মিন্নির স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রক্রিয়াটি বেআইনি

0
1374

দেশে খুন ও নৃসংশতা পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব খুন ও নৃসংশতার মূল আসামি ধরা পড়ছে না। আবার ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা হলেও ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আদালতে জবানবন্দি দেয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে।

অভিযোগ উঠছে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার জন্যই মিন্নির পক্ষে আদালতে কোন আইনজীবী দাঁড়াতে দেওয়া হয় নাই। তাছাড়া টানা পাঁচ দিন রিমান্ডের মাত্র দুই দিনের মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করার বিষয়টি অস্বাভাবিক ও বেআইনি বলে অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলছেন স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য আসামিকে স্পষ্টতই চাপ প্রয়োগ করা হয় ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। এই প্রক্রিয়া বেআইনি। আবার রিমান্ডের আগে-পরে আসামিকে আইনজীবীর সাথে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয় না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। মিন্নির বেলায় একই ঘটনা ঘটেছে। মিন্নির বাবা আদালত প্রাঙ্গনে চিৎকার করে এসবের প্রতিবাদ করেন। মিন্নিকে গ্রেপ্তারের আগে প্রায় ১২ ঘন্টা পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

রিমান্ডের আগেই তিনি পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে রিমান্ডের আগেই যদি তিনি স্বীকার করে থাকেন তবে তাকে রিমান্ডে নেয় হলো কেন? পুলিশের ডিআইজ মিজনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা হয়েছে। তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুুমতি দেয়া হয়েছে। অথচ একজন নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা বা বেআইনি প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করা কতটুকু যুক্তিসংগত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট কোন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন এক রায়ে।

সে রায় ২০১৬ সালের মে বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই নির্দেশনায় বলা আছে, আসামিকে কারাগারের মধ্যে একটি কাঁচের দেয়ালঘেরা কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে আইনজীবী থাকবেন। এছাড়া আসামির স্বজনরাও থাকবে। অথচ হাইকোর্টের এই প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের কোন প্রচলন এই দেশে নেই। অধিকন্ত মিন্নির ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগই হয়নি। কাজেই বলা যায় তার স্বীকারোক্তি আদায় সম্পুর্ন বেআইনি। এভাবে অন্যায়ের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ভিকটিম মিন্নি কতটুকু বিচার পাবেন তা সময়েই বুঝা যাবে। আমারা আশা করি মিন্নির মত অবিচারের শিকার আর কোন নারী যেন না হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one + four =