স্টাফ রিপোর্টার:
নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা নামধারী সন্ত্রাসের মহা নায়ক কে এই হাজী ইয়াছিন মিয়া। নিজের নামের আগে হাজী (হজ্জ্ব পালনকারী) শব্দটি থাকলেও কাজের বেলা পুরোটাই সন্ত্রাসী। মাদক ব্যবসা, জমিদখল, নারী নির্যাতন, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, লুটতরাজ, জবরদখল সবকাজেই পারদর্শী তার বিশাল বাহিনী। হাজী ইয়াছিন মিয়া নিজেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালী মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি দাবী করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা জোড়পূর্বক মার্কেটটি দখল করে দীর্ঘ দিন ধরে মার্কেটের দোকান ঘর বেচাকেনা সহ ভাড়া উত্তোলন করে নিজের পকেট ভারী করছে। আর এই অবৈধ আয়ের একটা অংশ স্থানীয় থানা পুলিশ ও উপর লেভেলের নেতাদের ভাগবাটোয়ারা দিয়ে নিজেকে আইনের বেড়াজাল থেকে নিজেকে রক্ষা করছে। টাকা পেলে প্রশাসনের লোকজন নিরব ভূমিকা পালন করে। তার অপরাধের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াছিন বাহিনী ২০১৬ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার মিতালী মার্কেটের ৮নং ও ১৩ নং ভবন দুটি সস্ত্রাসী কায়দায় আওয়ামীলীগের দোহায় দিয়ে জোর পূর্বক দখল করে নেয়। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে মিতালী মার্কেটের ভবন দুইটি দখল করে নিয়ে প্রায় ৪৫০ দোকান মালিককে জোড় পূর্বক উচ্ছেদ করে এসব দোকানের ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত তার সন্ত্রাসী বাহিনী আদায় করে নেয়। ইহাতে দেখা যায় যে ইয়াসিন বাহিনী প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ১০ লাখ টাকার মতো ভাড়া বাবদ আদায় করে নিয়েছে। শুধু তাই নয় সে দোকানদারদের উচ্ছেদ করে প্রতি দোকান ভাড়া জন্য ৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রিম হিসেবে নিয়েছে। এ সুবাধে সে আরও কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছর যাবৎ সে মিতালী মাকের্টের সবগুলো ভবনই দখল করে নিয়েছে। যেখানে প্রতিমাসে বাবদ আদায় হয় কোটি টাকার ভাড়া। এভাবেই চলছে গত ৫ বছর যাবৎ ইয়াছিনের রামরাজত্ব। আর এডভান্স বাবদ হাতিয়েছে ৮/১০ কোটি টাকা। ইয়াছিন মিয়া তার মনমতো কোন ভাড়াটিয়াকে দোকানে রাখছে আবার তার পছন্দ না হলে উচ্ছেদ করে দিচ্ছে। তবে উচ্ছেদের সময় দোকানদারদের এডভান্সের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এমনকি মার্কেটে পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা সহ আনুসাঙ্গিক সুবিধা দোকান মালিকদের বুঝিয়ে দিচ্ছেনা। দোকান মালিকগন অন্যান্য এলাকার লোক হওয়ায় তার বাহিনীর ভয়ে কোন কথা বলতে পারছে না। তারা মিতালী মার্কেট সমিতির নিকট বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। মার্কেট সমিতি মিমাংসা করে দিবে বলে তাদেরকে আশ্বাস দিলেও তারাও ইয়াছিন বাহিনীর নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিতালী মার্কেট সমিতির এক সদস্য বলেন, কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ইয়াছিন মিয়া নিজেকে মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি দাবি করে আসছে। ইয়ছিনের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে আমরা অসহায়। প্রান হারানোর ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না।
দোকান মালিকগন উপায়ান্ত না দেখে তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সন্ত্রাসীদের মার্কেটে দেখতে পায়। পুলিশ দেখে ইয়াছিনের সহযোগি সন্ত্রাসী শিপন ও খোকন গংরা দৌড়ে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। দোকান মালিকদের অভিযোগটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস, আই সামসুল হক তদন্ত করছে বলে অভিযোগকারীদের একজন জালাল মিয়া জানায়। তবে অজ্ঞাত কারনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এখনও মামলা নেয়নি। সেভেন মার্ডার মামলার ২নং আসামী হাজী ইয়াছিন মিয়া চার্জসিট থেকে নাম কাটিয়ে পলাতক অবস্থা থেকে বাড়ী ফিরেই তার বাহিনী নিয়ে মাদানীনগর মাদ্রাসার জমি দখল করতে যায়। এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে ঘেরাও করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসী ইয়াছিন বাহিনী কিছু দিন পূর্বে সাহেব পাড়ায় কবীরের নির্মানাধীন বাড়ীতে এসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। বাড়ী ওয়ালা কবির হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করলে সন্ত্রাসী ইয়াছিন হাজীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সেভেন মার্ডার মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসামী আনোয়ার হোসেন (আসিক) গ্রেফতার হয়ে এখনও জেল হাজতে আছে। সন্ত্রাসী ইয়াসিনের ক্যাডার ইয়াবা ডিলার রাসেল মাসুম। রাসেল ইয়াছিন হাজীর ছত্রছয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জে একমাত্র ইয়াবা ডিলার। রাসেলের মাধ্যমে সারা নারায়নগঞ্জে ইয়াবা সাপ্লাই দেয়া হয়। এছাড়া রাসেল সাইনবোর্ড মিতালী মার্কেট এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকাতেও ইয়াবা সাপ্লাই করে। টেকনাফ থেকে সরাসরি ইয়াবা সাইনর্বোডে রাসেলের নিকট আসে এবং এখান থেকে সে তার নিয়োজিত লোকদের মাধ্যমে সানারপাড় হয়ে ডেমরার ষ্টাফ কোয়াটার দিয়ে গুলশান-বনানীসহ ঢাকার পূর্বাঞ্চলে সাপ্লাই করে থাকে। রাসেল ও আমিনুল ইসলাম রাজুকে এ সকল বিষয়ে সহযোগিতা করে। এছাড়া রাসেল ও শিপন সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ফ্লাটবাড়ীতে যুবতী মেয়েদের রেখে দেহ ব্যবসা করায়। এলাকাবাসীরা জানায় ইয়াছিন হাজী রাসেল ও আমিনুল ইসলাম রাজুকে কেস, মামলা ও পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করে দেয়। সিদ্ধিরগঞ্জের বিখ্যাত সন্ত্রাসী নুর হোসেন গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলে থাকায় ও সেভেন মার্ডার মামলায় তার ফাসির আদেশ হওয়ায় নুর হোসেনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের এলাকা এখন নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে ইয়াছিন মিয়া নিজেকে স্বঘোষিত মহারাজা বানিয়েছে। কমিশনার নজরুলকে হত্যা করায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হলে ইয়সিন বাহিনীর অনেকেই পালিয়ে থাকে। ঘটনাটি এখন আলোচণায় না থাকায় ইয়াসিন বাহিনী আবার মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। ফলে হাজী ইয়াসিন মিয়া বর্তমানে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে সকল এলাকার নিয়ন্ত্রন নেয়ার চেষ্টা করছে। কিছু কিছু এলাকা তিনি সরাসরি নিয়ন্ত্রন করেন। এলাকাবাসীর দাবী এখনই যদি ইয়াসিন হাজীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের লাগাম টেনে ধরা না হয় তাহলে সে অতি তাড়াতাড়ি নুর হোসেনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকেও ছাড়িয়ে যাবে। নারায়নগঞ্জের আওয়ামীলীগ যদি ইয়াছিন হাজীকে আরেকটু মাঠে থাকার সুযোগ দেয় তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর ফলাফল হাতেনাতে পাবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করে।
কে এই ইয়াছিন? -এখন নামধারী আওয়ামীলীগ নেতা হলে ২০০১ সালে ছিলেন জামাত বিএনপি নেতা। অভাবের তাড়নায় কাগজ টোকানো দিয়ে প্রখম জীবন শুরু করলেও এখন সন্ত্রাসী চাদাঁবাজির সুবাধে শত কোটি টাকার মালিক। শিক্ষার আলো নিজেকে ততটা শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে না পারলেও সন্ত্রাসীর জগতে সে আলোকিত নাম। সিদ্ধিরগঞ্জে তার অপরাধে বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটা সে একাই নিয়ন্ত্রন করে। এলাকায় গিয়ে খোজ খবর নিয়ে জানা যায় হাজী ইয়াসিন মিয়া নারায়নগঞ্জে সেভেন মার্ডার মামলার প্রথম এজাহারের দুই নম্বর আসামী ছিলেন। এমপি শমীম ওসমানের হস্তক্ষেপের বদৌলতে পুলিশের চার্জসিট থেকে তার নাম বাদ পড়ে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। এই মামলার কারনে সে বেশ কিছুদিন পলাতকও ছিল। মামলার চার্জসিট থেকে তার নাম বাদ পড়ার পর সে এলাকায় ফিরে এসে এক সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের একটি টিম সানারপাড়, মিজমিজি ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার বাহিনীর বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের তার কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। অনেকের মুখে শোনা যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বাদ দেয়া হবে। কিন্তু এখানেও এমপি শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে সে রক্ষা পেয়ে যায়।
সন্ত্রাসী ইয়াসিন মিতালী মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি দাবী করে দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর যাবৎ ওয়াকফকৃত জায়গায় মসজিদ নির্মান করা জায়গা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু সন্ত্রাসী ইয়াসিন নাঃগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম.শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে আদালতে মামলা থাকা অবস্থায় মসজিদটি অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় ইয়াসিনের দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তা থেকে মিতালী মার্কেটের ৬ হাজার ২শ ৩৬ জন দোকানদার এই সন্ত্রাসী ইয়াসিনের হাত থেকে মুক্তি চায়। উক্ত মার্কেটের ৬ হাজারের অধিক দোকানদার এমপি এ.কে.এম শামীম ওসমান সহ নারায়নগঞ্জ পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।