পৃথিবীতে ভাল ও সৎ মানুষ আছে বলে দুনিয়াটা টিকে আছে

0
869

বাজিতপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামের হতদরিদ্র গার্মেন্ট কর্মী মোছা. ফজিলা খাতুন পরিবার পরিজনদের সাথে ঈদ করতে এক বছর পর ঢাকা থেকে ছুটে আসেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! ভুলে সাথে আনা টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য মালামাল সমেত ব্যাগটিই তিনি ফেলে যান সিএনজিচালিত অটোরিকশায়।

ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে বাড়ি পৌঁছে ফজিলা খাতুনের তখন এক দুঃসহ অবস্থা। ব্যাগটিতে ছিল তার দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ৪৫ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন, পরিবার-পরিজনের জন্য কেনা ঈদের কাপড়-চোপড়সহ আরো কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র। সবমিলিয়ে লাখ টাকার জিনিসপত্র ছিল ব্যাগটিতে।

সিএনজিতে মেয়ে ফজিলা খাতুন টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য মালামাল ভর্তি ব্যাগটি ফেলে যাওয়ায় ফজিলার হতদরিদ্র রিক্সাচালক বাবা নির্বাক হয়ে যান। সহায় সম্বলহীন মায়ের কান্না আর বিলাপে জড়ো হন গ্রামবাসী। দিশেহারা হয়ে পড়েন ফজিলাও।

ঈদ করতে না পারার আশঙ্কা ভর করে পরিবারটিতে। আত্মীয়-স্বজন আর গ্রামবাসীর সান্ত্বনা আর আফসোস, কোন কিছুই ফজিলার পরিবারের এই বেদনায় প্রলেপ দিতে পারছিল না।

এরই মাঝে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য মালামাল ভর্তি ফজিলার ব্যাগটি নিয়ে হাজির হন সিএনজির চালক মো. হারুন মিয়া। তার সাথে সিএনজিযাত্রী পাঁচ যুবক। তারা ব্যাগটি তুলে দেন ফজিলা খাতুনের হাতে। সবকিছু ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতেও পেলেন।

সিএনজিতে ফেলে যাওয়া ব্যাগটি পেয়ে ফজিলা তখন আত্মহারা। ব্যাগ খুলে দেখতে পান, তার নগদ ৪৫ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, পরিবার-পরিজনের জন্য কেনা ঈদের কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সবই ঠিক আছে।

হারানো ব্যাগ ও ব্যাগের সব কিছু ফিরে পেয়ে ফজিলা ও তার মা-বাবা,আনন্দে কেঁদে ফেলেন। সিএনজি চালক এবং সিএনজি যাত্রী যুবকদের এমন সততায় মুগ্ধ পরিবারটি ও শাহপুর গ্রামবাসী। তাদের এই সততায় গ্রামবাসীর প্রশংসার যেন শেষ ছিল না!

সিএনজিযাত্রী শেখ বোরহান উদ্দিন পরান জানান, সিএনজি চালক মো. হারুন মিয়ার বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে। যাত্রী নামিয়ে মঙ্গলবার (৪ জুন) রাত ১টার দিকে হারুন মিয়া সুলতানপুর বাজারে আসেন।তিনি তার সিএনজির পিছনে একটি ব্যাগ দেখতে পান। হারুন মিয়া ব্যাগটি দেখে সন্দেহ হয়, কোন যাত্রী হয়তো ভুলে ব্যাগটি ফেলে রেখে গেছেন। এ সময় তার পাশে শেখ বোরহান উদ্দিন পরানসহ চার থেকে পাঁচ জন্য এলাকার  যুবক ছিল।

তাদেরকে নিয়ে সিএনজি চালক মো. হারুন মিয়া ব্যাগটি খুলে দেখতে পান নতুন ঈদের জামা কাপড়। তখন সিএনজি চালক মো. হারুন মিয়াকে যুবকেরা বলেন, ব্যাগটির মধ্যে টাকাও থাকতে পারে। তারপর ব্যাগটি ভাল করে পরীক্ষা করা হয়। তখন ব্যাগটিতে দুইটি বক্স পাওয়া যাই।

বক্স দু’টি খোলার পর দেখা যায়, অনেক গুলো টাকা, সাথে কিছু স্বর্ণ অলংকার, একটি মোবাইল ফোন। টাকাগুলো গুণে দেখা যায় ৪৫ হাজার টাকা। এছাড়া ঈদের নতুন কাপড় ছাড়াও কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ টাকার সমপরিমাণ হবে বলে তারা ধারণা করেন।

তারপর সুলতানপুর গ্রামের পাঁচ যুবক সাজ্জাদ হোসেন, হৃদয় মিয়া, শেখ বোরহান উদ্দিন পরান, সুমন ও অসীম মিয়া সিএনজি চালক মো. হারুন মিয়াকে নিয়ে শাহপুর গ্রামে যান। সেখানে ফজিলা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে তারা দেখেন, মেয়েটির বাবা  হতদরিদ্র রিক্সাচালক এবং মা কান্নায় বার বার মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। এবার বুঝি আমাদের ঈদ করা হবে না বলে বিলাপ করছেন মেয়েটির মা। মেয়েটিও প্রায় দিশেহারা।

তারা গিয়ে মেয়েটির হাতে ব্যাগটি তুলে দিতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। হারানো ব্যাগ ও ব্যাগের সকল কিছু ফিরে পেয়ে যেন হাতে আসমান পায় পরিবারটি। আনন্দে উদ্বেলিত হয় পরিবারের সদস্যরা। পৃথিবীতে ভাল ও সৎ মানুষ আছে বলে দুনিয়াটা টিকে আছে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 − 14 =