মোঃ কামাল হোসেন, চট্টগ্রামঃ সেই বৃটিশ আমল থেকে অধ্যাবদি পর্যন্ত বংশ পরস্পরায় নিপুণ হাতে জুতা সেন্ডেল তৈরি করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগীর ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের মনুলাল রবি দাশ। বৃটিশ সরকার তাদের পূর্বপুরুষদেরকে বৃটিশ সেনাবাহিনীর জুতা সেন্ডেল তৈরির করতে ভারত থেকে অানা হয়েছিল। তাদেরকে আলমাস সিনেমা হলের পাশে ব্যাটারি গল্লির সম্মুখে রবি দাশ কলোনীতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বৃটিশ সরকার।
বর্তমানে এ পেশায় তেমন তার সাথে একমাত্র নাতি ছাড়া আর কেউ টিকে নেই। সরেজমিনে ঘুড়ে রবি দাশের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই, জীবনতো চলেই গেলো। গোষ্টির তেমন কেউ বেঁচে নেই। তিন সন্তান ও এক নাতি নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছি। শতাদিক বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ নিপুন হাতে জুতা বানানোর প্রাচীনতম এই সংস্কৃতিটি ধরে রাখতে আমি এখনো আমার একমাত্র নাতিকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রায় ৭০ বছর চুই চুই এই বৃদ্ধটি সকাল থেকে রাত ১১ ঘটিকা পর্যন্ত কাজ করেই যাচ্ছে। ইনকামও একেবারে খারাপ না। রবি দাশ আরও বলেন, বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচুর জুতা সম্মিলিতভাবে বানানো হয়েছিল বৃটিশ সেনাবাহিনীর জন্য। পাকিস্তান আমলেও প্রায় ১৬০ জন জুতা তৈরির কারিগর ছিল। বর্তমানে তারা কেউ বেঁচে নেই। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর সঠিক পৃষ্টপোষকতার অভাবে পেশাটি টিকে রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
জুতা তৈরির চামড়া সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সব মিলিয়ে তৈরি জুতার উপর এর প্রভাব পরছে। গত তিন চার বছর আগে যে জুতা ৪/৫ শত টাকা দিয়ে বিক্রি করতাম সেই জুতা এখন ৮/৯ শত টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে ক্রেতাও কমে গেছে আগের চেয়ে।বর্তমানে এ পেশায় তার পরিবার ছাড়া আর কেউ নেই বলে রবি দাশ জানান।
প্রায় ৬০ বছর বয়সি আবদুল করিম নামক একজন ক্রেতার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আধুনিক ও ডিজিটালের এই যুগেও মনুলাল রবি দাশের নিপুণ হাতে তৈরি জুতার আলাদা একটা মান রয়েছে। যার যার পছন্দ অনুযায়ি পায়ের মাপ অনুসারে জুতা তৈরি করে দেয় মনুলাল রবি দাশ। প্রতিবন্ধি ও ছোট, বড় পা বিশিষ্ট লোকেরা এখানে জুতা তৈরির অর্ডার দিয়ে যায়। বংশ পরস্পরায় এক জায়গায় বসে এই হস্তশিল্পটি চালিয়ে যাওয়ার কারণে এই এলাকার সবার সাথে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার।
এই কারণে তার তৈরি করা জুতার যে মান, সে হিসেবে তিনি এ এলাকার সবার নিকট থেকে উচিত মুল্যও দাবি করতে পারেনা। মনুলাল রবি দাশের নিপুণ হাতে তৈরি জুতা এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে বৃদ্ধ মনুলাল রবি দাশের দাশের নিপুণ হাতে জুতা তৈরির এই শিল্পটি দেশের অর্থনৈতিক ভান্ডারে অবদান রাখবে বলে বিশিষ্টজনের মতামত।