বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

0
821

আখতার রহমান, ব্যুরো প্রধান, রাজশাহীঃ
‘রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ গুলোর মধ্যে পাবলিককে কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে অর্থ উত্তোলন, শ্রমিকের মজুরী আত্মসাৎ, হাসপাতালের আসবাবপত্র ক্রয় ও বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয়-মেরামত নিয়ে দুর্নীতি, ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে পথ্য সরবরাহকারীর নিকট হতে অর্থ লেনদেন, ওষুধ ও প্রতিষেধক সহ অন্যান্য বিভিন্ন খাতে ভুয়া ভাউচার তৈরী করে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালনায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।


হাসপাতালের একাধিক সূত্রমতে জানা যায়, এক বছর আগে অবসর নেয়া হিসাবরক্ষক মজিবুর রহমান এখনও সরকারি কোয়ার্টার দখল করে বহাল তবিয়তে হিসাব কার্য পরিচালনা করছেন। পাবনা থেকে সাত মাস আগে একজন হিসাবরক্ষককে নিয়োগ দেয়া হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে মতনৈক্য হওয়ায় কয়েকদিন পর তিনি বদলি হয়ে চলে যান। এরপর থেকে কাগজে-কলমে একজন মহিলাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও হিসাবের মূল কাজ করছেন মজিবুর রহমান।


বাঘা পৌরসভার একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন ডাঃ সিরাজুল ইসলামের নানা অপকর্ম ও অর্থ আত্বসাতের কথা। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাঃ সিরাজুল ইসলাম যোগদানের আগে এখানে ১৫ জন ডাক্তার থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র দু’জন। সরকারী নিয়ম থাকিলেও তিনি নিজে হাসপাতাল কোয়ার্টারে থাকেন না। পার্শ্ববর্তী চারঘাট উপজেলায় নিজের বাড়ি থেকে অফিস করেন। মাঝে মধ্যে শহর থেকে এখানে কোন ডাক্তারকে পোষ্টিং দেয়া হলে তাঁর অশুভ আচরন ও সামঞ্জস্যহীন ব্যবহারের কারণে বদলি নিয়ে চলে যান। ফলে রোগিরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।


বর্তমান স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ নিয়ে চতুর্দিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন াভিযান অব্যহত রাখলেও বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র
তারা বলেন, এখানে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও লোকবল না থাকায় সেটি বন্ধ রয়েছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ এসব সমস্যা সমাধানে ইউএইচও’র কোন আগ্রহ নেই। জনশ্রুতি রয়েছে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বাঘার ৮টি ক্লিনিক এবং ১৫ টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে তাঁর রয়েছে গোপন সখ্যতা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আটটি আবাসিক কোয়ার্টারে বহিরাগত একাধিক ব্যক্তিসহ চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারিদের বাসা ভাড়া দিয়ে প্রত্যেক বাসা হতে এক থেকে দুই হাজার টাকা করে ভাড়া উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে চলেছেন ডাঃ সিরাজুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নার্সদেরও। সম্প্রতি দু’জন নার্সকে বাজে ভাষায় গালি দেয়ার ঘটনায় ফুসে উঠেছিল সকল নার্স। পরে স্থানীয়ভাবে বসে সেটি আপোশ-মিমাংসা করা হয়। যার সত্যতা স্বীকার করেন ওই হাসপাতালের সিনিয়ার স্টাফ নার্স নাজনীন আক্তার।


অভিযোগ রয়েছে, অবসরে যাওয়া হিসাবরক্ষক মজিবুর রহমানের হাত দিয়ে গত এক বছরে ভুয়া ভাউচার তৈরীর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয় বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ওষুধ ও প্রতিষোধক কিনতে ১০ লাখ টাকা, বিভিন্ন আসবাবপত্র মেরামত বাবদ ৫ লাখ টাকা, মনিহারি সামগ্রি কিনতে ৩ লাখ টাকা, হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বাবদ ২ লাখ টাকা এবং শ্রমিক মজুরীর আড়াই লাখ টাকাসহ আপ্যায়ন, পেট্রোল কেনা, মোটর যান মেরামত, কম্পিউটার ক্রয় এবং স্টেশনারীসহ অন্যান্য খাতে লাখ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন ইউএইচও ডাঃ সিনরাজুল ইসলাম। অভিযোগকারীরা এসব তথ্য দিয়ে জানান, তদন্ত করলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে।


স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কর্মসূচির সাথে নিয়োজিত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তিনিসহ দু’জন শ্রমিক গত ১০ বছর থেকে এখানে মাস্টাররোলে কাজ করেন। তাদের পরিবহণ খরচ বাবদ বিগত সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতি মাসে ২ হাজার ৮শ’ করে টাকা প্রদান করতেন। কিন্তু বর্তমান ডাঃ সিরাজুল ইসলাম দায়িত্বে আসার পর থেকে সেই টাকা তিনি আত্মসাত করছেন।
ইতোমধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, স্যারের অনিহা ও গাফলতির কারনে আমরা সাতটি পদে প্রায় ১০০ জন কর্মচারী জুলাই’১৯ মাসের বেতনÑভাতা ও কোরবানী ঈদের বোনাস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারি।


তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডাঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি কোন দুর্নীতি করি না। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাদের মন জয় করতে না পারার কারণে তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। তবে দক্ষ হিসাব রক্ষক না থাকায় হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারে অবসর নেয়া হিসাবরক্ষক মজিবুর রহমানসহ বহিরাগত ৬ জনকে জায়গা দেয়ার সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − eleven =