যশোরে স্বামীর পরকীয়া প্রেম ও যৌতুকের বলি গৃহবধূ তুলি

0
932

মাধবী ইয়াসমিন রুমা: স্বামীর পরকীয়া প্রেম ও যৌতুকের বলি হলো ২ সন্তানের জননী গৃহবধু জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি (২৬)। পহেলা বৈশাখের উৎসব পালনে যখন সবাই ব্যস্ত তখন ২৪ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে গৃহবধু তুলি। ঘটনাটি ঘটেছে, যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার পান্তাপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় তুলির স্বামী বিমানকর্মী জুলফিকার আলীকে আড়াল করতে একটি প্রভাবশালী মহল তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গুঞ্জণ চলছে। এ ব্যাপারে তুলির পিতা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১৪ এপ্রিল বাঘারপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৩, ধারা-৩০২/৩৪ ধঃ বিঃ। মামলার আসামীরা হলো, নিহত তুলির দেবর শাহাবুদ্দিন (২৪) ও শ্বাশুড়ী ফরিদা বেগম (৪৫)। অজ্ঞাত কারণে তুলির স্বামীকে মামলার আসামী করা হয়নি। তবে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরনীতে উল্লেখ রয়েছে যে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার অপরাধ। এ ব্যাপারে তদন্তকারী আইও এস.আই রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলার প্রধান আসামী শাহাবুদ্দিন আটক হয়েছে এবং ১৬৪ ধারায় শিকারোক্তি দিয়েছে। শিকারোক্তিতে হত্যার কারণ উল্লেখ রয়েছে, পারিবারিক বিরোধের কারণে সহ্য করতে না পেরে রাগের মাথায় ভাবি তুলিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।


নিহতের স্বামী জুলফিকার আলীকে আসামী না করার কারণ জানতে চাইলে তদন্তকারী আইও এস.আই রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলফিকার ঘটনাস্থলে ছিল না, আর সে একটা সরকারি চাকুরী করেন। ঘটনার সময় ঢাকাতে অবস্থান করছিলো। তবে আমরা তাকে একেবারে ছেড়ে দিয়েছি তা নয়। এজাহার গর্ভে স্বামীর নাম নিয়ে এসেছি যতটুকু সম্ভব। সে যেহেতু সরকারি চাকুরী করে, চার্জশীটে তার নাম দিলে তার উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তুলি হত্যা ঘটনার সাথে স্বামী জুলফিকারের সম্পৃক্ততা থাকলে আইনগতভাবে যতটুক পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। তদন্তে তুলির স্বামী জুলফিকার অভিযুক্ত হলে কেউ তার পক্ষ নিলেও কোনো লাভ হবে না। মামলা চলমান রয়েছে ও অগ্রগতি হচ্ছে। মামলার এজাহারভূক্ত ২ নং আসামী তুলির শ্বাশুড়ীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তদন্তকারী অফিসার এস.আই রফিকুল ইসলাম আরো জানান।


প্রকাশ, গত ৮/৭/২০১১ইং তারিখে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক পারিবারিকভাবে যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার পান্তাপাড়া গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের পুত্র জুলফিকার আলীর সাথে একই জেলার ঝিকরগাছা থানার মোবারকপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের একমাত্র কন্যা জিনিয়া ইয়সিমিন তুলির বিয়ে হয়। বিয়ের পর তুলির খালু রবিউল ইসলাম (যশোর বিমানবন্দরে কর্মরত) তুলির স্বামী জুলফিকার আলী ও দেবর শাহাবুদ্দিনকে বিমান বাহিনীতে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমানে তুলির স্বামী কপল জুলফিকার, ইঞ্জিন ফিটার, বাংলাদেশ বিমান বঁিিহনী ঘাঁটি, বঙ্গবন্ধু, কুর্মিটোলা, ঢাকায় কর্মরত আছেন (যার বিডি/৪৭০০৩১)। আর দেবর শাহাবুদ্দিনও কপল পদে যশোর বিমানবন্দরে চাকুরী করেন। চাকুরী পাওয়ার পর তাদের লোভ আরো বৃদ্ধি পায় বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। বিভিন্ন অযুহাতে তুলির অসহায় দরিদ্র বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রায় ৪ লক্ষ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে স্বামী জুলফিকার ও তার পরিবার। সূত্রে জানা গেছে, জুলফিকার ও শাহাবুদ্দিনের চাকুরীর পূর্বে তার বাবা মাটি কেটে সংসার চালাতো। তুলিকে বিয়ে করে জুলফিকারের পরিবারের ভাগ্য খুলে যায়।

জুলফিকারের লোভ এখানে থেমে থাকেনি, অজ্ঞাতনামা পূর্ব প্রেমিকার স্বামী বিদেশ থাকায় পূণরায় তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সূত্রে জানা গেছে, জুলফিকার স্ত্রী তুলি ও ২ সন্তান আলিফ (২) ও হামজা (১) কে নিয়ে রাজধানীর বালুঘাট এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। প্রথম স্ত্রী তুলিকে না জানিয়ে অজ্ঞাতনামা পূর্ব প্রেমিকাকে বিয়ে করে এবং বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তুলিকে গ্রামের বাড়ী বাঘারপাড়াতে পাঠাইয়ে দেয়। জুলফিকারের কথামত তার মা ফরিদা বেগম, ছোট ভাই শাহাবুদ্দিন ও বোন সুরাইয়া যৌতুকের জন্য তুলিকে প্রায়ই মারধর করতো। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে অসহায় বাবা প্রায় ৪ লাখ টাকা যৌতুক দেয়। যৌতুক দেয়ার পরও থেমে থাকেনি তারা। এরই ধারাবাহিকতায় জুলফিকারের মা ফরিদা বেগম, ভাই শাহাবুদ্দিন ও বোন সুরাইয়া পূণরায় মারধর করলে তুলির পিতা শহিদুল ছোট নাতি হামজাসহ তুলিকে গত ১২ এপ্রিল তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। পরেরদিন ১৩ এপ্রিল বিকালে শ্বাশুড়ী ফরিদা বেগম ফোন করে জানায়, তুলির বড়পুত্র আলিফ (২) অসুস্থ্য। এ কথা জানার পর তুলির বাবা শহিদুল তুলিকে নিয়ে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় বাঘারপাড়ার পান্তাপাড়া গ্রামে পৌঁছায়। তখন ওই এলাকায় কোনো বিদ্যুৎ ছিলো না। তুলির পিতা শহিদুল পাশের ঘরে এশার নামাজ পড়ছিল। হঠাৎ তুলির আত্মচিৎকার শুনতে পায়। নামাজ পড়া বাদ দিয়ে ঘর হতে বের হতে যেয়ে দেখে বাইরে থেকে দরজা আটকানো।

কোনো উপায় না পেয়ে শহিদুল পাশের ঘর টপকে তুলির ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দেখতে পায়, শাহাবুদ্দিন তুলিকে এলাপাতাড়ীভাবে ছুরি দিয়ে আঘাত করে চলেছে। আর তার মা ও বোন শাহাবুদ্দিনকে সহযোগিতা করছে তুলিকে মারতে। ধারালো ছুরি দিয়ে তুলির পিঠে, পেটে, বাম হাতের কব্জির উপরে ও পায়ে মোট ১২টি মারাত্বকভাবে আঘাত করে। তখন শহিদুল রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের কবল থেকে তুলিকে উদ্ধার করে। ওই সুযোগে ঘরের দরজা খুলে ঘাতক শাহাবুদ্দিন ও তার মা এবং বোন পালিয়ে যায়। পরে ওই এলাকার এক ব্যক্তির সহযোগিতায় মাইক্রোবাসযোগে তুলিকে প্রথমে যশোর সদরহাসপাতালে ভর্তি করে। তুলির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে যশোর সিএমএইচ হাসপাতালে স্থান্তরিত করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরের দিন ১৪ এপ্রিল সকালে তুলিকে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত ডাক্তাররা। সকল প্রস্তুতি শেষ করে যশোর বিমানবন্দরের নেওয়ার সময় তুলি মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। স্বামী জুলফিকার ও ঘাতক দেবর শাহাবুদ্দিনের ফোন ট্যাকিং করলে এ হত্যার সাথে উভয়ের সংশ্লিষ্টতা জানা যাবে বলে এলাকাবাসী ও অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × five =