বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের জীবনের কিছু অধ্যায়

0
1070

তুখোড় বিতার্কিক, অঙ্কেও এক শতে এক শ। বড় হয়ে সফল ব্যবসায়ী হওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার। যে খাতেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এখন মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা তিনি। কথায় কথায় আজকের আয়োজন সাজানো হলো বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের জীবনের কিছু অধ্যায় নিয়ে।

শুরুতেই শুনতে চাই শৈশবের গল্প

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা করাচিতে। আমার বাবা (ফজলুর রহমান) তখন পাকিস্তানের মন্ত্রী। ওখানেই স্কুল পর্যন্ত পড়েছি। ম্যাট্রিক পর্যন্ত করাচিতে ছিলাম। তখন করাচিতে নামকরা দুটি স্কুল ছিল। একটি করাচি গ্রামার স্কুল। ওরা তখনকার দিনে সিনিয়র কেমব্রিজ (ও-লেভেল) পড়াত। তখনকার সিস্টেমে ম্যাট্রিক আর সিনিয়র কেমব্রিজ সমান ছিল। সিনিয়র কেমব্রিজ যদি করি, তাহলে ১৬ বছর বয়সে করব, আর ম্যাট্রিক ১৫ বছর বয়সে শেষ হবে। এক বছর আগে। যেহেতু মান একই, মা-বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যাট্রিকেই যাওয়া উচিত। তখন করাচি গ্রামার স্কুল থেকে সেইন্ট প্যাট্রিক্স স্কুলে চলে যাই। ওটাও খুব নামকরা ছিল।

ছুটির সময় ঢাকায় আসতাম। করাচি থেকে ঢাকায় আসতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগত। ঢাকায় এলে আমরা বাড়িতে (দোহার) যেতাম, তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। ১৯৬৬ সালে ঢাকায় আসি। নটর ডেম কলেজে আইএসসিতে ভর্তি হই। দুই বছর পর ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালে অনার্স পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ওই সময় আমি আবার করাচিতে চলে যাই। তারপর আন্দোলনে জড়িত হলাম। করাচিতে গিয়ে বিএ সম্পন্ন করলাম। ১৯৭২ সালের মে মাসে লন্ডন চলে গেলাম। সেখান থেকে পরে বাংলাদেশে চলে আসি।

পাকিস্তান ও নটর ডেমে যে সময়টা কাটিয়েছেন, তখনকার কোনো স্মৃতি…।

করাচিতে আমাদের একজন পারিবারিক পাকিস্তানি ডাক্তার ছিলেন। আমার বয়স তখন সাত-আট বছর। তখন পূর্ব পকিস্তান থেকে আমাদের ফল যেত। আম, কলা, আনারস এগুলো তখন পাকিস্তানে তেমন হতো না। আনারস তারা কোনো দিন দেখেইনি। আমার মনে আছে, একবার ঢাকা থেকে আনারস এসেছে। আমার মা আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন যারা করাচিতে আছেন সবাইকে বিতরণ করেছেন। আমাদের ডাক্তার যে ছিলেন তাঁর বাসায়ও মা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা ছোটবেলা থেকে আনারস খেয়ে আসছি। আমরা ধরে নিয়েছি তাঁরাও জানেন আনারস কিভাবে খেতে হয়। পরদিন ডাক্তার সাহেবের স্ত্রী ফোন দিয়ে বলেন, ‘এটা কী পাঠালেন! আমাদের সবার গলা ছিলে গেছে।’ তাঁরা আসলে আনারস ছিলতেই জানেন না। আনারসের চোখগুলো তো বের করতে হবে। তাঁরা আস্ত আনারসটাকে পিস পিস করে খেয়েছেন। তখন আম্মা বলেন, আপনারা কোনো দিন আনারস খাননি? তাঁরা বলেন, ‘না’। তখন আম্মা আনারস কেটে চোখ ফেলে পরিষ্কার করে সেদিনই আবার পাঠালেন। তারপর তাঁরা খুব খুশি। বললেন, এটা খুব মজার ফল। ছোটবেলায় আমাদের বাসায় এটা নিয়ে খুব হাসাহাসি হয়েছিল।

নটর ডেম কলেজে আমি ডিবেট করতাম। করাচিতে স্কুলে পড়ার সময়ও ডিবেট করেছি। নটর ডেমে আমার এক বছর সিনিয়র ছিলেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনিও ডিবেট করতেন। আমরা নটর ডেম কলেজের ডিবেটিং ক্লাবে সক্রিয় ছিলাম। ১৯৬৬ সালে যখন আমি ঢাকায় চলে আসি এবং নটর ডেমে ভর্তি হই, আমার বাবা সে বছরের ডিসেম্বরে মারা যান। ১৯৬৭ সালে আমরা কয়েজন বন্ধু মিলে ‘ওরায়ন’ নামে একটি সাহিত্য ক্লাব প্রতিষ্ঠা করি। বাবার স্মরণে ‘ফজলুর রহমান মেমোরিয়াল ইন্টার পাকিস্তান ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’ অর্গানাইজ করেছিলাম। একটা স্যুভেনির বের করে বিজ্ঞাপনও নিয়েছিলাম। ওটা গোল্ড কাপ, নাকি গোল্ড মেডেল ছিল ঠিক মনে নেই। পশ্চিম পাকিস্তানের নামকরা কলেজ থেকে আমরা দুজন করে ছাত্র এবং ছাত্রীদের এখান থেকে টিকিটের পয়সা দিয়ে এনে রাখার ব্যবস্থা করলাম। দেশ থেকে আমাদের ঢাকা কলেজ, নটর ডেম কলেজসহ আরো দু-তিনটা নামকরা কলেজ ছিল। চট্টগ্রাম থেকেও ছিল। তত্কালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আমরা এ আয়োজন করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল প্রতিবছরই এটা করব। কিন্তু তারপর আন্দোলন শুরু হয়ে গেল। করার সুযোগ হলো না। ওই এক বছরই করতে পেরেছিলাম।

প্রিয় শিক্ষক কারা ছিলেন? যাঁদের এখনো মনে পড়ে।

করাচিতে সেইন্ট প্যাট্রিক্স স্কুলে মি. ডিলিমা নামে আমার একজন খ্রিস্টান শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে অঙ্ক করাতেন। খুবই ভালো শিক্ষক ছিলেন। আমি ম্যাট্রিকে অঙ্কে ১০০-তে ১০০ পেয়েছি। পেয়েছি তাঁর কারণেই। তাঁর পড়ানোর স্টাইলটা ছিল দারুণ। আমি মনে মনেই অনেক গুণ ও ভাগ করতে পারি। ওই সময় তিনি যে থিওরিগুলো শিখিয়েছিলেন তা একেবারে মাথায় ঢুকে গেছে। আজও আমার অঙ্কজ্ঞান শক্তিশালী বলব, এর পেছনে তাঁর ভূমিকাই অনন্য।

আমার মনে আছে, যখন আমি সার্ক চেম্বারের সভাপতি, তখন পাকিস্তানে সার্ক চেম্বারের মিটিং হয়েছিল। আমি মিটিংয়ে গিয়েছিলাম করাচিতে। ডিলিমা স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। তখন তিনি অবসরে। তাঁকে খুঁজে বের করে দেখা করেছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলেন। নটর ডেম কলেজের ফাদাররা খুব ভালো ছিলেন। ফাদার টিম বায়োলজি পড়াতেন, ফাদার পিশাতো ফিজিকস পড়াতেন, আরেক শিক্ষক ছিলেন সোসানিয়া। তিনি ইংরেজি পড়াতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুই বছর ফিজিকস পড়েছি, তখন রফিক উল্লাহ স্যার ছিলেন। তিনি আমাদের কোয়ান্টাম মেকানিকস পড়াতেন। তাঁর ক্লাস আমরা খুবই উপভোগ করতাম। তখনকার দিনে কোয়ান্টাম মেকানিকস খুবই ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট ছিল। স্যার খুবই ভালো একজন শিক্ষক ছিলেন।

বেক্সিমকো গ্রুপের শুরু কিভাবে?

আমার বাবা একটা ছোট পাটকল করেছিলেন। সেটা উত্পাদনে যাওয়ার আগেই বাবা মারা যান। আমরা দুই ভাই। আমার বড় ভাই আমার চেয়ে ছয় বছরের বড়। তিনি তখন ফিজিকসে ফাইনাল ইয়ারে। ভাইয়া তখন গ্র্যাজুয়েশন করে জুট মিলটা দেখতে শুরু করলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর পাটকলগুলো সব জাতীয়করণ হয়ে গেল। তখন আমরা বেক্সিমকো প্রতিষ্ঠা করি। বেক্সিমকো হলো বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কম্পানি। এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের শর্ট করে বেক্সিমকো। স্বাধীনতার পরে ফরেন এক্সচেঞ্জে সমস্যা ছিল। তখন বারটার-ট্রেড (পণ্য বিনিময়) হতো। বিশেষ করে রাশিয়া, পোল্যান্ড, কিউবা সোসিয়ালিস্ট দেশ ছিল তাদের সঙ্গে সরকার টু সরকার বারটার হতো। আমাদের এখান থেকে তারা পাট, চা, চিংড়ি এসব নিত, আর ওদের দেশ থেকে ওষুধ বা অন্য কিছু আমরা আনতাম। যেটাই আনব সেটার পেমেন্ট পণ্য দিয়েই করব। তখন অনেক বারটার হতো সরকারি। আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিলাম আমরা বেসরকারি একটা বারটার ট্রেড করতে চাই। একই কনসেপ্ট। কিন্তু কোনো সরকারের সঙ্গে না করে হবে একটা বড় বিদেশি কম্পানির সঙ্গে। সুইজারল্যান্ডের অন্দ্রে অ্যান্ড সি নামে একটা বড় কম্পানি ছিল। তাদের সঙ্গে প্রথম প্রাইভেট বারটার করলাম। তারা ওষুধ আর কীটনাশক, তুলাজাতীয় পণ্য নেবে। আর পেমেন্ট হিসেবে আমরা চিংড়ি, চা ও পাট ছাড়া অন্য পণ্য দিয়েছি। পাট তো সবাই চায়। কিন্তু আমাদের পাটের অনুমতি দেয়নি সরকার। সরকার বলল, পাট ছাড়া অন্য পণ্য প্রমোট করতে। তখন আমরা অনেক পণ্য এক্সচেঞ্জ করেছি। আমার মনে আছে, ক্রাশড বোন (হাড়ের গুঁড়া) রপ্তানি করেছি জেলোটিনের জন্য। মধু রপ্তানি করেছি। সেফটি ম্যাচ, কেবল রপ্তানি করেছি। অন্য রকম সব আইটেম রপ্তানি করলাম এবং বিনিময়ে বেশির ভাগ সময়ই ওষুধ নিয়ে আসতাম। ইউরোপ-আমেরিকায়ও রপ্তানি করতাম। তখন প্রাইভেট বারটার ছিল বেক্সিমকোর মূল কাজ। পরে যখন বেসরকারি বিভিন্ন খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তখন নিজেরাই ওষুধের কারখানা করলাম। একসময় বেক্সিমকো চিংড়ি মাছের বড় রপ্তানিকারক ছিল। আমাদের চিংড়ি মাছ রপ্তানির প্রায় ৮-৯টা কারখানা ছিল একসময়। শুরু থেকেই বেক্সিমকোর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল রপ্তানি।

সময়ের পরিবর্তনে ব্যবসার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। আশির দশকে টেক্সটাইলেও এলেন আপনারা। ওই সময়টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত কী কী অর্জন ছিল?

আশির দশকে আমরা দুটি কাজ করেছিলাম। একটা ফার্মাসিউটিক্যাল, আরেকটা টেক্সটাইল। আর চিংড়ি তো ছিলই। সবার আগে আমি বাংলাদেশে পারসোনাল কম্পিউটার এনেছি। আগে থেকেই প্রযুক্তির বিষয়ে খুব ইন্টারেস্টেড ছিলাম। আমার মনে আছে, যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমার ভাই জাপানে গিয়েছিলেন। তিনি জাপান থেকে একটা ক্যালকুলেটর এনেছিলেন। শার্প কম্পানির। ক্যালকুলেটরটি বিশাল হলেও এতে শুধু যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করা যেত। আমি ক্যালকুলেটরটি নিয়ে ফিজিকস ডিপার্টমেন্টে যাই। ছাত্ররা দেখে অবাক। অ্যাপেল কম্পিউটারেরও প্রথম ডিলারশিপ আমরা নিলাম। ডেল কম্পিউটারেরও ডিলারশিপ প্রথম নিয়েছিল বেক্সিমকো কম্পিউটার। আশির দশকের শেষের দিকে ব্যাংকগুলোতে কার্ড সিস্টেম ছিল, এনসিআর মেশিনও ছিল। আমরা বেক্সিকো কম্পিউটার থেকে বাংলাদেশে প্রথম ব্যাংকিং সফটওয়্যার করি, যেটার নাম দিয়েছিলাম বেক্সিব্যাংক। আমরা সব সময় প্রযুক্তির সঙ্গে, কমিউনিকেশন সিস্টেমের সঙ্গে ছিলাম। বেক্সিমকো প্রথম বেসরকারি খাতের কম্পানি, যারা বিদেশে শাখা খোলার অনুমতি পায়। তখন লন্ডনের সঙ্গে আমরা টেলিপ্রিন্টার (যেটাকে বলে লিজ লাইন নিয়েছিলাম) সব সময় অন থাকত। যখন ফ্যাক্স এলো তখন ফ্যাক্সের অনুমতি নিতে গিয়ে আমার ১৮-১৯টা স্বাক্ষর লেগেছে। শেষে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদের স্বাক্ষরও লেগেছিল। সরকারের ভয় ছিল যদি বেসরকারি খাতে ফ্যাক্স চলে আসে, দেশের গোপন তথ্য সব পাচার হয়ে যাবে। অনেক তদবির করে ফ্যাক্সের অনুমতি পেয়েছিলাম।

এরপর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করলাম। এবি ব্যাংকের স্পন্সর হলাম। আইএফআইসি করলাম। ট্রেড পলিটিকস আরো আগেই শুরু করেছিলাম। ১৯৮৯ সালে মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হলাম। তারপর এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ডটা আমার। ওষুধশিল্প সমিতিতে অনেক দিন ছিলাম। তারপর বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনে। যখন বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেটাও বেক্সিমকো অফিসে বসে হয়েছে।

যে খাতেই হাত দিয়েছেন সফল হয়েছেন। এত এত সফলতার মূল শক্তিটা কী?

২০০৮ সালের কথা। বিএনপির পাঁচ বছর আমাদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর। ২০০৮ সালে আমি যখন জেল থেকে বের হয়েছি, তখন আমার সঙ্গে দেখা করলেন ব্রিগেডিয়ার (চাকরিচ্যুত) আমিন। তিনি আমাকে বললেন, আপনাদের অবস্থা খুব নাজুক, এটা আমরা দেখছি। আপনাদের এখানে তো অনেক লোকজন কাজ করে। আমি বললাম, আমাকে জেলে নেওয়ার আগে এটা চিন্তা করা উচিত ছিল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে বেক্সিমকোর কী হবে? তখন আমি বলেছি, ইনশাআল্লাহ, আমি বিশ্বাস করি আমরা থাকতে পারব।

বেক্সিমকোর মূল শক্তি চারটি। প্রথমত, মান নিয়ে আমরা কোনো আপস করি না। সেরা প্রযুক্তিটাই ব্যবহার করি। আমি সব সময় বলেছি, আমি যদি চোখ বন্ধ করে আপনাকে আমাদের কারখানায় নিয়ে যাই, তারপর চোখ খুলতে বলি, আপনি বলতে পারবেন না আপনি বাংলাদেশে আছেন। এ জন্যই আমরা ইউএসএ, এফডিএ সব অ্যাপ্রুভাল পেয়েছি। আমাদের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি কম্পানি, যারা আমেরিকায় ওষুধ রপ্তানি করছে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের ব্র্যান্ড। বেক্সিমকোর ব্র্যান্ড খুব শক্তিশালী। নাপা ওষুধটার কথাই ধরুন। এই ব্র্যান্ডটা তো এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে অনেক খাটুনি আছে। বেক্সিমকোর কথা বললেই সবাই বুঝে যায় এটার মান ভালো, এটার সব কিছু ভালো। সুতরাং ব্র্যান্ড ভ্যালু আছে। তৃতীয়ত, কাস্টমার বেইস। মার্কেটিংয়ের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাস্টমার বেইসটা বেশ শক্তিশালী। চতুর্থ শক্তি হলো আমাদের কর্মীরা। আমাদের এখানে প্রায় ৬০-৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। আমার বড় ভাই, আমি, তাঁর ছেলে এবং আমার ছেলে। আর এর বাইরে যদি আমার কোনো আত্মীয় এখানে থেকে থাকে তবে সে তার নিজের যোগ্যতায় নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই এসেছে। আমার আত্মীয় হিসেবে আমি কাউকে চাকরি দিইনি। আমাদের এই হাজার হাজার কর্মীর জন্যই এই বেক্সিমকো। তখন আমি ব্রিগেডিয়ার (চাকরিচ্যুত) আমিনকে বললাম, ইনশাআল্লাহ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব, যদিও আট বছরে আমাদের প্রায় শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

নব্বইয়ের দশকে আমরা মিডিয়ায় গিয়েছি। যখন আমরা ইনডিপেনডেন্ট খবরের কাগজ বের করি, তখন কোনো রঙিন কাগজ ছিল না। ইনডিপেনডেন্ট প্রথম ১৬ পৃষ্ঠার রঙিন পেপার।

দীর্ঘদিনের সফল ব্যবসায়ী। এখন মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। দুটির সংমিশ্রণ কিভাবে দেখছেন?

এ দুটির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি সংসদ সদস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সেটা তো অবশ্যই বিরাট দায়িত্ব এবং অনেক সম্মানও তিনি দিয়েছেন। তবে আমি মনে করি আমার কাছে বড় জিনিসটা হলো আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পেরেছি।

আমার রাজনীতিতে অনেক শখ ছিল। ১৯৯৬ সালে যখন নির্বাচন হয় তখন আমি নিজে ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধ আন্দোলন’ নামে একটি রাজনৈতিক দল করি। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তুমি ভুল করছ। তুমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে করো। রাজনৈতিক দল নিজে করা এত সোজা না। তোমার জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। তিনি আমাকে ধানমণ্ডি থেকে টিকিট দিতে চেয়েছিলেন। আমি তখন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। আন্দোলন করেছি। বয়সও কম ছিল। ভাবলাম, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকব না। ঠিকই আমার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে দোহার থেকে প্রার্থী হই। আমি ৮০০ কিংবা হাজার ভোটে হেরেছি। আমার ব্যালট পেপারগুলো রাস্তায় পাওয়া গিয়েছিল পরে। এখন এই যে এমপি হতে পেরেছি, এটা আমার বড় পাওয়া। আর এখন ব্যবসার সঙ্গে আমি অতটা জড়িত না। যেহেতু আমার ছেলে, বড় ভাই, বড় ভাইয়ের ছেলে আছে, তারা দেখাশোনা করছে। আমার জন্য বড় বিষয় এখন এলাকার জন্য কাজ করা। আমি চাই আমার দোহার-নবাবগঞ্জ বাংলাদেশের মডেল উপজেলা হবে।

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করেছেন। এলাকায় একটি সংগঠন আছে আপনার, ওটা শিশুদের জন্যও কাজ করে। সামনের দিনগুলোতে আর কী কী করার ইচ্ছা?

আমার অনেক প্ল্যান আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্রাম হবে শহরের মতো। এখানে গ্রাম শহর হয়ে যাবে তা নয়। গ্রামের যে ঐতিহ্য, গ্রামের যে পরিবেশ সেটা বহাল রাখতে হবে। শহরের যে সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। সরকারের তরফ থেকে সারা বাংলাদেশে এটা হচ্ছে। কিন্তু আমি আমার এলাকার জন্য কিছু কাজ করতে চাই। আমি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলটা ব্যবহার করতে চাই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতসহ অনেক খাতেই এটা ব্যবহার করা যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর কাজ করতে চাই।

২০১১ সালে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার ম্যাচটার আয়োজক ছিলেন। সামনে এমন কিছু আশা করতে পারি আমরা?

আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা চেষ্টা করছি প্রিমিয়ার লিগের নামকরা দুটি দলকে নিয়ে একটি এক্সিবিশন ফুটবল ম্যাচ করা যায় কি না। এখনো ঠিক করিনি। ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তবে ইনশাআল্লাহ একটা বড় ফুটবল ম্যাচ করব বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে।

শেখ কামাল যখন আবাহনী করল তখন শুধু মোহামেডান ছিল। কামাল বলল, ক্রীড়ায় এগিয়ে যেতে হলে প্রতিযোগিতা দরকার। মোহামেডানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য তখন দ্বিতীয় কোনো ক্লাব নেই। ১৯৭২ সালে আমরা আবাহনী করি। কামালের যে চিন্তাটা ছিল ওটার ফল কিন্তু আমরা এখন পাচ্ছি।

আত্মজীবনী লিখছেন?

আমার এখন কাজ করার সময়, লেখার সময় না।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ?

আমাকে এ প্রশ্ন অনেকে করে। আমি একটা সরল উত্তর দিই। ইংরেজিতে বলি—‘দেয়ার ইজ নো শর্টকাট টু সাকসেস’। সফলতা অর্জন করতে হলে অনেক খাটতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। মনটাকে খোলা রাখতে হবে। সব সময় নতুন সৃষ্টিশীল চিন্তা করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 3 =