Site icon Aparadh Bichitra

সত্য মামলা প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হয় : ড. আকবর আলী খান

আমাদের দেশে মিথ্যা দিয়ে মামলা শুরু হয় এবং সত্য মামলা প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান।

আজ শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ‘নুসরাত হত্যার সঠিক বিচার নারী নিপীড়ন কমিয়ে আনতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান এই মন্তব্য করেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আকবর আলি খান বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে, বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে এবং বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। অভিযোগ দায়ের থেকে চূড়ান্ত বিচার- প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন করতে হবে।’

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী নির্যাতন কমছে না বলে মনে করে আকবর আলি খান বলেন, ‘সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক কাঠামো না থাকা ও সুশাসনের অভাবও এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশে নারী নির্যাতন বর্তমানে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা যদি একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই তাহলে নারী নিপীড়নের হার কমিয়ে আনতে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘নুসরাতের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের কালো ইতিহাসের একটি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলাদেশের সমস্ত লোক চায়। নুসরাত হত্যার সঠিক বিচার হয়তো নারী নিপীড়ন কিছুটা কমিয়ে আনলেও উল্লেখযোগ্য হারে তা কমিয়ে আনতে পারবে না। এই একটি মামলায় সুবিচার করে কঠিন শাস্তি দিলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।’

আকবর আলি খান জানান, নারী নির্যাতনের প্রতি চারটি মামলার তিনটিতেই আসামি ছাড়া পেয়ে যায়। আর যে একটিতে সাজা হয় তাও নিম্ন আদালতের রায়ে; উচ্চ আদালতে তাও কমে যায়। এ ছাড়াও নিজেদের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য পুলিশ অনেক মামলা নেয় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় ঢাকা কমার্স কলেজকে হারিয়ে সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজ এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নুসরাত একটি প্রতীক। এক প্রতিবাদী মেয়ে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সে বিচারের দাবিতে অটল ছিল। তিনি তার স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে সোনাগাজী যে মাদ্রাসায় নুসরাত লেখাপড়া করেছে সে মাদ্রাসার নামকরণ নুসরাতে নামে এবং তার মারা যাওয়ার দিনটিকে জাতীয়ভাবে ‘নিপীড়ন বিরোধী দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, তনু, রুপা, শাহীনুর, নুসরাতের মতো আর কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে আর যাতে কোনো নারীকে নিপীড়ন তথা হত্যার শিকার হতে না হয়। আমরা দেখেছি প্রচলিত আইনে নিপীড়িতরা মামলা করতে গেলে মামলা নেওয়া হয় না। মামলা নেওয়া হলেও বিবাদী পক্ষের হুমকিতে বাদীকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। যে নারী নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তিনি আইনের আশ্রয় পাচ্ছে না, অথচ নিপীড়নকারী আইনের প্রশ্রয় পাচ্ছে। ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় সবার আস্থা কমে আসছে। এজন্য জনমনে আস্থা অর্জনে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যায় করে পার হওয়ার মানসিকতা দূর করে অন্যায়কারীর দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাই আমরা নুসরাত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। রাষ্ট্র যদি এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক স্বচ্ছ বিচারের চিত্র তুলে ধরতে পারে তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে নারী নিপীড়নের মাত্রা কমে আসবে।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মো. রইস, সাংবাদিক রোকসানা আনজুম নিকল, এস এম আজাদ ও শামীমা দৌলা। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।