আমরা কি বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি

0
693

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। খুন ও ধর্ষণ বর্তমান সময়ে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আমরা কোন ভাবেই প্রত্যাশা করিনা। সংবাদপত্রের পাতা ও টেলিভিশনের পর্দা খুললেই দেখা যাচ্ছে খুন ও ধর্ষণের খবর। সর্বশেষ কুমিল্লায় মা-ছেলেসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার এক নির্মম ঘটনার খবর নাড়া দিয়েছে দেশেবাসী। কুমিল্লার দেবিদ্বারে এক ব্যক্তির দায়ের কোপে নিহত হয়েছেন তারা। এলোপাতাড়ি কোপের আঘাতে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। ঘটনার অব্যবহিত পর খুনিকে আটক করে জনতা। গণপিটুনিতে তারও মৃত্যু ঘটেছে। বস্তুত খুন ও ধর্ষণের সব ঘটনার বর্ণনা দিতে গেলে এই সম্পাদকীয়তে অন্য কিছু লেখার জায়গা থাকবে না।

কেন বাড়ছে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা। কেন ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর করা হল হত্যা? কেনই বা মাদ্রাসার শিক্ষক একের পর এক ধর্ষণ করছে শিশু অথবা কিশোরী? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সমাজের সর্বত্রই। তবে কি দেশের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? অনেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই অপরাধ বৃদ্ধির কারণ বলে থাকেন অনেকে। আসলেই কি শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধ দূর করতে? বস্তুত সমাজটা এখন এমন জায়গায় চলে গেছে, যেখানে শুধু বিচারব্যবস্থা কোনো কাজে আসবে না। পুরো বিষয়টি এক বড় গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এখন দরকার পড়েছে সমাজতত্ত্ববিদ-মনোবিজ্ঞানীসহ দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের সুচিন্তিত গবেষণা, যা মানুষের অপরাধপ্রবণতার কারণগুলো উদ্ঘাটন করে প্রতিকার-ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারবে। ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। হত্যাকারী ও যৌন নিপীড়ক মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে বিচারের সম্মুখীনও করা হয়েছে। কিন্তু থেমে নেই পুড়িয়ে হত্যা বা হত্যাচেষ্টা। রাফির ঘটনার পর আরও কয়েকটি পুড়িয়ে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাফির ঘটনা থেকে অপরাধীরা কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি। আমাদের কথা হল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধপ্রবণদের বিরুদ্ধেও সক্রিয় হতে হবে। অপরাধপ্রবণরা যাতে সত্যিকার অপরাধী হয়ে উঠতে না পারে, সেদিকটায় খেয়াল রাখলে সমাজ অনেক অঘটন থেকে বেঁচে যাবে, সন্দেহ নেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 5 =