দশমিনায় এডিপির বরাদ্ধকৃত কোটি টাকার লোপাট: আগুল ফুলে কলা গাছ ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার

1
569

ফয়েজ আহমেদ,দশমিনা প্রদিনিধি: পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য এডিপি বরাদ্ধকৃত ০১ কোটি ০৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৫০০ শত টাকার কাজের নামে হয়েছে ভাগবাটয়ারা । বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। যানাগেছে এসকল প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে তুলে রাখা হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে এসকল প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, কেন তা সম্ভব হয়নি ,এমন প্রশ্নের জবাবে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাবা শুভ্রা দাস এ প্রতিনিধিকে বলেন,আমরা যথা সময় বরাদ্ধ হাতে না পাওয়অয় কিছুটা বিলম্ভ হয়েছে। তবে বিল এখও ছাড়িনি। আমার হাতে অনেক কাজের চাপ থাকায় সকল প্রকল্প তদারকিও করতে পারি নাই। আমি দুই এক দিনের মধ্যে সব গুলো প্রজেক্ট ভিজিট করবো। এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, দশমিনা উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)২০১৮-১৯ অর্থ বছরের কাজের অগ্রগতি ও মুল্যায়ন সীটে জুন/২০১৯ মাসিক প্রতিবেদনে এডিপি’র ব্যায়িত ০১ কোটি ০৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৫০০ শত টাকার কাজ ১০০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে দেখানো দাবী করেন।

ঐ জুন /২০১৯ মাসের প্রতিবেদনের সুত্র ধরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দশমিনা উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী(এডিপি)২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য মোট প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয়েছে ০১ কোটি ৬১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। যার মধ্য থেকে চুক্তি মূল্য বা খরচ দেখানো হয়েছে ০১ কোটি ০৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৫০০ শত টাকা। অবশিষ্ট ২৭ লক্ষ ১৪ হাজার ৫০০ শত টাকা কোথায় ? এমন প্রশ্নের জবাবে দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এ প্রতিনিধিকে বলেন,এটা ৫% লেস ধরা হয়েছে। তাহলেতো এ পরিমান টাকা সরকারী কোষাগারে থাকার কথা ? প্রশ্ন শুনে ঐ প্রকৌশলী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, অফিশিয়াল এত কিছু জানার একতিয়ার আপনাদের নাই। বেশতো আমাদেরকে দুই একটা কাজের ষ্টিমেট দিন,আমরা একটু দেখে আসি। অমনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন,বললামতো চেয়ারম্যান স্যার সবগুলো প্রজেক্ট দেখেছেন।

এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত কল্পে,এ প্রকল্পের আওতায় মোট ২০টি গভীর নলকুপ স্থাপন করার কথা রয়েছে। যার এক একটি টিউবওয়েলের জন্য বরাদ্ধ ৮৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। অথচ ঐ সকল টিউবওয়েল গুলো বাজারের সবচেয়ে নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অধিকাংশ টিউবওয়েলেরই বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেনা বলেও দাবী সুফল ভোগীদের। বাধাঁনো হয়নি কোন টিউবওয়েলের পাদদেশ বা প্লাট ফর্ম। কাঠের বা বাঁশের খুটি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে এ সকল লক্ষাধীক টাকার অতি জনগুরুত্বপুর্ন টিউবওয়েল গুলি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগীরা বলেন, এত টাকা বরাদ্ধ থাকা সত্যেও সুফল ভোগীদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রতি টিউবওয়েলে আরো ২০-২৫ হাজার টাকা। যা সরেজমিনে তদন্ত করলে সকল অভিযোগের সত্যতার প্রমান পাওয়া যাবে। যেমন- ০৩ নং প্যাকেজের আওতায় প্রকল্প নং ০৯ – একজন টিউবওয়েল গ্রাহক আলীপুরা ইউনিয়নের ০৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা চুন্নু মাষ্টার। একমাত্র পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল বরাদ্ধ। জানাগেছে চুন্নু মাষ্টার একটি গরু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন চেয়ারম্যান পতিœকে। প্রকল্প নং-১৫। যৌতা ওহাব খানের বাড়ীতে গভীর নলকুপ স্থাপন। নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে নলকুপটি এমন একটি যায়গায় স্থাপন করা হয়েছে,সেখানে প্রতিবেশীতো দুরের কথা,বাড়ীর লোকদেরও যাবার কোন সুযোগ নাই।

অথচ টিউবওয়েলটি এক লক্ষ টাকা ব্যায়ে এডিপি’র অর্থায়নে স্থাপিত। যা থাকার কথা সম্পুর্ন উন্মুক্ত স্থানে। বাড়ীর লোকজন জানালেন,এই বাড়ীতে আর কোন টিউবওয়েল নাথাকায় অনেক দুর থেকে তাদেরকে টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যে সমস্ত মালামাল দিয়ে বসানো হচ্ছে টিউবওয়েল গুলো , কত দাম হতে পারে ? আসুন আমরা একজন হার্ডওয়ার এন্ড স্যানেটারী ব্যাবসায়ীর ভাষ্য মতে তা পরিস্কার যেনে নেই। পিভিসি পাইপ ৭৫০ ফুট থেকে ৮২০ ফুট।যার মূল্য প্রতিটি (১৫ফুট পাইপ ২৬০ টাকা হরে) ১৩৫২০ টাকা থেকে ১৫৮২০ টাকা,একটি আরএফএল হেড,মূল্য ২৫০০টাকা,দুইটি নেট বা ফিল্টার ১০০০টাকা। বসানো খরচ ২০ হাজার টাকা ,সর্ব মোট ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ। কখন এ রেট ৪৫ হাজার টাকার উপরে উঠেনি। অথচ বরাদ্ধ এক লক্ষ টাকা। এখানে লোপাট হয়েছে প্রতি টিউবওয়েল থেকে ৫৫ হাজার এবং উৎকোচের ২০ হাজার অর্থাৎ ৭৫ হাজার টাকা। এদিকে বেশ কিছু প্রকল্পের নাম আছে কাজ নাই, এরকম প্রকল্প আছে বেশ কয়েকটি। প্রকল্প নং- ২৭/ দশমিনা বিএম স্কুল মেরামত এবং সং¯কার এর সাথে উত্তর আদমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ভিটির টিন সেট ঘর মেরামত। বরাদ্ধ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে বিএম স্কুলের ২২ জুলাই ২০১৯ খ্রীঃ তারিখ পর্যন্ত কোন কাজই করা হয়নি। অথচ ২৬ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। জানাগেছে বরাদ্ধকৃত সমুদয় টাকা উত্তোলন করে রাখা হয়েছে,সময় সুযোগমত কাজ করানো হবে মর্মে। এ প্রসংগে দশমিনা ইউএনও শুভ্রা দাস বলেন,এ প্রকল্পে বিএম স্কুলের জন্য মাত্র ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।বাকী তিন লক্ষ টাকাই ঐ স্কুলের জন্য।দেখা গেছে উত্তর আদমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ভিটির টিন সেট ঘর খানা,যার দৈর্ঘ্য ৫০ফুট দৈর্ঘ এবং ১৮ ফুট প্রস্থ উচ্চতা ৭ফুট একখানা টিনসেট ঘরের লিংটিং পর্যন্ত ইটের গাথনী করা হয়েছে। স্থানীয়রা যার আনুমানিক ব্যায় ধরেছেন সর্বচ্চ ৭০ হাজার টাকা। বাকী ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার কাজ কোথায় হবে, তাহা জানাতে পারেনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক।

অত্র নং প্রকল্পের ঠিকাদার কাগজে-কলমে মোঃ আমিনুল ইসলামকে দেখালেও , সে এ প্রকল্প সম্পর্কে আদৌ কিছুই জানেন না। কাজ করাচ্ছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ভাতিজা মোঃ কামরুল ইসলাম। প্রকল্প নং-০৫,দশমিনা উপজেলার যৌতা এবং খলিসাখালীর মধ্যবর্তি গুলির খালের উপর পুল স্থানান্তর । প্রাক্কলিত মূল্য ৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। অভিজ্ঞ জনেরা বলছেন,এ পরিমান অর্থ দ্বারা ঐ খালের উপর একটি সম্পুর্ন নতুন ব্রীজ করা যেত। অনুরুপ আর একটি প্রকল্প নং -০৬। চরহোসনাবাদ খাদ্য গুদামের সামনের থেকে চরহোসনাবাদ বাজার ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা সিসি করন। ২০০ গজেরও কম এবং ৪ ফুট চওড়া তিন ইঞ্চি সিসি করন ব্যায় ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫০০ শত টাকা। প্রকল্প নং০৭। দশমিনা মাছ বাজারের সিরি,লেট্রিন নির্মান এবং নতুন ব্রীজ এপ্রোজ নির্মান । বরাদ্ধ ২ লক্ষ টাকা। সর্বচ্চো ৫০ হাজার টাকার কাজ হয়নি এ প্রকল্পে। এভাবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)এর ১ কোটি ০৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৫০০ শত টাকার ৬০ ভাগই লোপাট হয়েছে বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।

বোদ্ধারা মনে করেন,এভাবে সরকারী অর্থ উন্নয়নের নামে লোপাট হতে থাকলে,মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ভিষণ ২০২১ কিংবা ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ,তা কখনই সম্ভব নয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক এ কসল দূর্নীতিবাজদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × four =