ভূমিখেঁকো শাপলা সিটির এমডি বদরুদ্দোজার প্রতারণা

0
722

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: রাজধানীর মুগদা থানার অর্ন্তগত মান্ডা ইউনিয়নে মান্ডা আইডিয়াল সিটি নামে প্রতারণায় নেমেছে শাপলা সিটি লিমিটেড আবাসন কো¤পানি। পানিতে নিমজ্জিত এই প্রকল্পের জমিতে পাঁচ বছরে মাত্র ১১লাখ টাকায় ফ্লাটের মালিক এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতারক বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, অন্যের জমিতে রাতারাতি নিজেদের বড় বড় বিলবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে শাপলা সিটি।

কোনো গ্রাহক প্লট দেখতে চাইলে অপরের জায়গায় লাগানো নিজেদের বিলবোর্ড দেখিয়ে নিজেদের জমি হিসেবে চালিয়ে দিয়ে প্লট কেনাবেচা করছে কো¤পানিটি। যে সকল জমির মালিক বিদেশে অবস্থান করছে বা অন্যত্র অবস্থান করছে ঐ সকল মালিকের জমিতে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় জমি কেনার ও বায়নার কথা বলে বিলবোর্ড লাগিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে হরহামেশাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ১০-১৫টি বিলবোর্ড লাগানো রয়েছে। যা একসময় আরো বেশি ছিলো। তবে এলাকার স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক বিলবোর্ড উঠিয়ে ফেলে দিয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে লাগানো বিলবোর্ডগুলোর ৫-৬ টি রয়েছে সরকারি খাস জায়গার উপর। ওয়াসার জায়গা দখল করে মান্ডা-৪ নং পানির পা¤েপর উপরও লাগানো হয়েছে বড় একটি বিলবোর্ড। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে সকল জমিতে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে বা যে সকল জমিতে সমস্যা রয়েছে সেই জমিতে অল্প টাকায় বায়না করে আর বায়নার পরই জায়গাটি নিজেদের বলে জাহির করে থাকে। স্থানীয়দের ভাষায় এটি একটি ভুয়া কো¤পানি। শাপলা সিটির একজন পরিচালক জুলহাস ওরফে জুলু হোসেনের নেতৃত্বে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরীহদের জমি দখল করে থাকেন।

এলাকায় সবার কাছে জুলহাস একনামে সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত। ২০০৮ সালে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিলেন জুলু। সেই থেকেই সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। নিজেদের জমি রক্ষার্থে স্থানীয়রা নীলপদ্মা আবাসিক এলাকা ব্যক্তি মালিকানা প্লট নামে একটি প্রতিরোধ সংগঠন গড়ে তুলেন। কারো জমি দখল করলে এই সংগঠন তা মোকাবেলা করে। স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের বক্তব্যে জানা যায়, এলাকার এমন সমস্যা স্থানীয় এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীকেও জানানো হয়। এমপির নির্দেশে স্থানীয় মুগদা থানা থেকে সকল জমির মালিকদের কাগজ চাওয়া হলে শাপলা সিটি মাত্র আড়াই কাঠা জামির দলিল দেখাতে পারে। স্থানীয় ব্যক্তিরা স্বীকারও করেন মাত্র আড়াই কাঠা জায়গা শাপলা সিটির সঠিক জায়গা।

নীলপদ্মা আবাসিক এলাকা ব্যক্তি মালিকানা প্লট প্রতিরোধ সংগঠনের সভাপতি ও মান্ডা ইউনিয়ন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আখতার হোসেন বলেন, এখানে রাতের আঁধারে অপরের জমিতে সাইনবোর্ড দেয় এই প্রতারক কো¤পানি। এখানে তাদের জায়গা মাত্র আড়াই কাঠা। কেউ যেন প্লট কিনে প্রতারণার শিকার না হয় সে আশাই ব্যক্ত করেন তিনি। প্রতিরোধ সংগঠনের সেক্রেটারি মো: ফজলু রহমানও বলেন একই কথা।


স্থানীয় এমপি তাদের পক্ষে থাকলেও থানা পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান তাদের সহযোগিতা করছেন না বলেও জানান তারা। প্রতিরোধ সংগঠনের ক্যাশিয়ার ও স্থানীয় ব্যক্তি মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় দালাল ঠান্ডু, হায়াতদের সহযোগিতায় রাতে সাইনবোর্ড দেয় আবার দিনে জমির প্রকৃত মালিক তা উঠিয়ে ফেলে। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। স্থানীয়রা জানান, অনেক সময় নিজেদের জমিতে যেতেও বাধা দেয় স্থানীয় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত জুলুর লোকজন। নিজেদের জমিতে যাতায়াতের জন্য স্থানীয়ভাবে একটি সাকো তৈরি করলেও জুলুর লোকজন তা ভেঙে দেয়। ফলে মুগদা থানায় একটি জিডি করা হয়, জিডি নং ৬৯৬ তারিখ ১৯/১/১৪ ইং।


জানা যায়, ইতোপূর্বে মোহাম্মদ আলীর জায়গাটি দখল করার চেষ্টা চালায় শাপলা সিটির এমডি বদরুদ্দোজা। এছাড়াও ওয়ালিওল্লাহ, আজমেরি বেগম গং এর জায়গাতেও কো¤পানির বিলবোর্ড লাগনো হয়। আইডিয়াল মডেল স্কুলের শিক্ষকদের একটি জমিও দখল করে বিলবোর্ড দেয় এই কো¤পানি। যা নিয়ে প্রতিনিয়তই বিলবোর্ড লাগনো আর উচ্ছেদ চলছে। বিষয়গুলো জানতে আবাসন কো¤পানির প্রধান কার্যালয় গেলে কো¤পানির জেনারেল ম্যানেজার ১১ লাখ টাকায় কি করে ফ্লাট পাওয়া যায় নিজস্ব যুক্তিতে তার বিশদ ব্যাখা করেন। এছাড়া অভিযোগের কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

শাপলা সিটির জমির পরিমাণ কতটুকু এবং কতগুলো প্লট হবে জানতে চাইলে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ১৮০-২০০ বিঘা জমি হবে এবং প্লট ৮০০-৮৫০ হতে পারে। ওয়াসার জায়গা দখল নিয়ে এই ম্যানেজার বলেন, আমরা এখানে একটি বড় রাস্তা করবো তবে ওয়াসার অনুমতি নেব। জানা যায়, এই আবাসন কো¤পানিটি আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সদস্যভুক্ত নয়। অভিযোগ রয়েছে, মান্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমাস হোসেন বিশেষ সুবিধা নিয়ে কো¤পানির এমন অন্যায় মদদ দিয়ে যাচ্ছে। অপরের জমিতে শুধু বিজ্ঞাপন আর বিলবোর্ড দিয়ে প্রতারণার এমন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মান্ডা স্থানীয়বাসী। সেই সাথে স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রত্যাশা কেউ প্লট কেনার নামে প্রতারিত হওয়ার আগে যেন খোঁজ নেয় এমন নির্দেশনা দেন ভুক্তভোগিদের উদ্দেশ্যে। (চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten + 15 =