Site icon Aparadh Bichitra

বেড়িয়ে এলো রেনু বেগম হ’ত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য

উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী অভিভাবক রিয়াই তাসলিমা বেগম রেনুকে প্রথমে ছেলে’ধরা বলে সন্দেহ করেছিলেন। আরো চার-পাঁচ জন নারী অভিভাবক তার সঙ্গে ছিলেন। তারাই ছেলে’ধরা বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে স্কুলের একজন শিক্ষক ও অফিস সহকারী রেনুকে প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগমের কাছে নিয়ে যান।

ওই সময় রিয়াসহ অন্য নারী অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষিকার কাছে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আপা ওই মহিলা ছেলে’ধরা। ওরে আমাদের কাছে দিয়া দ্যান।’

এ সময় প্রধান শিক্ষিকা বলেন তাকে পুলিশে দেয়া হোক, পুলিশ বিষয়টির সমাধান করবে। এ কথা শুনেও তারা রেনু বেগমকে মারতে উদ্যত হন। প্রধান শিক্ষিকা রিয়াকে দোতালার একটি কক্ষে তালাব’দ্ধ করে রাখেন। এই খবর পেয়ে রিয়াসহ অনেকেই বিষয়টি মোবাইল ফোনে কয়েকজনকে খবর দেন। ৪/৫ মিনিটের মধ্যে স্কুলের ভেতর শত শত মানুষ ঢুকতে থাকে। ওই সময় হৃদয় ও জাফর পাটোয়ারিসহ এলাকাবাসী দরজার তালা ভেঙে ফেলে। পরে রিয়াসহ অন্য নারী অভিভাবকরা কক্ষে ঢুকে রেনুকে টেনেহিঁ’চড়ে নিচে নামাতে থাকেন এবং স্কুলের পাকা মেঝেতে ফেলে রেনুকে কিল, ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন। পরে রেনুকে নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে এলে সেখানে পুরুষরা লাঠি নিয়ে হা’মলে পড়ে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মিল্লাত হোসেনের আদা’লতে রিয়া ওরফে ময়না স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর বাড্ডার মিশ্রিটোলা এলাকার একতা হাউজিংয়ের ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফ’তার করা হয়। রিয়া আশেপাশের বাড়িতে ছুটা বুয়া (গৃহকর্মী) হিসেবে কাজ করে। তার স্বামী সাগর হোসেন রবিন পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে। জুনায়েদ নামে রিয়ার ছয় বছরের সন্তান ওই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। এছাড়া এই ঘটনায় গ্রেফ’তার হূদয় একই আদালতে স্বীকা’রোক্তিমূলক জবানব’ন্দী দিয়েছেন। পাঁচ দিনের রিমা’ন্ডের তৃতীয় দিন হূদয় আদালতে এ স্বীকারোক্তি’মূলক জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (ত’দন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রেফ’তারকৃত রিয়া গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূ’লক জবানব’ন্দি দেন। এছাড়া, গণ’পিটুনিতে নেতৃত্ব দেয়া হৃদয়ও একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূ’লক জবান’বন্দী দেয়। জবানবন্দী দেয়ার পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বাড্ডা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, রেনুকে পি’টিয়ে হ’ত্যার ঘটনায় ওয়াসিম নামে এক কিশোরসহ ১৪ জনকে গ্রে’ফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হৃদয়, জাফর পাটোয়ারি ও রিয়া হ’ত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানব’ন্দি দিয়েছে। ওয়াসিমকে টঙ্গী কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১০ জনের মধ্যে শাহীন, বাচ্চু মিয়া, বাপ্পী, কামাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদকে চার দিন করে এবং মুরাদ, সোহেল রানা, বিল্লাল হোসেন, আসাদুল ইসলাম ও রাজু আহমেদকে তিন দিন করে রিমা’ন্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গণপিটুনির ভিডিও ফুটেজে আরো বেশ কয়েকজন নারীকে হ’ত্যার ঘটনায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদেরকেও শনাক্ত করার কাজ চলছে।