Site icon Aparadh Bichitra

কে রক্ষা করবে এই খুনের হাত থেকে

ভারতের কলকাতার একটি স্কুলের টয়লেটে আত্মহত্যা চেষ্টা করে এক ছাত্রী; পরে তকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

জিডি বিড়লার দশম শ্রেণির কৃতী ছাত্রী কৃতিকা পাল চলে গেল পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে। কিন্তু রেখে গেল তিন পাতার সুইসাইড নোট।

স্কুলের টয়লেটে মুখে প্লাস্টিক জড়িয়ে, বাঁ হাতের শিরা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। তার দেহের পাশে তিন পাতার একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। আর সেই সুইসাইড নোটের ছত্রে ছত্রে মানসিক যন্ত্রণা, বাবা-মায়ের প্রতি অভিমান, একাকীত্ব, দূরত্ব এবং সফল হওয়ার চাপ লিখে যায়। প্রকৃতির মতো সুন্দর জীবনটা তালগোল পাকানো জীবন হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়ে ওঠেছিল তার মুক্তির পথ।

মৃত্যু উপত্যকায় হারিয়ে যাওয়ার আগে কৃতিকা পাল লিখে গিয়েছে, রূঢ় বাস্তবতার আখ্যান। যে আখ্যান বেদনাদায়ক। যে আখ্যান মর্মস্পর্শী। যে আখ্যান মানসিক বিপর্যয়ের। যে আখ্যান ভিড়ের মাঝে একাকীত্বের। যে আখ্যান সফল হওয়ার চাপের কাছে নতিস্বীকারের। যে আখ্যান স্বপ্নের অপমৃত্যুর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চিঠির শুরুতেই বাবা-মার সঙ্গে তার দূরত্বের কথা লিখেছে ওই ছাত্রী। কৃতিকা আর পারছিল না। এর আগেও মেট্রো স্টেশনে গিয়েছিল আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পারেনি।

কৃতিকা লিখেছে, এই চিঠি যেন সংবাদমাধ্যমের হাতে না যায়। তাকে যেন সুন্দর শেষ বিদায় দেওয়া হয়। তার মৃত্যু নিয়ে মাতামাতি হোক, সে চায় না। বিদায় দেওয়া হোক তাকে।

তবে চিঠিটির উপসংহার বোধহয় কয়েকটা শব্দেই বর্ণনা করে গিয়েছে। কৃতিকা লিখেছে ,‘যদি এটা মনে করতে কষ্ট হয় তোমাদের, আমি আত্মহত্যা করেছি। তাহলে নিজেদের বুঝিও আমাকে খুন করা হয়েছে। কে বলবে আমি খুন হইনি?’

কে নেবে এই খুনের দায়? আমাদের সমাজের মানুষদের দাবি, ক্লাশে প্রথম হতে হবে। বন্ধুদের চেয়ে বেশি নম্বর পেতে হবে। এই কথা বা এই দাবিগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের সমাজের কৈশোরের বেপরোয়া উচ্ছ্বলতা। বাঁধনছাড়া হৈ- হুল্লোড় খুন হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায়, প্রতি সেকেন্ডে। কে রক্ষা করবে এই খুনের হাত থেকে?