গজারিয়ার মেঘনা ঘাট এলাকায় চোরাচালান বানিজ্য-১

0
1028

মুন্সিগঞ্জ ও নারায়নগঞ্জ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মেঘনার তেল চোরাকারবারী হকার্স মিলনের কোটি কোটি টাকার তেল, ক্লিলিংকার, মাদক ও কয়লার চোরাকারবার

নিজামুল হাসান সফিক, গজারিয়া থেকে ফিরে:
মুন্সিগঞ্জ ও নারায়নগঞ্জ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও এর মেঘনায় দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে মাছ বিক্রেতা হকার্স মিলনের তেল, (ডিজেল, কেরোসিন) ক্লিংকার, সোয়াবিন, পামওয়েল, মাদক ইয়াবা ও কয়লার জমজমাট চোরাচালানীর ব্যবসা। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, অসাধু কিছু আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্র ছায়ায় কোটি কোটি টাকার অবৈধ চোরাই তেল, মাদক ও বিভিন্ন পন্যের ব্যবসা করছে মাছ বিক্রেতা হকার্স মিলন, শাহ্ আলী গং একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আইন প্রয়োগকারী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় মেঘনা এলাকার তেল চোরাকারবারী হিসাবে মাছ বিক্রেতা হর্কাস মিলনের নাম থাকার পরও চোরাকারবারী মিলন এখনও রয়ে গেছে ধরা ছোয়াঁর বাহিরে। এ দিকে বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা গেছে চোরাই তেলসহ বিভিন্ন পন্যের চোরাচালানী করে মিলন সহ মেঘনার চোরাকারবারী ঔ চক্রটি আজ কোটি কোটি টাকা, গাড়ী-বাড়ী ও বিপুল পরিমান ধন-সম্পদের মালিক। অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে বর্তমানে মেঘনার চোরাই তেল বানিজ্যের মূল হোতা মো: মিলন পিতা-রাজা মিয়া, সাং-তেতৈতলা (দড়িগাঁও) গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ

। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া মেসার্স নোমান ট্রেডার্স নামক লাইসেন্সে নিয়ে মাত্র ব্যবসার অন্তরালে হকার্স মিলন বছরের পর বছর যাবৎ করছে তেল চোরাকারবারী বানিজ্য। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা জানাগেছে, পূর্বে তেল চোরাচালানী ব্যবসাটি গজারিয়া, হোসিন্দী, গজারিয়া মেঘনা ঘাট, সোনার গাঁও এর মেঘনা এলাকা এবং চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় তৎকালীন বিএনপির একটি সিন্ডিকেট চোরাই তেল, ক্লিলিংকার, কয়লা ও অবৈধ পন্যের ব্যবসা পরিচালনা করত। ঐসময় “জি” অক্ষর ও (এইচ) অক্ষর নামক বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা এই ব্যবসাটি তাদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালনা করত। চোরাই পন্যের অবৈধ ব্যবসা করে দুই নেতা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ঐ সময় বিএনপির ঔ নেতাদের অবৈধ ব্যবসা করার পিছনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতি পরায়ন কিছু লোকের হাত ছিল বলে সূত্রে প্রকাশ। ওয়ান এলেভেনের সময় মেঘনার চোরাই তেল ও অবৈধ ব্যবসার ঐ হোতারা নিজেদের বাঁচতে তখন গা ডাকা দেয়। এরপর ক্ষমতার পালাবদলের পর চোরাই তেলও অবৈধ ব্যবসার হাতও বদল হয়, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ২০০৯ ক্ষমতায় এলে গজারিয়ার মেঘনাঘাট এলাকার অবৈধ চোরাই তেল, সিমেন্ট এর কাঁচামাল ক্লিংকার, কয়লা, পামওয়েল ও অবৈধ পন্যের ব্যবসার হাত বদল হয়ে চলে যায় এলাকার ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার হাতে। এর পর মিলন স্থানীয় নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রকাশ্য করছে চোরাই তেলের ব্যবসা। বর্তমানে এলাকার প্রভাবশালী কয়েক নেতা পর্দার আড়াঁলে থেকে তাদের নিয়োগকৃত লোক দিয়ে কোটি কোটি টাকার চোরাই তেল (ডিজেল) মাদক ইয়াবা-ফেন্সিডিলসহ অবৈধ পন্যের ব্যবসা করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে পকেটে ভরছে।


সূত্র জানান, আগে জাহাজ থেকে পাচার হওয়া চোরাই তেলের ব্যবসাটি চাঁদপুর, আশুগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এলাকায় বেশী হতো। কালের আর্বতে ঐ এলাকা গুলোতে এখন আর জমজমাট চোরাই তেল, ক্লিংকার ও অবৈধ পন্যের বানিজ্য আগের মত তেমন হচ্ছে না। গজারিয়া মেঘনা এলাকা ও সোনার গাঁয়ের মেঘনা এলাকায় স্বাধীনতার পর নদী ঘেষা উক্ত এলাকাগুলোতে উপর দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জাতীয় গ্রীডের লাইন যাওয়ার সুবাধে সোনারগাঁও এবং গজারিয়া এলাকায় গড়ে উঠেছে শতশত শিল্প-কারখানা। এই শতশত মিল ফ্যাক্টরির পন্য উৎপাদনের জন্য দেশী-বিদেশী কাঁচামালও বিভিন্ন পন্যের অসংখ্য জাহাজ মেঘনা এলাকায় নদী বন্দর দিয়ে উক্ত এলাকার কারখানার মালামাল খালাস হয়। প্রতিদিন শত শত জাহাজ-কার্গো ও বিভিন্ন মালবাহী জাহাজ মেঘনাতে আসে এই সুবাধে জাহাজ থেকে তেল চোরাকারবারী মিলন গং লাখ লাখ লিটার চোরাই তেল সল্প মূল্যে ক্রয় করে পরে বেশী দামে পুনরায় বিভিন্ন জাহাজ, পেট্রোল পাম্প, হাট-বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করে চোরাকারবারীরা। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলাবন্দর থেকে মেঘনায় আগত কিছু কিছু জাহাজে, সর্বনাশা মাদক, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, সিগারেট, ক্লিংকারসহ, বিভিন্ন পন্য মেঘনা থেকে মিলনের মত চোরাচালানীদের দ্বারা নিরাপদে খালাশ হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার হয়। চোরাচালানী চক্রের অন্যতম সদস্য মিলন তাদের অবৈধ ব্যবসা ঝুট ঝামেলাহীন ভাবে করার জন্য আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার দুর্নীতিবাজ কিছু লোককে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে অবৈধ ব্যবসাটি করে থাকেন বলে চোরাচালানী চক্রের একটি সূত্র থেকে একথা জানা গেছে।

সূত্র আরো জানা গেছে হকার্স মিলন মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এস পির ও ঢাকার ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে করছে চোরাচালানী বানিজ্য। ঔ পুলিশের কর্মকতারা আদৌও জানেনা তাদের নাম ব্যবহার করে করছে চোরাচালানী বানিজ্য। এত কিছুর পরও মিলন চক্র এখনও অধরা ! এছাড়া স্থানীয় মাস্তান, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের কিছু লোককে পয়সা দিয়ে থাকেন বলে সূত্রটি একথাও বলেন। বর্তমানে মেঘনা এলাকার একমাছ বিক্রেতা হকার্স মিলন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের হয়ে অবৈধ চোরাই তেলের ব্যবসাটি পরিচালনা করছে বলে অনুসন্ধানে জানাগেছে। এককালের এই মাছ ব্যবসায়ী চোরাচালানী ব্যবসা করে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। অন্যদিকে প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে মেঘনার হকার্স মিলনের ওপেন তেল চোরকারবারী বিষয়ে মিলনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার চোরাচালানীর সত্যতার জানতে চাইলে মিলন বলে পত্রিকায় লিখে আপনার কোন লাভ হবেনা। যা করি সবার সাথে মিলেমিশেই করি, আমি অনেক ছোট ব্যবসায়ী আমার থেকে অনেক বড় ব্যবসায়ী আছে তাদের ধরেন আমাকে ধরে কিছু করতে পারবেন না এই বলে ফোন রেখে দেন।

দীর্ঘদিন থেকে মেঘনার চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে তেলসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ থাকার পরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবৈধ ব্যবসা বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নেওয়াতে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × two =