পিআইসি প্রকল্প: জনগণের আগে প্রকৌশল অফিস ও উপজেলা পরিষদের নামে বিল পাশ!

0
707

কর্ণফুলী প্রতিনিধি:বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে উপজেলায় টেন্ডারবিহীন ছোট ছোট অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয় যা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা প্রজেক্ট ইম্পিøমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম জেলার নতুন ও ছোট উপজেলা কর্ণফুলীতে সম্প্রতি ৮১টি(পিআইসি) প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে। জানা যায়, ৮১টি প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার টাকার (পিআইসি) তৈরী করা হয়। ধারাবাহিকতায় প্রতিটি ইউনিয়ন হতে বিভিন্ন নামে ৮১ টি প্রকল্প তালিকা প্রস্তুত করেন উপজেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্ণফুলী উপজেলা অফিসে তা জমা দেয়া হয় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। কিন্তু ৮১টি প্রকল্পের মধ্যে ৭৮টির কোন খবর না থাকলেও ৩টি প্রকল্পের কার্য সম্পাদন দেখিয়ে ৫ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫শত টাকার বিল পাশ করিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।


তালিকায় দেখা যায়, ক্রমিক নং ৭৫, ৮০ ও ৮১ নং প্রকল্পের নাম নির্ধারণ করা হয় স্বয়ং উপজেলা প্রকৌশল অফিসের জন্য আসবাবপত্র সরবরাহ বাবদ প্রাক্কালিন মূল্য ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, একই অফিসের জন্য আরেকটি প্রকল্পে কম্পিউটার সেট, প্রিন্টার ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সরবরাহে ১লাখ ৯৯ হাজার ও উপজেলা অফিসের জন্য একটি ফটোকপি মেশিন ও যন্ত্রপাতি সরবরাহে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাঁচশ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কর্ণফুলী উপজেলার অন্য এক জনপ্রতিনিধি বলেন, দুই লক্ষ টাকার নিচে পিআইসি প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন করার কথা ছিল এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের। কিন্তু ওসব পিআইসি নাকি উপজেলা নেতারা করাবেন। তাহলে ছোট মাছের খাবার ও বড় মাছের পেটে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।’


উল্লেখিত যে ৩ প্রকল্প উপজেলা প্রকৌশল অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে বড়উঠান শাহমীরপুর ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দীনকে । গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে প্রকল্পের সেক্রেটারী পদে মো. আমজাদ হোসেন, শিক্ষক/ ইমাম ক্যাটাগরিতে মো. আবু তাহের, আনচার ভিডিপি সদস্য ক্যাটাগরিতে মো. আইয়ুব, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে মো. জামাল উদ্দীন ও মো. ছৈয়দ আহমদ ও মহিলা সদস্য ক্যাটাগরিতে মোছা. তসলিমা আক্তার কে নিয়ে সাজায় বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটির সকলের বাড়ি শাহমীরপুর বলে জানা যায়। প্রকৌশল অফিস ও উপজেলা পরিষদের দেওয়া তিন প্রকল্পে (পিআইসি)তে উপজেলা পরিষদের কেউ সভাপতি না হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের এক মেম্বারকে ৩ প্রকল্পেই সভাপতি করায় সৃষ্টি হয়েছে ধু¤্রজাল।


এদিকে ৩ প্রকল্পের জন্য কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সহ আসবাবপত্র কেনার যে সব দোকানের কোটেশন রশিদ ও ভাউচার দেখানো হয়েছে সেসব দোকানগুলোর ঠিকানা হল চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে ঢাকা নিউ এ্যালিপ্যান্ট রোডের। যথাক্রমে-অ্যালজিই কম্পিউটার, একে কম্পিউটার সিস্টেম, আইটি সার্ভিস, মিলিনিয়াম সিস্টেম সলিউশন। যা ঢাকার আলপানা প্লাজার ২য় তলায়।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব দোকানের আবার বেশির ভাগ মালিক কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী নিজেই। প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো প্রতিষ্ঠান থেকে সামগ্রী কেনায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
এ প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বিভাগের কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে বলেন, আসলে আমার অফিসটি নতুন, বসারও কোন চেয়ার টেবিল ছিলনা, তাই জরুরী ভিত্তিতে এ পকল্পটি সম্পাদন করতে হয়েছে।
নিজের অফিসের প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনকে কেন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সভাপতি কে ছিল আমার জানা নাই, আমাকে অফিসে গিয়ে দেখে বলতে হবে।


এ ব্যপারে প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে দেখানো ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং কোন প্রকল্পে তিনি স্বাক্ষরও করেননি।’ তিন প্রকল্পে একই ব্যক্তি সভাপতি হতে পারে কিনা জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, কিছু করণিক ও প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে ফাইলটি পুনরায় সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।’ কিন্তু এক্ষেত্রে পত্রিকা অফিস যতটুকু জেনেছে ফাইলটি আপনার টেবিলে এসে স্থগিত হয়েছে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আগেই ফাইলে স্বাক্ষর করেছিলেন এবং প্রকল্পের বিপরীতে যে জিনিসপত্রগুলো কেনা হয়েছে তা উপজেলার চেয়ারম্যানের নিজস্ব মালিকাধীন দোকান হতে কিনেছেন কিনা জানতে চাইলে কর্ণফুলী ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের নিজস্ব কোন কম্পিউটার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে কিনা কিংবা থাকলেও সেই প্রতিষ্ঠানের কি নাম এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নাই।’
পিআইসি ৩ প্রকল্পে একজন সভাপতি, সভাপতির না জানা, নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য সামগ্রী কেনাসহ উত্থাপিত নানা অনিয়ম সম্পর্কে জানার জন্য কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার কল ও ম্যাসেজ দেয়ার পরও ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − 9 =