Site icon Aparadh Bichitra

সাবধান: প্রানের বিষাক্ত দুধে আপনার প্রাণটাই চলে যেতে পারে

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারে পরীক্ষায় প্রাণমিল্কে তিনটি বিষাক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পাওয়া গেলেও এবার পরীক্ষাতে প্রাণমিল্কসহ ৫ কোম্পানির সাতটি পাস্তুরিত দুধে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত চারটি অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক। অপাস্তুরিত তিন দুধেও প্রায় একই ধরনের উপাদান পাওয়া গেছে।

প্রাণমিল্ক, মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো এ ৫ কোম্পানির সাত পাস্তুরিত এবং রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর এ তিন বাজার থেকে অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় বারের মতো এ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

এবার পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের ১০টি নমুনার তিনটিতে ৪ ধরনের, ছয়টিতে ৩ এবং একটিতে ২ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। সারা দেশে যখন তার গবেষণা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে, এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফার গবেষণায় তিনি এমন তথ্য পেয়েছেন। সমালোচনার জবাব এবং জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই একই বিষয়ে দ্বিতীয় দফা গবেষণা করেন এ অধ্যাপক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য-সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান। এর আগে প্রাণদুধসহ বাজারে প্রচলিত সাতটি পাস্তুরিত দুধে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ওই সময় পাস্তুরিত দুধের ৭টি নমুনার ৩টিতে ও অপাস্তুরিত দুধের ৩টি নমুনার ১টিতে ডিটারজেন্ট পাওয়া যায়।

ফরমালিনের উপস্থিতি মিলেছিল পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের মোট ১০টি নমুনার একটিতে। পরীক্ষা চালানো পাস্তুরিত দুধের ৭টি নমুনার মধ্যে ছিল- প্রাণমিল্ক, মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো। এছাড়া রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর এ তিন বাজার থেকে অপাস্তরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন অধ্যাপক ফারুক। এরপর বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ গবেষণার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়।

১৩ জুলাই শনিবার অধ্যাপক ফারুক জানান, গত সপ্তাহে আমরা এ পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও আগের সেই ৫ কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই বাজার থেকে খোলা দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়ে একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল ৪টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন)। এর মধ্যে আগের বারে ছিল না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন)।

ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে এক সংবাদ সম্মেলনে দুধ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেখানে আমরা বিএসটিআইয়ের দেড় যুগের পুরনো দুধের স্ট্যান্ডার্ডে (Bangladesh Standard, BDS 1702. 2002) বর্তমানের নয়টি পরীক্ষার সঙ্গে কম পক্ষে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পরীক্ষার মতো দুটি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুধের এ স্ট্যান্ডার্ডকে যুগোপযোগী করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। এতে আমরা আরও জানিয়েছিলাম, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা এ পরীক্ষাটি মাঝে মাঝে করার চেষ্টা করব।

ওই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য টেনে তিনি আরও বলেন, উপস্থিত গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মাধ্যমের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলো যেন এখন থেকে নিয়মিতভাবেই দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে। অধ্যাপক ফারুক বলেন, আমরা ভবিষ্যতেও এ পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশের চেষ্টা করব। আশা করি, আমাদের প্রকাশিত এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে নিজেদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলো দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবে। এভাবে দেশে দুধের মানের উন্নতি ঘটবে। উপরন্তু, জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এ সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না।

এদিকে গবেষণার বিষয়ে আ ব ম ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান সৃষ্টি করা ও গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু অ আ ক খ মুখস্থ করাবে তা হতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা অনুভব করে। আমরা যেটা প্রকাশ করেছি সেটা সম্পূর্ণ দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রকাশ করেছি। এটা কোনো কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট টাকা নিয়েই এটা করেছি এবং সরকারের যে ভেজালবিরোধী কর্মকাণ্ড, সেটাকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই এ পরীক্ষা করা হয়েছে।

অধ্যাপক ফারুক বলেন, এ গবেষণা প্রকাশের পর একটি মহল বলল আমি নাকি বিদেশি এজেন্ট, তাদের হয়ে কাজ করছি। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য এ পরীক্ষা করেছি, কারও কথায় করিনি। স্বদেশি পণ্য সবাই ব্যবহার করুক এটা আমিও চাই, তবে তা যেন ঝুঁকিপূর্ণ না হয়। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সতর্ক করা যাতে তারা দুধ সিদ্ধ করে খান। প্যাকেট কেটে স্ট্র দিয়ে বিজ্ঞাপনের মতো যেন ঢকঢক করে না খান। এভাবে খাওয়া উচিত না। দুধ সিদ্ধ করে খেতে হবে, কেননা সেখানে জীবাণু পাওয়া গেছে। আমার ধারণা ছিল যে পাস্তুরিত দুধে কোনো ভেজাল থাকবে না, কিন্তু দেখা গেল সেটা হচ্ছে। তাই এটা জনগণকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেছি।

জার্নালে প্রকাশ না করে সংবাদ সম্মেলনে বলার বিষয়ে অধ্যাপক ফারুক বলেন, আমার দুটো কাজ এক বছর হল প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের নিজস্ব গবেষণাগুলো জার্নালে ছাপা হতে গেলে কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। এ সময়কালে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


ততদিনে এ দেশের মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী কি এসব খেয়ে মারা যাবে? আমরা কি ততদিন বসে থাকব? আমরা ভালোভাবেই জানি কোনটা পিআর রিভিউতে দেয়া দরকার আর কোনটা দরকার না। আমি দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তার ফল বিএসটিআই কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের পরীক্ষার ফল এখনও আমি পাইনি। সেগুলো কেন আমাকে দেখানো হচ্ছে না- এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।