নানাবিধ কারণে ইমেজ সংকটে ভুগছে জবি ছাত্রলীগ

0
623

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান থাকলেও হঠাৎ করেই নানাবিধ কারণে ইমেজ সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম ‘হেভিওয়েট ইউনিট’ বলে খ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা।

\দীর্ঘ সময় কমিটিবঞ্চিত থাকা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আসীন না হতে পারা, কেন্দ্রে শক্ত অবস্থান না থাকা, শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নিজের আখের গোছানোর রাজনীতি, কর্মীদের ইভটিজিং, মাদক সেবন, রাস্তায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িত হওয়া, বিভিন্ন কারণে বারবার কমিটি স্থগিত এবং কারণ ছাড়াই লম্বা সময় অভিভাবকশূন্যতা এই ইমেজ সংকটের পেছনে বেশি দায়ী করছেন বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

বিশেষ করে গত অর্ধযুগ ধরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আলোচনায় থেকেছে জবি ছাত্রলীগ। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর শরিফুল ইসলামকে সভাপতি ও সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন করে তৎকালীন বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলমের কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটি ঘোষণার মাত্র দুই মাসের মাথায় ৯ ডিসেম্বর জবি ছাত্রলীগের হাতে রচিত হয় বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মারার কলুষিত অধ্যায়।

এরপর দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর শরিফ-সিরাজের হাতে ‘দায়িত্ব’ থাকাকালে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জুনিয়র কর্মীদের হাতে সভাপতির মার খাওয়া এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাধিকবার ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া সংবাদের শিরোনাম করেছে জবি ছাত্রলীগকে। শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রায় কয়েক কোটি টাকার মালিকও বনে যান বলে খবর প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে।

এরপর ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে শরিফ-সিরাজ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষিত হলে প্রায় সাড়ে ৬ মাস কমিটিবিহীন থাকে ছাত্রলীগের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইনের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সভাপতি পদে তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলকে জবি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসীন করা হয়।

দীর্ঘ সময় কমিটি বঞ্চিত থাকার পর এই কমিটির কাছে কর্মীদের চাওয়া পাহাড় সমান থাকলেও হতাশ হন তারা। বিভিন্নমুখী আলোচনার পর একটি ঘটনার জেরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ কমিটিও বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি বিলুপ্তির ৫ মাস পর ২০ জুলাই ফের সম্মেলন হলেও এখনো অভিভাবকশূন্যতায় ভুগছে জবি ছাত্রলীগ। কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ও পরে বিলুপ্ত হওয়ার কারণে গত দুই বছরের কোনো বছরেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে কোনো শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দেখা যায়নি।

এদিকে অভিভাবকশূন্যতা থাকলেও কমছে না শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মীর উশৃঙ্খলতা। ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও আশেপাশের এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছু খবরও এসেছে।

অপরদিকে ক্যাম্পাসের রাজনীতি বাদ দিলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে জবিয়ানদের তেমন ‘ভাইটাল’ পোস্টে দেখা যায় না বললেই চলে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেতা হয়েছিলেন সোহাগ-নাজমুলের সময়কালে। সেসময় প্রায় ৪৬ জন জবিয়ান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদধারী হন। এরপর সোহাগ-জাকিরের সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে স্থান পান ৪০ জনের মতো নেতা। এদের বেশিরভাগেরই স্থান হয়েছে সহ-সম্পাদক বা উপ-সম্পাদকের মতো নামমাত্র পদে। এরপর বর্তমান কমিটিতে স্থান আছে জনা বিশেক জবিয়ানের।

সাবেক নেতারা বলছেন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে যে ইউনিট সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে, সেই ইউনিটের এমন করুণ দশা অকল্পনীয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পর সবচেয়ে কর্মতৎপর মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে সব সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া জবি ছাত্রলীগের ইমেজ সংকট হতাশার ও আগামী দিনের জন্য হুমকিস্বরূপ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের উচিত, বিষয়টি এখনই ভাবনায় নেওয়া এবং আগামী দিনের জন্য সামগ্রিক বিবেচনায় তাদের নেতা বানানো, যাদের হাত ধরে আবার জবি ছাত্রলীগ তার পুরনো ঐত্যিহ্যে ফিরে যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, নবম ও দশম ব্যাচের ৯৫ শতাংশ ছাত্রলীগ কর্মীর জবিতে নেতা হওয়ার সুযোগ একরকম শেষ বলা যায়। কারণ এই দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের শিক্ষাজীবন শেষ বা শেষের পথে। আর নতুন কমিটি হলেও তা পূর্ণাঙ্গ হতে প্রায় এক বছর লেগে যেতে পারে বলে অনুমান করা যায়।

জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ বলেন, কোনো পরিবারের যখন অভিভাবকের শূন্যতা থাকে তখন সেই পরিবারের সদস্যরা এলোমেলো দিকে চলে যায়। জবি ছাত্রলীগের ব্যাপারটাও ঠিক সে রকম। সর্বশেষ কমিটি গঠনের আগে ও বর্তমানে লম্বা সময় ধরে জবিতে কোনো কমিটি নেই। ফলে ছেলেরা অভিভাবকশূন্যতার কারণে কিছুটা এলোমেলো চলাচল করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব জবিতে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি প্রদান করাই হবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মূল কাজ।

একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে জবি শাখার নেতাদের কোণঠাসা হয়ে থাকার পেছনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কেন্দ্রে কর্মীদের শ্রমের কদর না বোঝাতে পারার ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করেন আবু সাঈদ।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 − 9 =