জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা দেশকে ভালোবাসে এবং তারা দেশপ্রেমিক : কর্ণেল অলি

0
951

জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা দেশকে ভালোবাসে এবং তারা দেশপ্রেমিক বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। জামায়াতে ইসলামি দেশপ্রেমী শক্তি। দেশকে তারা অনেক ভালোবাসে, তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী এসেছে।’

নতুন নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ‘নাজুক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক’ পরিস্থিতি এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এলডিপি ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে এক মঞ্চের ঘোষণা দেয় তিনি।

সেখানে জামায়াত থাকবে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক না। তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী এসেছে এবং তারা নিজেদের মধ্যেও বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তারা দেশপ্রেমী শক্তি। তারা দেশকে ভালোবাসে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়।

প্রশ্নকারী সাংবাদিককে উদ্দেশ করে অলি বলেন, আপনি হাসতেছেন, বোধহয় একটু আরাম পাচ্ছেন। আমার কথাটা শোনেন। ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক না। এরা বাংলাদেশকে ভালোবাসে।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় নামা জামায়াত পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে বাঙালি হত্যায়ও নেমেছিল। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দলটির শীর্ষনেতাদের সবারই শাস্তি হয়েছে। সম্প্রতি জামায়াতের একটি অংশ একাত্তরের ভুমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা জানায়।

যদিও মুক্তিযোদ্ধা অলি বিএনপিতে থাকার সময় জামায়াতবিরোধী নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। চট্টগ্রামে তার নির্বাচনী এলাকায়ও জামায়াতের সঙ্গে ছিল তার দ্বন্দ্ব।

দেড় দশক আগে বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করলেও পরে তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে যোগ দেন, ওই জোটে জামায়াতও রয়েছে।

এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর সংসদে যোগ দেওয়া নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তার মতানৈক্য দেখা দেখা গিয়েছিল।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন অলি, যাতে ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টি, জাগপা, খেলাফত মজলিস ও ন্যাশনাল মুভমেন্ট।

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাকেও মঞ্চের লক্ষ্য ঠিক করেছেন এলডিপি সভাপতি।

তিনি বলেন, যারা দেশকে ভালোবাসে এবং বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, দেশবাসীকে মুক্ত করতে চায়, যারাই আমাদের সাথে আসবে, সবাইকে আমরা সাথে রাখব।

‘কিন্তু দালাল-বেঈমানদের না’- এই মন্তব্য করলেও তিনি কাদের এভাবে চিহ্নিত করেছেন, তা স্পষ্ট করেননি।

তবে সম্প্রতি বিএনপিকে উদ্দেশ করে অলি বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পরও যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন, তারা ‘বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

জোট নেতা অলি আহমদ এবং দলীয় অনেক নেতার বিরোধিতার মধ্যেও বিএনপি একাদশ সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামও সংসদে যোগ দিয়েছে।

আপনারা ২০ দলীয় জোটে থাকবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে অলি বলেন, জাতীয় মুক্তিমঞ্চ কোনো জোট নয়। আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি এবং থাকব।

এই প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের মূল দল বিএনপি। তারা তো ওই জোটে থেকেই ড. কামাল হোসেন সাথে (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) কাজ করছেন।

খালেদাকে মুক্ত করার আন্দোলনে বিএনপি নেতারা ব্যর্থ হচ্ছেন বলে দাবি করে আসছিলেন দলটির এক সময়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য অলি।

বিএনপির ব্যর্থতার কারণের কি এই মঞ্চ গঠন করা হল- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কারও ব্যর্থতার কথা বলব না। আমাদের সকলের ব্যর্থতা, আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদেরও ব্যর্থতা রয়েছে। যথেষ্ট হয়েছে। উই আর টু ফ্রি দ্য নেশন। জাতিকে মুক্ত করতে হবে, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারে কে আসল কে গেল- এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা চাই, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।

এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার নেতা তাসমিয়া প্রধান, খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা আহমদ আলি কাসেমী, ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী মুহিব খান। মঞ্চে না বসলেও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 2 =