Site icon Aparadh Bichitra

ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তির আন্দোলনে অগ্রগামী রংপুর বনাম জোরছে বল মফিস !

অজেয় সুজন: গর্বিত রংপুরবাসী আজ সারাদেশে মফিস, বগা অথবা দ্রারিদ্রপীড়িত মঙ্গাবাসির তীলক ধারী, ভাবা যাই ! আমাদের পূর্বপুরুষদের উচচমানের সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা, সেই সাথে সকল মুক্তির আন্দোলনের অগ্রগামী, ত্যাগী ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বীরত্বগাথার ঐতিহাসিক রংপুর , কেন আজ রুগন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব অথবা শ্রমজীবি মানুষের সমাজে বেঁচে থাকার জন্য রিকশানীতি অথবা গার্মেন্টস শিল্পের অমানবিক বৈষম্যনীতি গ্রহন করছে ? রংপুরবাসী বাস চালক মফিস নাকি মফিস বাসের যাত্রীর তকমা নিয়ে কেন চলে তা আমি জানি না, তবে মফিস এর ইংরেজি অনুবাদ মাপিট, যার অর্থ সাদা সিধে মানুষ, এর বিপরীত শব্দ”কালপিট” যা অর্থ ধুরন্ধর মানুষ, এছাড়াও ইয়া মাফিজু আল্লাহতালার আর একটি নাম । তাই আমি গর্বিত আমি মফিস ! আর কার্তিকের মঙ্গা কৃষিনির্ভর অর্থনীতির শুরু থেকে ছিল, কৃষি শ্রমিকরা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে কৃষি কাজ পায় না, তারা পুজিবাদী ও শোষিত অর্থনীতির কারনে আজ চরম দ্রারিদ্রতার শিকার । ইতিহাসের স্মারক ও ধারক উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল উজানে নেপাল- ভুটান- সিকমি, ভাটিতে আমাদের রংপুর , ”রং” ভাষা ও সাহিত্য থেকে রংপুর এবং তিস্তার অপর নাম ”রংপু” থেকে রংপুরের নামকরন । ১৮৩২ সালে মনোরম ও দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ নিয়ে গড়ে উঠে ’জমিরদার্স স্কুল ’ যা পরবর্তীকালে রংপুর জিলা স্কুল নামে আপন আলোই আলোকিত । ১৮৪৮-১৮৫৬ ’রঙ্গপুর বার্তাবহ ’ বাংলাদেশ ভূখন্ডের প্রথম বাংলা প্রত্রিকা রংপুর থেকে প্রকাশিত । মহিমারঞ্জন রায় চেীধুরীর দানকৃত সম্পক্তি উপর ১৮৫৪ সালে পাবলিক লাইব্রেরী গড়ে উঠে যা রংপুরের সাহিত্য সংস্কৃতির পীঠস্থান, যা বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনের তীর্থক্ষেত্র । গোলাকার গম্ভুজ, অস্টকোনী ড্রামের আকৃতিতে গড়া ও মার্বেল পাথরে মোড়ানো ১৮৭৩ সালে নির্মীত কেরামতিয়া মসজিদ আজও বেদাদ মুক্ত হয়ে প্রথম খলিফা আবু বক্কর (রা) সরাসরি বংশধর কেরামতিয়া জেীনপুরি (রা) মাজার ধারন করে আছে ।
১৮৮০ সালেই মাতৃভাষার শিক্ষা আন্দোলন রংপুর থেকে শুরু হয় যা ফলেই ’ বাংলা স্টাইপেন্ড স্কুল’ স্থাপনের সূচনা ।


১৯০৫ সালে সুরেন্দ্ররায় চোধুরীকে সম্পাদক করে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি কেন্দ্রিক ” রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ” এর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা এখনও মোমবাতির শিখার ন্যায় আলোক বর্তিকা নিয়ে বেচে আছে, আমরা আশা করি ”রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ” আবার নতুন আলোয় ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে রংপুর অঞ্চলের নবতর মাত্রা ও সংস্কৃতির চর্চার কেন্দ্রবিন্দু টাউনহল চত্বরকে আমাদের মনের দারিদ্রতা ও মফিস হয়ে উঠাকে রোধ করবে । ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দুই বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মূখার্জী ১৯২১ সালে জনসভায় ’স্বাধীন পলাশবাড়ীর” ঘোষণা আজও ইতিহাসের সাক্ষি । ব্যাধি ও জরা মুক্তির জন্য জানকী বল্লভসেনের মাতার নামে শ্যামাসুন্দরী ক্যানেল প্রমান করে রংপুর শহরের মানুষের সেীহার্দবোধ ও জ্ঞান তাপস চিন্তা, যা আজ ধীরে ধীরে সংস্কার হচ্ছে ফিরে পারছে প্রকৃত রুপ । মন্নেলার রায় মাহিগঞ্জে হীরা, জহরত, স্বর্ণ ও মনি মুক্ত খচিত বঙ্গ তাজ (মুকুট) বিক্রয়ের স্থানটি আমাদের ”তাজহাট জমিদার বাড়ী” যা বর্তমানে সগর্বে ও ডিজাইনে ” রংপুর যাদুঘর ” ।
বংপুরের বিশিষ্ট গুণীজনদের নিয়ে কাজী আব্দুল কাদের ১৯৬৬ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজের যে যাত্রা শুরু করে তা আটজেলার মানুষের চিকিংসার আশ্রয়স্থল, যদিও তা কাউয়া ও শকুনের নজরে অতি উচচ শিক্ষিত অর্থলোভী কমিশনবাজ চিকিৎসক, অর্ধশিক্ষিত সেবিকা ও অশিক্ষিত ওয়ার্ডবয়ের অসামাজিক ও রুঢ় আচরনে জনমানুষের ভীতির স্থানে পরিনত হয়েছে । রংপুরে স্বদেশী আন্দোলন তথা বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যক্তি ছিলেন শালবনের প্রফুল্ল চক্রবর্তীর পিতা ঈশান চক্রবতী, ঐ পরিবারের অনেক সদস্যের নেতৃত্বের গুণে রংপুরের অধিকার আদায়ের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ । আমাদের রংপুরের তিন নির্ভীক উকিল সতীতচন্দ্র চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ লাহিড়ী এবং কুলকলম সেন স্বেচ্ছায় এগিয়ে গিয়ে ক্ষুদিরাম পক্ষে আদালতে দাড়িয়ে প্রমান করেছিলেন সঠিক জ্ঞান ও আন্তশক্তির থাকলে আমরা সকল অবস্থায় আমাদের মহান নেতাদের পাশে দাড়াতে পারি ।


১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পরপরই রংপুরের মানুষ ভারতবর্ষেও সবার আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৭৮৩ সালে রংপুরে রংপুরের সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ ছিলো তাদের অধিকারের চরম লংঘনের বিরূদ্ধে কৃষকদের ক্রোধের বলবান বহি:প্রকাশ, যা সংঘর্ষ, পলায়ন, গণঅবাধ্যতা এবং মাঝে মাঝে বিদ্রোহ ইতিহাসের পাতায় তা ” রংপুর কৃষক বিদ্রোহ ” নামে পরিচিত । ব্রিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের বিখ্যাত নেতা ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী ফকীর-সন্ন্যাসী বিদ্রাহের পটভূমি এই রংপুর, যা আজও আমাদের অনুপ্রেরনার উৎস । সিপাহী বিপ্লবের রংপুরের যে ভূমিকা তা আজ সিপাহী বিপ্লবের উপনেতা ’ওয়ালীদাদ মুহম্মদ” এর সমাধি রংপুর ধারন করে আমাদের মননে চালানদেয় ইতিহাসে এই অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা । ৭ আগষ্ট ১৯০৫ বঙ্গভঙ্গেও বিরুদ্ধে রংপুর টাউন হল চত্বরে ছাত্র জনতার মুহুমুঙ্গ হুংকার গর্জে উঠেছিল ”মানি না-মানবো না-ইংরেজ তুমি দূও হও” আজ আমাদের কর্ণকুটিরে শোষকের শোষনের বিরুদ্ধে নিজের অধিকারের কথা । আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ”৩রা মার্চ ” ১৯৭১ এ শহীদ শংকু সমজদার আত্মদান বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও বাঙ্গালীর পরাধিনতার শিকল চুর্ণকারী “৭ মার্চ” এর ভাষনেও রংপুরের শহীদের কথা উল্লেখ করেছেন ।


বীরের জাতি এই অঞ্চলের মানুষ সশস্ত্র যুদ্ধ আরম্ভ করে ২৪ শে মার্চ ১৯৭১, আর ২৮ শে মার্চ ১৯৭১ রোববার রংপুরের মানুষ জেগে উঠেছিল এক নবচেতনায়, লাঠি সোটা, তীর-ধনুক, বল্লম প্রভৃতি সহযোগে রংপুর ক্যান্টমেন্ট আক্রমন আজ অবিস্মরনীয় ঘটনা । আর দিল্লীর বাদশাহ শাহ আলমের নাম অনুসারে আলমনগর, নওয়াবগঞ্জবাজার ও রাধাবল্লভ কেন্দ্রীক বংপুরের বিকাশে মাহিগঞ্জের জমিদারদের সংস্কৃতির চর্চা ও আফানউল্লাহ মাদ্রাসার অরিয়েন্টাল শিক্ষা আমাদের গৌরবের কথায় জানান দেয় । সেই সাথে রংপুর কেন্দ্রীক রাজা রামমহন রায় ও বেগম রোকেয়ার সমাজ সংস্কারের ইতিহাস সকলের জানা । এত সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে আজ আমরা রংপুরবাসী আত্মপরিচয় দিতে দিধাহীন কেন ? কেন গ্যাস ভিত্তিক শিল্পকারখানার জন্য আমাদের চেতনার উম্মেশ ঘটে না ? আসুন রংপুর উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দলবদ্ধ হয়ে কাজ করি ।