শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মস্থলে নয়, অভিনয়ে সময় দিচ্ছেন বেশি

2
1058

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ এর বিরুদ্ধে অফিস ফাকি দিয়ে ছোট পর্দায় বিভিন্ন নাটকের অভিনেতা ও মডেল হিসেবে অভিনয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় অভিনয়ের সুবাদে তিনি বেশিরভাগ সময় রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেন। যদিও তার বাসা নরসিংদী জেলা শহরে। সপ্তাহে যেটুকু সময় তিনি সরাইল এসে কর্মস্থলে সময় দেন এর বেশিরভাগ এখানে তিনি বিভিন্ন অভিনয়ের ব্যাপারে খোশগল্পে ব্যস্ত থাকেন। আর এ সুযোগে কিছু সুবিধাবাদী শিক্ষক নেতা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরে নৈরাজ্য চালিয়ে ফায়দা লুটছেন তারা। সঠিক তদারকি না থাকায় উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও যার যার ইচ্ছেমতো তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোমবার (৮ জুলাই) উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আবদুল আজিজকে সরাইলে শিক্ষা অফিসার নয়, “ইন্দুবালা” এর মডেল অভিনেতা হিসেবে সবাই চেনেন। ‘একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি কিভাবে অফিস ফাকি দিয়ে অভিনয়ে ব্যস্ত থাকেন’ এমন প্রশ্নও রাখেন একাধিক দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা। এদিকে সোমবার সরেজমিনে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষকরা জানান, আবদুল আজিজ স্যার যেভাবে অভিনয়ে মনোযোগ দিয়েছেন, একদিন তিনি বড়মাপের একজন অভিনেতা হবেন। কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, স্যার অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। তেমন কড়াকড়ি নিয়ম বাধা নেই। আসলে যারা শিল্পী তাদের মন ভালো থাকে। কোনো কিছুতেই স্যার আমাদের তেমন চাপে রাখেননা।

উপজেলা সদরের গুনারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার আম্মার মোবাইলে স্যারের সুন্দর সুন্দর ছবি আছে। স্যার সেজেগুজে একজন সুন্দরী নায়িকার সঙ্গে বসে আছেন। স্যারের অভিনয়ও দেখেছি মোবাইলে। স্কুলের ম্যাডামরা মোবাইলে দেখিয়ে স্যারকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

অপরদিকে কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক মুখরোচক মন্তব্য করে বলেন, তিনি (আবদুল আজিজ) “হিরো” নাটকে, এখানে তো শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি প্রায় সময় এমন ছোট ছোট হিরো মার্কা পোশাক পড়েন, যা দেখলে আমাদেরই ‘লজ্জা’ লাগে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কর্মকর্তাদের লাগামহীন কর্তব্য অবহেলার কারণে এখানকার বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে নানা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে দুর্নীতি-নৈরাজ্য। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে বিভিন্ন ক্লাস্টারের সহকারি শিক্ষা অফিসাররাও এখন তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথভাবে পালনে গড়িমশি শুরু করেছেন। কয়েকজন সহকারি শিক্ষা অফিসার তাদের আখের গুছাতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দুর্নীতির নয়া কৌশল চালু করেছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে অনৈতিক এই কৌশলে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের শেখানো হচ্ছে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কূটকৌশল।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্লিপ গ্র্যান্ট বরাদ্দ বাবদ উপজেলার ১২৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ৮৬ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র মেরামত কাজ বাবদ উপজেলার ২৩ বিদ্যালয়ে দুই লক্ষ টাকা করে ৪৬ লক্ষ টাকা এবং ২২ বিদ্যালয়ে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে ৩৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে।

অভিযোগ আছে, এই দুই বরাদ্দে এক কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার কাগুজে কলমে বাস্তবায়ন কাজ দেখিয়ে ও কিছু বিদ্যালয়ে নামমাত্র কাজ করিয়ে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা ভাগভাটোয়ারা করে নেওয়ার সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, কমিটির লোকজন সহ সংশ্লিষ্ট সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজের বক্তব্য নিতে সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গেলে অফিস সহকারি আল আমীন বলেন, টিও স্যার কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গেলেন, আজ আর অফিসে আসবেন না তিনি। অফিসের সকল সহকারি শিক্ষা অফিসার ১০ দিনের ট্রেনিং করতে উপজেলার বাহিরে আছেন। বর্তমানে অফিসে আমি আর পিয়ন ছাড়া কেউ নেই।
পরে বক্তব্য নিতে অফিসে বসেই ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল দিলে শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ রিসিভ করে বলেন, আমি চলন্ত গাড়িতে আছি। আজ অফিসে আর ফিরবো না।

আগামিকাল মঙ্গলবার আসলে অফিসে দেখা হবে কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে, পরিচয় ও সাক্ষাতের বিষয় নিশ্চিত হয়ে তিনি বলেন, আপনাকে আগে ফোন দিয়ে আসতে হবে, কারণ অফিসিয়াল কাজে আমাকে প্রায়ই অফিসের বাইরে থাকতে হয়। তাছাড়া নানা কারণে আমি এখন ব্যস্ত সময় পার করছি, এমন কথা জানিয়ে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × four =