যাত্রাবাড়ীতে এসআই ওমর ফারুকের মাদক বানিজ্য রমরমা: নেপথ্যে ওসি ওয়াজেদ

0
846

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে সায়েদাবাদ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ ওমর ফারুক প্রায় ৬০ পিস ফেনসিডিল সহ মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ৬পিসের মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বাকী ৫৪ পিস গেলো কোথায় এমন প্রশ্ন প্রত্যক্ষদর্শীদের। শুধু এখানে শেষ নয় মাদক উদ্ধার করা হয়েছিল ডেমরা থানাধীন ডগাইর এলাকার ৫১ নং নতুনপাড়া নুরুজ্জামান মিয়ার বাড়ীর ৭ তলার আমজাদের ভাড়াকৃত ফ্ল্যাট থেকে। অথচ মামলায় উল্লেখ করা হয় মাদক ব্যবসায়ী আমজাদকে আটক করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কোনপাড়া বাসষ্ট্যান্ড থেকে। আবার যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কিভাবে ডেমরা থানাধীন এলাকায় অভিযানে গিয়ে মাদক উদ্ধার করলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। যদি ডেমরা থানাকে বিষয়টি অবগত করে অভিযান করা হয়ে থাকে তাহলে মামলায় ঘটনার স্থান কেন যাত্রাবড়ীর কোনাপাড়া বাসষ্ট্যান্ড উল্লেখ করা হলো।


জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই ওমর ফারুক ১৬ এপ্রিল-২০১৯ নুরুজ্জামান মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে তার বাসা থেকে অন্তত ৬০ পিস ফেন্সিডিল সহ প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু গ্রেপ্তারের ঘটনাস্থল পরিবর্তন করে, আমজাদের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার না করে এবং ৬০ পিসের পরিবর্তে ৬ পিস উদ্ধার দেখিয়ে মামলা রুজু করে তাকে আদালতে চালান দেয়ার পেছনের রহস্য ছিলো এসআই ওমর ফারুক থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ সাথে সমন্বয় করে আসামী আমজাদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পিত নাটক।

আমজাদকে ৬ পিস ফেন্সিডিল জব্দ দেখিয়ে চালান করায় সে ১৯দিন পরেই জামিনে বেরিয়ে আসে এবং প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীকে হত্যার হুমকি দেয়। অর্থাৎ মোটা টাকার বিনিময়ে ওসি কাজী ওয়াজেদ ও এসআই ওমর ফারুক মাদক ব্যবসায়ী আমজাদকে কঠিন শাস্তির হাত থেকে বাচিয়ে হাল্কা করে মামলা দিয়ে চালান দেয়ায় জামিনে এসে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীদের উপর চড়াও হয়। জামিনে এসে আমজাদ তার দলবল নিয়ে মামলার এজারভুক্ত প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীকে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে বলে, তুই আমাকে ধরিয়ে দিয়েছিস, তোর কপালে খারাপি আছে। তুই সাপে গর্তে পা দিয়েছিস।


এদিকে, যেই ঘরে থেকে আমজাদকে মাদক সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই ঘরে ঐ সময় আমজাদের স্ত্রীও অবস্থান করে ছিল। আইন অনুযায়ী সেও ঐ মামলার আসামী হওয়ার কথা। কিন্তু তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি। আবার এসআই ওমর ফারুক যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ হয়ে ডেমরা থানাধীন এলাকায় অভিযানে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ঐ থানাকে অবহিত করার কথা থাকলেও সে এই নিয়ম অমান্য করে শুধুমাত্র সোর্সের দেয়া তথ্যমতে আমজাদকে গ্রেপ্তার করে গ্রেপ্তারের স্থান পরিবর্তন করে মামলা রুজু করে।

এসআই ওমর ফারুকের এই নাটকিয়তার পেছনে মুলরহস্য ছিলো আমজাদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং আমজাদের পিতা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও আমজাদের এক ভগ্নিপতি বর্তমানে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযান চলাকালে এসআই ওমর ফারুককে আসামী আমজাদ হোসেন তার মুঠো ফোনে তার ভগ্নিপতি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলিয়েছেন এবং এসআই ওমর ফারুক তাকে নিশ্চিত করে বলেন, স্যার বিষয়টি দেখছি। আমজাদ ডগাইর নতুনপাড়া এলাকার একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী হলেও সে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবু তাহেরে ছেলে। তার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে।

কিন্তু কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় দিঘিরপাড় নামে কোন গ্রামের অস্থিত্ব নেই। তাহলে মামলায় কেন এই ভুল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। আবার ডগাইর বড়ভাঙ্গা মসজিদের পাশে ও বোর্ড মিলের পাশে আমজাদের স্থায়ী দুটি বাড়ী আছে বলে প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে। তাহলে মামলার এজাহারে এসব স্থানের ঠিকানা কেন ব্যবহার করা হয়নি।
এব্যাপার এসআই ওমর ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন কথা বলবো না। কিছু জানতে হলে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট জিজ্ঞেস করুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 3 =