“ন্যাশনাল সার্ভিস এর উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে” মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

0
3426

অবি ডেস্ক: ২৫ জুন ২০১৯ইং রোজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল সার্ভিস একতা কল্যাণ পরিষদ এর উদ্যোগে “ন্যাশনাল সার্ভিস ১ম-৪র্থ পর্বের কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ এবং চলমান কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধি করে স্থায়ী কর্মসংস্থান প্রদানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ও ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে” মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ মোস্তফা আল ইহযায।

সভাপতির বক্তব্যে মোঃ মোস্তফা আল ইহযায ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি গ্রহণ করে বেকারত্ব দূরীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টাকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ধন্যবাদ জ্ঞাপনপূর্বক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প “ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী”-র আওতায় ০৩ (তিন) মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সারাদেশের ৩৭টি জেলার ১২৮টি উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য বিভাগে মাঠ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং হাসপাতালে আগত রোগীদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দুই বছর মেয়াদী অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক ২০০/- (দুইশত) টাকা হারে মাসিক ৬,০০০/-(ছয় হাজার) টাকার মধ্যে ২,০০০/- টাকা সঞ্চয়, মাসিক ৪,০০০/- টাকা কর্মভাতা গ্রহণে কর্মরত আছি। আপনি অবশ্যই জানেন যে, এই সামান্য ভাতা বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে অত্যন্ত অপ্রতুল। এই অপ্রতুলতার মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে গঠিত “ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী”কে সফল করার জন্য আমরা ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ কোটির অধিক ক্লাস নিয়ে, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনায় দেড় কোটির অধিক জনসাধারণকে স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ প্রদান করে, কৃষিতে প্রায় দশ লক্ষাধিক কৃষককে পরামর্শ দিয়ে, প্রাণী সম্পদ এবং সেবা খাতে নিরলসভাবে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে তাদের ন্যায় ৮ ঘন্টা কার্য সম্পাদন করে সমান ভূমিকা রেখেছি। তাছাড়া দেশের গ্রামাঞ্চলে কোন শিল্প/কারখানা বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সেভাবে না থাকায় আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ইতিপূর্বে ১২৮টি উপজেলার মধ্যে ৬৪টি উপজেলার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই আমরা অত্র ৬৪টি উপজেলার প্রায় ১ লক্ষ ১১ হাজার যুব ও যুব মহিলা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। মূল্যহীন হয়ে যায় আমাদের ৩ মাসের প্রশিক্ষণ ও ২ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা। আমরা শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত যুব ও যুব মহিলা হয়েছি রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারের বোঝা।

তিনি আরও বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুব সমাজ। এই যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা বর্তমান সময়ের দাবি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুব সমাজ ও হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য উল্লেখযোগ্য বাজেট প্রণয়ন না করায় দেশের যুবসমাজ হতাশ। আমাদের মধ্যে অনেকই আছেন বিবাহিত, তাই এ বিবাহিত যুব ও যুব মহিলার পারিবারিক জীবনে এসেছে অশান্তি এবং ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তা হতে উত্তরণের একমাত্র উপায় মেয়াদ উত্তীর্ণ কর্মীদের পুনরায় নিয়োগের মাধ্যমে স্থায়ী কর্মসংস্থান প্রদান করা এবং চলমান কর্মসূচির কর্মীদের মেয়াদবৃদ্ধি করে স্থায়ীকরণ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৫/০১/২০১৯খ্রি: তারিখে জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন, দেশে বেকারত্বের হার অধিক হারে কমিয়ে আনবেন এবং যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সরকারের মূল লক্ষ্য। আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও উল্লেখ রয়েছে সারাদেশে ১ কোটি ২৮ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হবে। তিনি বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ৩ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের মত প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীরা যদি বেকার হয়ে পড়ি, তবে বেকারত্বের হার না কমে বরং বাড়বে বৈকি। কারণ আমাদের মত সারা বাংলাদেশে এ প্রকল্পে লাখ-লাখ কর্মী রয়েছে। “ভিশন ২০৪১” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদের সাথে কাজ করে আমরাও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রেখে যেতে চাই। তাই আমাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র ভিত্তি মজবুত করে সরকার ও জনগণের সহায়তাকারী হিসাবে কাজ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীদের স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করতে মোঃ মোস্তফা নি¤েœাক্ত ৭ দফা দাবি সরকারের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন,
১. আগামী এক মাসের মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কর্মীদের ৩ মাসের প্রশিক্ষণ ও ২ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার যথাযথ মূল্যায়ন করে পুনরায় নিয়োগ প্রদান এবং স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. চলমান ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির মেয়াদ প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ বছর করতে হবে এবং স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখতে হবে।
৩. বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্য বিবেচনা করে চলমান কর্মসূচির কর্মীদের নূন্যতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট বেতন স্কেলের আওতায় আনতে হবে।
৪. সরকারি বিভিন্ন শূন্যপদে স্বাভাবিক নিয়োগের পাশাপাশি ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীদের বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীদের নির্দিষ্ট পদবী নির্ধারণ করতে হবে।
৫. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক মেয়াদ উর্ত্তীণ কর্মীদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সে কমিটিতে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
৬. অনতি বিলম্বে দেশের যে সকল উপজেলা এখনো ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় আসেনি, সে সকল উপজেলাকে ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আলাদা ন্যাশনাল সার্ভিস সেল বা ন্যাশনাল সার্ভিস অধিদপ্তর গঠন করতে হবে।
৭. বেকারত্ম দূরীকরণের লক্ষ্যে বয়সসীমা ২৪-৩৫ বছরে পরিবর্তে ১৮-৩৫ বছর করে নতুন ভাবে উপজেলা ব্যাপী সম্প্রসারণ করতে হবে এবং যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অনতিবিলম্বে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, গণ আজাদী লীগের মহাসচিব মোঃ আতাউল্লাহ খান, সুপ্রীম সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম.এ সবুর, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া, বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি সামছুল আলম, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি চায়না আফরোজ, চট্টগ্রামের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মামুন প্রমুখ।

ধন্যবাদান্তে
(মোঃ মোস্তফা আল ইহযায)
সভাপতি
বাংলাদেশ ন্যাশনাল সার্ভিস একতা কল্যাণ পরিষদ

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen + 3 =