যাত্রাবাড়ীতে মা-মামার শেল্টারে পিতা খুন

0
472

স্টাফ রিপোর্টার: যাত্রাবাড়ীর মোমিনবাগে সম্পত্তি নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য মা-মামার পরিকল্পনায় নিজের জন্মদাতা পিতাকে খুন করেছে দুই সন্তান। এ ঘটনায় পুলিশ বৃদ্ধ মহিবুল্লাহকে (৬৫) হত্যার দায়ে তার ছেলে শামীম হাসান (২২) ও মেয়ে মহসিনা আফরোজ প্রীতিকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তারা সম্পত্তির জন্য মা-মামার পরিকল্পনায় বাবাকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে।যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানা গেছে, মোমিনবাগ এলাকায় মহিবুল্লাহর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা গৃহকর্তা মহিবুল্লাাহকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এমন খবরে থানার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল প্রত্যক্ষ করে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়। এরপর আমরা নিহতের ছেলে শামীম হাসান ও মেয়ে মহসিনা আফরোজ প্রীতিকে হেফাজতে নিয়ে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শামীম হঠাৎ কেঁদে ফেলে। এরপর বাবা হত্যার দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কান্নাজড়িত কন্ঠে ছেলে শামীম বলে, স্যার জন্ম থেকে জ্বলছি। ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত বাবা কখনও ঘুরতে নিয়ে যায়নি। আমাদের মাকে বিভিন্ন সময় মারধর করত। ২০০৮ সালে মাকে এক লাথি দিয়ে প্যারালাইজড বানিয়ে দেয়। সেই থেকে মা প্যারালাইজড। এরপরও বাবা প্রতিদিন মাকে মারধর করত। অত্যাচার করত। পারিবারিক সমস্যা এত বেশি যে আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেকদিন কথা বলি না।

আমাকেও বাবা তিনবার ছুরি ধরেছে মেরে ফেলার জন্য। শনিবার রাতে আমি ঘুমাতে যাই। আমার বোন মহসিনা আফরোজ প্রীতিও শুতে যায়। এ সময় বাবা মাকে গালিগালাজ করতে করতে একপর্যায়ে খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তখন আমরা ফেরাতে গেলে আমাদের দু’জনকে মার শুরু করে। এরপর আমি তাকে ধরে ফেলি। বোন মহসিনা আফরোজ প্রীতি কাচের একটি ভারি মগ দিয়ে মাথায় বাড়ি দেয়। এতে বাবার মৃত্যু হয়। এরপর আমরা ঘটনা আড়াল করতে ডাকাতির নাটক সাজাই। জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের মেয়ে মহসিনা আফরোজ প্রীতি একই রকম জবানবন্দি দিয়ে বাবা হত্যার দায় স্বীকার করে।

এলাকাবাসী জানায়, শামীম হোসেন ধানমন্ডি ডেফোডিল পলিটেনিক্যাল ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করে। তবে সে মাদকাসক্ত। খারাপ কাজের সাথে জড়িত। মহসিনা আফরোজ প্রীতিও বেপরোয়া জীবন যাপনে অব্যস্থ। বাবা মহিবুল্লার প্রবাস জীবনের সমস্ত টাকা পয়সাই তারা বিলাশিতা করে নষ্ট করে ফেলেছে। এখন স্থায়ী সম্পদ টুকু বিক্রি করে টাকা পাওয়ার জন্য তারা প্রায়ই মহিবুল্লাহর উপর আক্রমণ করতো। সুত্র জানায় শামীমের মামা জাহাঙ্গীর তাদের বাড়ী বিক্রি করে দাবী করেছিলো। ‍

কিন্তু মহিবুল্লা তাতে রাজী ছিলো না বলে মাদকাসক্ত ভাগিনা-ভাগনী দ্বারা নিজের দুলাভাই খুন করায়। কারন মামা জাহাঙ্গীর ভাগিনা শামীমকে যেভাবে বলে সেভাবেই কাজ করে। মহিবুল্লার মৃত্যুর পর ভাগিনা শামীমের মাধ্যমে বাড়ী বিক্রি করিয়ে খুব সহজেই টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে। নিহতের স্ত্রী হাসিনা ফেরদৌস এই হত্যাকান্ডে জড়িত রয়েছে। কারন সে হত্যাকান্ডকে আড়াল করতে বাড়ীতে ডাকাতির নাটকে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে।

ঘটনার পর সে সবাইকে বলেছে তার স্বামীর হাত-পা বেঁধে ডাকাতরা তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। কিন্তু তার সন্তান শামীম ও প্রীতি পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। নিহত মহিবুল্লাহর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর থানার বশিবপুর গ্রামে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সাহাজান ভূঁইয়া যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − 7 =