োগ নেই’

শুনানিতে হাইকোর্ট বলে, জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনের যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মহাপরিচালকের তদন্তের ক্ষমতা আছে। আইনের ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধ তদন্তের বিষয়ে মহাপরিচালকের (ডিজি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুরূপ ক্ষমতা থাকবে। এত ক্ষমতা দেওয়ার পরেও তার প্রয়োগ নেই। হয়ত প্রয়োগের ইচ্ছা নাই অথবা প্রয়োগ না করতে চাপ আছে। এখন মামলা নিষ্পত্তি রেখে যদি ওদের কাজও দেখতে হয় তাহলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে অধিদপ্তরের ডিজি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ফাইল দেখে সময় কাটানোর কি দরকার? তাহলে ওরা এসে আমাদের কাজ করুক, আমরা ওদের কাজ দেখি!

‘মিনিমাম মান নিশ্চিত করতে হবে’

আদালত বলে, উন্নত দেশের আইন পর্যালোচনা করে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন করেছে। এর চেয়ে ভালো আইন আর হতে পারে না। এতে প্রতিটি বিষয়কে স্পর্শ করা হয়েছে। হয়ত আমরা তাদের পর্যায়ে যেতে পারব না, সে ধরনের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও নেই। কিন্তু আইনে যা আছে তার মধ্যে মিনিমাম একটা মান তো নিশ্চিত করতে হবে। আইনজীবী শিহাবউদ্দিন বলেন, ক্ষমতা থাকার পরেও ৫২ পণ্য বাজারে আছে। কোনো সংস্থাই ব্যবস্থা নেয়নি। আদালত বলে, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোম্পানিগুলো দাবি করে তাদের পণ্য সেরা। কিন্তু রিপোর্টে কি বেরিয়ে আসল। আর ভেজাল খাদ্যের কারণে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

‘ফাজলামো করলে অপমান করবে না’

তলব আদেশে হাইকোর্টে হাজির হন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা। তার আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিএসটিআইয়ের ল্যাব রিপোর্ট না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। আদালত বলে, এটা কোন ধরনের অজুহাত। শিল্প মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে পণ্যগুলোর নাম প্রকাশ করেছে। রিপোর্টের কি দরকার। কাউকে হত্যা করা হলে পুলিশ কি আসামি গ্রেফতার করতে ময়না তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করে, নিশ্চয়ই তা নয়। আইনজীবী বলেন, যে কর্মকর্তা এসেছেন তিনি এক সপ্তাহ আগে যোগদান করেছে। আদালত বলে, উনি নতুন, কিছুই তো জানে না। আমরা তাহলে ডিজিকে তলব করি। ডাকলে তো বলবে ডেকে নিয়ে অপমান করা হয়। এসব ফাজলামোর কারণে অপমান করবে না? এগুলো কোর্টের সঙ্গে ফাজলামো। ১/২ মাস কাজ করেছে এরকম লোক কি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিসে নেই। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান বলেন, বিএসটিআইয়ের ক্ষমতা রয়েছে লাইসেন্স বাতিল ও কারাখানা বন্ধ করে দেওয়ার। বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, ৫২ পণ্যের উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা নেই। তবে সার্ভিল্যান্স টিমের বাজার থেকে পণ্য প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − one =