বালিশ ছাড়া ঘুম যেন লবণ ছাড়া তরকারী

1
1198

বালিশ ছাড়া ঘুম যেন লবণ ছাড়া তরকারী। বালিশে বা কুশনে হেলান না দিলে তো আর আরাম হয় না। কোলবালিশকে তো সভ্যতার সেরা উদ্ভাবন বলে আমার মনে হয়। বালিশ নিশ্চয়ই সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন।

 

আজকের দিনে যে বিভিন্ন আকারের বালিশ আমরা দেখি বা ব্যবহার করি, তা নিশ্চয়ই এ রকম ছিল না। বালিশের সার্বজনীনতা হলো এটা সব দেশে সব মানুষের জন্য ঘুমের এক অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে। কিন্তু বালিশের ইতিহাস কি? আমরা কয়জনই বা তা জানি? আমি অন্তত জানতাম না। তাই বাধ্য হয়ে মহাজ্ঞানী গুগলের শরণাপন্ন হলাম আর পেলাম বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। তাই আর শেয়ার না করে পারলাম না। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় ৭০০০ অব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় বসবাসকারী লোকেরা প্রথম বালিশ ব্যবহারের প্রচলন করেন। তবে সে সময় বালিশ বলতে বোঝাতো কাঠের বা পাথরের তৈরি মাথা রাখার এক বিশেষ স্থান। সে সময় বালিশ ছিলো আভিজাত্য আর মর্যাদার প্রতীক। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিলো বিলাসী দ্রব্য বালিশ। যার যত বালিশ সে তত ধনী। যেহেতু আজকের দিনের মতো নিরাপদ বাসস্থান ছিলো না তাই প্রাচীন ইরাকে বালিশ ব্যবহৃত হতো এক ধরনের বিশেষ প্রতিরোধক হিসেবে- যাতে পোকামাকড় মুখে কামড়াতে না পারে আর নাক বা কান দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে। এমনকি কেউ মারা গেলে কবরে বালিশ দেওয়া হতো, মমিতেও বালিশের ব্যবহারের ইতিহাস পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরে। চৈনিক সভ্যতাতেও শক্ত কাঠের বা পাথরের বালিশ ব্যবহারের ইতিহাস পাওয়া যায়। এমনকি সিরামিকের বালিশের ইতিহাসও পাওয়া যায়। তাদের বালিশের একটা বৈশিষ্ট্য হলো বালিশের উপর জীবজন্তু, মানুষ ও গাছ আঁকা হতো। কালের বিবর্তনে নরম বালিশের কৌশলের প্রচলন করেন রোমান ও গ্রীকরা। তারাই সর্বপ্রথম পাখির পালক, পশুর লোম, বিভিন্ন শুকনো লতাপাতা দিয়ে নরম বালিশ তৈরি করেন। যদিও শুরুতে বালিশের ব্যবহার ছিলো ঘুমানোর জন্য কিন্তু প্রাচীন ইউরোপের মানুষেরা গির্জায় গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে প্রার্থনার জন্য ও পবিত্র বই রাখার জন্য বালিশ ব্যবহার করতেন। বালিশ ব্যবহারের বড় পরিবর্তন আসে শিল্প বিপ্লবের পরে। বস্ত্রশিল্পের বিকাশের সাথে সাথে বালিশ সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহার্য ও অপরিহার্য জিনিস হয়ে উঠতে শুরু করে। ভালো শিকারিরা তাদের বালিশে হাঁসের বা মুরগীর পালক ব্যবহার করতেন। ১৯৬০ সালে পলিস্টার আবিষ্কারের ফলে বালিশের আজকের রূপের প্রকাশ পায়। বালিশের ব্যবহার শুধু ঘুমানোর কাজেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ চালু আছে “পিলু টক”। পিলু টক বলতে বোঝায় সুখী সম্পর্ক, প্রিয়জনের সাথে বিছানায় পাশাপাশি শোয়া, তার মানে এই নয় যে শারীরিক সম্পর্ক থাকতে হবে। এটাই পিলু টক এর বৈশিষ্ট্য। বহু চলচ্চিত্র পরিচালক তাদের চলচ্চিত্রে পিলু টককে মেটাফোর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে পিলু টককে গোয়েন্দারা ব্যবহার করেন সবচেয়ে সফল অস্ত্র হিসেবে। কারণ পিলু টকের সময় মানুষের অনুভূতি গুলোর কার্যক্ষমতা অনেকটা ঘোরের মধ্য থাকে। তাই গোপন কথা বের করতে পিলু টক এক অব্যর্থ কৌশল। পিলু টক নামের একটা চলচ্চিত্র ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় এবং তা রীতিমত সাড়া ফেলে দেয় চলচ্চিত্র জগতে। এই সেদিন পিলুটক শিরোনামের একটি গান ২০১৬ সালে রিলিজ হয় যা ছিল হটকেক। শিল্পী জাইন মালিকের অভিষেক ঘটে পিলুটক শিরোনামের রেকর্ড দিয়ে তারপর বাকিটা ইতিহাস। শুধু সিনেমা বা গানেই নয়। বালিশ স্থান করে নিয়েছে আমাদের সাহিত্যেও। পিলো বুক নামে মধ্যযুগের এক ক্লাসিক জাপানী বই আছে যা সেসময়ের প্রাসাদ রাজনীতির এক প্রামাণ্য দলিল। পরবর্তীকালে পিলু বুক নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে। আমরা তো শুধু খুঁজি শিমুল তুলার বালিশ। মনে করি খুব আরামদায়ক। কিন্তু নেট ঘেঁটে যা পেলাম তাতে তো চক্ষু ছানাবড়া। ডাচ কোম্পানি ফন ডার হিলষ্ট (van der Hilst’s) এর বালিশের দাম প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

বুঝতে হবে বালিশের গুরুত্ব ও মাহাত্ম, নইলে বিপদ।

‘নালিশ করে কী পেয়েছে? বালিশ পেয়েছে’- বাস্তবে নালিশ করে বালিশ পাওয়া যায় কী-না, নিশ্চিত নই। তবে প্রবাদটি রসিকতার ছলে আমাদের রাজনৈতিক ভাষায় বহুল ব্যবহৃত। ফলে বালিশ নিয়ে রসিকতাটা সম্ভবত আমাদের চিরন্তন। তারই ধারাবাহিকতা হয়ত বজায় থাকলো বালিশ ‘কেনা-ওঠানো’ এবং তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রসিকতায়!

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × three =