রাজউকের অথারাইজড অফিসার ৭/২ এলাকায় নিয়ম বহির্ভুত ভবনগুলো টিকেই যাচ্ছে

0
669

মো: আবদুল আলীম: রাজউকের অনিয়ম দুর্নীতির কারনে ঢাকা বসবাসের অনুপযোগি শহরে পরিণত হয়েছে। প্রায় দশ হাজারের ওপর ভবন রাজউকের নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মিত হয়েছে। এর পরও থেমে নেই নকশা বহির্ভুত বহুতল ভবন। অনিয়মিত এসব ভবনগুলোর ব্যপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দুদকও নড়েচড়ে বসেছে। কিছুদিন আগেও রাজউক ২২ টি টিম গঠন করে অনিয়মিত ভবনের তালিকা তৈরি করেছে। উক্ত তালিকা নিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও দুদক একযোগে কাজ করার কথা ছিল। আশা করা হয়েছিল নকশা বহির্ভুত ভবনের অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদ করে ঢাকা শহরকে রক্ষা করা হবে।

কিন্তু এই মহৎ পরিকল্পনা থেমে আছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কোন অদৃশ্য শক্তির হাত আছে বলে নকশা বহির্ভুত ভবনগুলোর ব্যপারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। রাজউকের নকশা পাশ করতে ভবন মালিককে কয়েক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ ছাড়া রাজউকে ফাইল নড়ে না যা দিব্যালোকের মত সত্য। এদিকে অনিয়মিত ভবনগুলোর ব্যপারে রাজউক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝে দুই একটি ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও হাজার হাজার অনিয়মিত ভবন বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।

অভিযোগ রয়েছে নকশা বহির্ভুত এসব ভবন মালিকদের কাছ থেকে রাজউকের ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসার ঘুষ নিয়ে থাকেন। রাজউকের অথারাইজড অফিসার-৭/২ এলাকায় অনিয়মিত ভবনের ছড়াছড়ি। ১০-১২-২০১৭ইং তথ্য প্রাপ্তির এক আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউকের অথারাইজড অফিসার-৭/২ এর স্মারক নং ২৫.৩৯.০০০০.০১১.৯৯.২৮৭ (৯).১৫.৯৮৪ তারিখ ০৪.০৪.২০১৮ইং এর মাধ্যমে জানান হয় আবদুস সোবহান গং হোল্ডিং নং ৩০/১ মনির হোসেন লেন, নারিন্দা, ঢাকা ঠিকানায় রাজউকের নকশা নং রাজউক/ন:অ:অ:/

জোন-৭/২-২১৯/১৪/ ০৭ স্থা তারিখ ১৯/০১/২০১৬ এর মাধ্যমে রাজউক হতে একটি বেজমেন্টসহ ১০ তলা ভবনের অনুমোদন হয়। ভবনটি সম্নুখে ৪.৮২/১.৫১ মি: এর স্থলে ১.৭০/১.৪০ মি:, পশ্চাতে ২.৩৪/২.০০ মি: এর স্থলে ১.২২/০.৭৬ মি:, ডানে ৪.৮২/১.৩৭ মি: এর স্থলে ১.০০ মি:, বামে ২.৩৪/১.২৫ মি: এর স্থলে ১.১০ মি: রেখেছেন। আরও জানান হয় মো: নাজির হোসেন গং, হোল্ডিং নং ৭৬, শরৎগুপ্ত রোড, নারিন্দা, ঢাকা এর অনুকুলে রাজউকের স্মারক নং ২৫. ৩৯.০০০০.১৩১.৩৩.০৪৮.১৬.১২৯ তারিখ ০৮/০৯/২০১৬ এর মাধ্যমে রাজউক থেকে ০৮ (আট) তলা ভবনের নকশা অনুমোদন হয়।

ভবনটি সম্নুখে ২.৫৬/১.৫৬ মি: এর স্থলে ০.৯১ মি:, পশ্চাতে ২.৫০/১.৫০ মি: এর স্থলে ০.৭৬ মি:, ডানে ১.০০/২.৫২.৩৫/১.৬৯/১.৭৩ মি: এর স্থলে ০.৭৬ মি:, বামে ১.০০ মি: এর স্থলে ১.০০ মি: রেখে নির্মিত। এভাবে প্রচুর অনিয়ম করে ভবনগুলো নির্মিত। ভবনগুলোর অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদের ব্যপারে কী পদক্ষে নেয়া হয়ে জানতে চেয়ে পুণরায় ০৮-০৮-২০১৮ইং তারিখ তথ্য চাইলে রাজউকের স্মারক নং ২৫.৩৯.০০০০.০১১.৯৯.২৮৭ (১০). ১৫-২৩০৯ তারিখ ৩১-০৮-২০১৮ ইং এর মাধ্যমে জানান হয় ইতোপূর্বে ভবনগুলোর তথ্য চাওয়াতে অনিয়মিত ভবনগুলোর বিষয় রাজউকের চেয়ারম্যানের দৃষ্টিগোচর হয়।

তাই তিনি ভবনগুলোর অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতকে অনুমোদন দেন। এ কারণে তথ্য কমিশন আইনের ধারা ০৭ (চ) অনুযায়ী তথ্য প্রদানের সুযোগ নাই। রাজউক প্রদত্ব উক্ত তথ্যে স্বাক্ষর করেন ইমারত পরিদর্শক আল নাইম মুরাদ, প্রধান ইমারত পরিদর্শক নিপেন চন্দ্র সিদ্ধা ও অথারাইজড অফিসার-৭/২ মোহাম্মদ নুর আলম। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে উক্ত ভবন দুইটির নির্মান কাজ প্রায় শেষ। সুউচ্চ ভবনগুলোর অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদ করা বর্তমানে কঠিন কাজ হবে। দীর্ঘ দিন অতিক্রম হলেও ভবন দুইটির ব্যপারে আজও কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি বলে দৃশ্যমান।

অথচ প্রায় দেড় বছর আগে যখন রাজউক থেকে ভবনগুলোর অনিয়ম সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে তথ্য প্রদান করা হয় তখন অভিযান পরিচালনা করলে অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদ করা সহজতর ছিল। উক্ত অনিয়মিত ভবনগুলোর কারনে নিকটস্ত ক্ষতিগ্রস্ত বসবাসকারীরা এ প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান যে, রাজউকের ইমারত পরিদর্শক থেকে শুরু করে অথারাইজড অফিসার পর্যন্ত উক্ত অনিয়মিত ভবনগুলো থেকে প্রচুর টাকা ঘুষ নিয়েছেন। যার কারনে উক্ত অনিয়মিত ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কোন অভিযান আজও নেয়া হচ্ছে না।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান ভবনগুলো রাজউকের নকশা ভঙ্গ করে নির্মানের সময়ও রাজউকের ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসার টাকার বিনিময়ে নিরব ছিলেন। এ ব্যপারে রাজউকের অথারাইজড অফিসার মোহাম্মদ নুর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নিতে গেলে তিনি প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে যান। রাজউকের অথারাইজড অফিসার-৭/২ এর এলাকায় নকশা বহির্ভুত ভবন সম্পর্কে এ প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় এ ব্যপারে আরও বিস্তারিত থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 5 =