আমি দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আপনাকে শুভেচ্ছা জানানোসহ মিষ্টি মুখ করাতে এসেছি

0
618

মাটির বাড়ি, উপরে টিনের চাল আর খড়ের ছাউনি, পাট কাঠি দিয়ে বাড়ির সীমানা ঘেরা। সেই বেড়ার ফাঁক দিয়ে পুলিশ সুপারের মিষ্টি কণ্ঠে ডাক, সুম্মিতা আপনি বাড়িতে আছেন? আমি দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আপনাকে শুভেচ্ছা জানানোসহ মিষ্টি মুখ করাতে এসেছি। আপনি পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে গর্বিত করেছেন।

আকস্মিক এ ডাক শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সদ্য বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি পাওয়া সুস্মিতা দেব শর্মা ও তার মা মমতা রাণী দেবশর্মাসহ পরিবারে সদস্যরা। শরীরে চিমটি কেটে তন্দ্রা কেটে দেখলেন সত্যি সত্যি বাড়ির সামনে মিষ্টি হতে দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম নিজের হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টি মুখ করালেন। শুনলেন পরিবারের সদস্যদের জীবণ সংগ্রামের কথা। সাহস দিলেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

সুস্মিতার বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৯ নং মঙ্গলপুর ইউপি’র উত্তর বিষ্ণপুর গ্রামে। দরিদ্র ঘরের কন্যা সুস্মিতার পিতা মনতোষ দেবশর্মা গত ১ বছর আগে পরলোকগমন করেন। মাতা মমতা রাণী দেবশর্মা একজন গৃহিনী। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে মেঝো সুস্মিতা। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে ১ম বর্ষ অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী সে। স্বপ্ন ছিল বিসিএস করে অফিসার পদে চাকরি করার। কিন্তু সংসারের অভাব অনটন আবার  ভাইদের পড়া লেখা তার সেই স্বপ্নকে আপাতত আটকে দিয়েছে। পরিবারের অভাব অনটনের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন এটা চাকরি করতে হবে।

৩ জুলাই দিনাজপুর পুলিশ লাইনস্ মাঠে বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে রিকুটিং পক্রিয়ায় লাইনে সুস্মিতা দাঁড়ায় এবং সে মনোনীত হয়।

পুলিশে চাকরি পাওয়া সুস্মিতা জানান, সবাই জানে বর্তমান সময়ে টাকার বিনমিয় ছাড়া সরকারি চাকরি পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে একটিও টাকা কোথাও কোন অবৈধ লেনদেন করতে হয়নি। বাবা না থাকায় চাকরির আবেদন, পুলিশ লাইনের মাঠে দাঁড়ানো, লিখিত ও অন্যান্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সম্পূর্ণ কাজ একাই করতে হয়েছে। কিন্তু একা গিয়েও তিনি কাঙ্খিত ১০৩ টাকার আবেদন ফরমের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা স্বরূপ চাকরি জীবনে কোন প্রকার অবৈধ লেনদেন বা অবৈধ টাকা হাতাবেন না বলেও জানান।

সুস্মিতার মা মমতা রাণী জানান, সুস্মিতার পড়ালেখার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ আগে থেকেই। সে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলাতেও বিদ্যালয় জীবনে সফল ছিল। তাই পুলিশে চাকুরীর জন্য সে একাই কোন প্রকার বিনিময় ছাড়াই নিজ যোগ্যতা ও পুলিশ সুপারের সততায় চাকরিটি পেয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলাম জানান, অভাবের সংসারে স্বামীর অবর্তমানে মেয়ের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছিল সুস্মিতার মা। ভাইরা পড়া লেখার পাশা পাশি বিভিন্ন কাজ করে ও আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় চলে পরিবার। যার ফলে আজ সুস্মিতা সম্মানজনকভাবে মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে পুলিশে চাকরি পেয়েছে।

ইউপি সদস্য আম্পা রাণী দেবশর্মা জানান, পুলিশের চাকরি যে টাকা ছাড়াই পাওয়া যায় তাঁর অন্যতম উদাহরণ সুস্মিতা। এবার দিনাজপুর জেলায় সুস্মিতারমত অন্যান্য সকলে অবৈধ লেনদেন কিংবা তদবির ছাড়াই চাকরি পেয়েছে শুনে তিনি আনন্দিত ও জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ বলে জানান।

জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েমসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুশান্ত সরকার, বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ এটিএম গোলাম রসুল, কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বজলুর রশীদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight − 8 =