গবেষণা প্রটোকল না মানায় ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে মন্ত্রণালয়

0
789

দুধ নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। গবেষণা প্রটোকল না মানায় তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

বাজারের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির সাত ধরনের পাস্তুরিত দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিন ধরনের দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে- গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে।

আজ মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা জানান মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন। তিনি বলেন, পিআর রিভিউস জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই ওই গবেষক তার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু তার গবেষণার স্যাম্পল সঠিক ছিল না। গবেষণাতেও ত্রুটি ছিল। তাকে সাতদিনের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক কোন জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে গত ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বায়োমেডিকেল সেন্টারের পরিচালক এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, এ গবেষণার জন্য বাজার থেকে পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এগুলো হলো মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। আর অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে।

তিনি বলেন, আমরা যে ফলাফল দিয়েছি, তা নমুনার ফলাফল। তার মানে এই নয় যে ওই সব কোম্পানির সব পণ্যই এ রকম। তবে এভাবে যেখানে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হলে আমরা কিন্তু থাকব না, মরে যাব। অ্যান্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো, ওই গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে এখনই গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।

গবেষণা ফল প্রকাশের পরপরই দেশজুড়ে এ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। গবেষকদের সংবাদ সম্মেলনের তিন দিন পর ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাছার জানান, ওই গবেষণার সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি গবেষণাটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

খাদ্যপণ্যের মান নিয়ে শিক্ষকদের গবেষণা, ঢাবির অস্বীকার

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধসহ ৭২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এই গবেষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনটির দায় নিচ্ছে না খোদ ফার্মেসি বিভাগই।

এর আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও বৃহস্পতিবার বলেছেন, ঢাবি শিক্ষকদের ওই রিপোর্ট মিথ্যা।

ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফলের প্রতিবেদন উক্ত গবেষকের একান্ত নিজস্ব গবেষণালব্ধ ফল হওয়ায় উপরোক্ত গবেষণা ফলাফলের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ফার্মেসি বিভাগ কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করছে না।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বিধায় সরকার ও জনসাধারণের পক্ষ থেকে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা ফার্মেসি বিভাগ জাতীয় স্বার্থে সার্বিক সহায়তা প্রদানে বদ্ধ পরিকর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ওই প্রতিবেদনে, দুধ ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘি, ফলের জুস, মরিচ ও হলুদের গুঁড়া, পাম অয়েল, সরিষার তেল ও সয়াবিন তেলের নমুনা পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।

এই গবেষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলা হলেও বাজারে থাকা ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধ পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কিছু পাওয়া যায়নি বলে ২৫ জুন হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয় বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ।

ঢাবি শিক্ষকদের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দুধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনারা জানেন গত পরশু বাংলাদেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ঢাকা ইউনিভার্সিটির একটি টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে বলছে, মিল্কভিটায় আর্সেনিক আছে। মিল্কভিটা দুধের মধ্যে না-কি ফরমালিন আছে। এটি একটি সর্বস্ব মিথ্যা কথা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × four =