আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এনামুল হকের প্রতারণা রুখবে কে

0
2741

মো: আহসানউল্লাহ হাসান:  শুধু সাধারণ মানুষ নয়, আইনশৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও প্রতারণা শুরু করেছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। জমির মালিকানা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানিয়ে অন্যের জমিতে আনসার ক্যাম্প বসিয়েছে বিতর্কিত এ গ্রুপটি। এভাবে অবৈধ দখলকে পাকাপোক্ত করার অপচেষ্টায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আমিন মোহাম্মদ সিটি প্রকল্পে সাইনবোর্ড দৃশ্যমান। নিজেদের প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য সেখানে আল-মুসলিম গ্রুপের জমি দখলে নিতে আনসার ক্যাম্প বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়ায় একশ’ বিঘার মতো জমি জোরপূর্বক দখল নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।ঈগল টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দখলে নেয়া শত বিঘা জমি ধরে রাখতে সেখানে চার বিঘা জায়গা জুড়ে আনসার ক্যাম্প বসিয়েছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। জমি দখলে নেয়ার জন্য আশপাশের পুরো এলাকা পাহারা দিচ্ছে আনসার সদস্যরা।

এ অবস্থায় বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগী আবাসন কোম্পানির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট এবং মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে আল-মুসলিম গ্রুপ। এর আগে  উপজেলা পর্যায়ে আবাসন প্রকল্প মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তাতেও কোন প্রতিকার মিলেনি। এ বিষয়ে আল-মুসলিম গ্রুপের ল্যান্ডবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম কাইউম ঈগল টিমকে বলেন, ঢাকা-মাওয়া সড়ক সংলগ্ন কুচিয়া পাড়া ও আশপাশের এলাকার তাদের গ্রুপের প্রায় ১০০ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। সরকারদলীয় ক্যাডার ভাড়া করে তারা তাদের কোম্পানির জমি জোরপূর্বক ভরাটও করছে।

এলাকাবাসীর কাছে বিষয়টি পরিষ্কার। কিন্তু এ কাজে সরকারদলীয় লোকজনের সমর্থন থাকায় তারা কিছু করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘অবাক হলেও সত্য, আনসার বাহিনীর ক্যাম্পও করা হয়েছে আল-মুসলিম গ্রুপের নিজস্ব জমিতে। এ বিষয়ে আনসার বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’এ প্রসঙ্গে সিরাজদিখান উপজেলার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কমান্ড্যান্ট ইদ্রিস আলী বলেন,

‘আমিন মোহাম্মদ সিটি প্রকল্পে একটি ক্যাম্প রয়েছে। যথাযথ নিয়ম মেনেই সেখানে আনসার ক্যাম্প করা হয়েছে। তবে ক্যাম্পের জায়গার মালিকানা কার, সেটা আমাদের জানা নেই। আর এটা জানাও আমাদের দায়িত্ব নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে যেহেতু অভিযোগ উঠছে, তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘আনসার বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, এমন কোনো কিছু করা হবে না।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুন্সীগঞ্জ জেলা কমান্ড্যান্ট শিরিন সুলতানা বলেন, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের এখানকার আবাসন প্রকল্পে আনসার ক্যাম্পের জায়গার মালিকানা নিয়ে জটিলতা শোনা যাচ্ছে। আল-মুসলিম গ্রুপ নামের একটি কোম্পানি ওই জায়গার মালিক বলে দাবি করেছে। এর সপক্ষে তারা কাগজপত্রও দিয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের কাছে আনসার ক্যাম্পের জমির মালিকানার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তারা কাগজ পত্র দিতে না পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে বিষয়টির সুরাহা করা হবে। মালিকানা সঠিক না থাকলে ওই কোম্পানিকে তাদের নিজস্ব জায়গায় আনসার ক্যাম্প করে দিতে বলা হবে। তারা সেটি করতে ব্যর্থ হলে আনসার ফোর্স প্রত্যাহার করা হবে।এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান গনমাধ্যমকে বলেন, অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে কোন আবাসন কোম্পানী  অন্যের জমি জবরদখলে নিলে তা নিখুঁতভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। কোনো ধরনের ত্রুটি পেলে ওই প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করা হবে।

স্থানীয় এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া রোড সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জের  সিরাজদিখান উপজেলায় ২০০৭ সালে আমিন মোহাম্মদ সিটি প্রকল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১১৫ একর এলাকায় দেড় হাজার প্লট করার পরিকল্পনায় কার্যক্রম চলছে। ১১৫ একর  জমির মধ্যে কমপক্ষে ৫ শতাধিক জমির মালিক বিদ্যমান রয়েছে। যাদের শতকরা ৯০ জনই তাদেও পৈত্তিক সম্পত্তি আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের নিকট বিক্রয় করতে রাজি নহে। কিন্তু জমি দখলকারী এই কোম্পানীটি চিহিৃত এই জায়গায় অধিক মুল্যে দুই/চার জনের জমি কিনে তাদের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। বাকী জমিগুলো দখলে নিতেই চালিয়ে যাচ্ছে আনসার ক্যাম্পের নাটক।

আমিন মোহাম্মদ সিটি প্রকল্পের প্রথম পর্বের পরিবেশ ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র পেলেও প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি। আইন মোতাবেক প্রকল্প অনুমোদনের আগে সাইনবোর্ড প্রদর্শন বা প্লট বিক্রি করা অবৈধ। অভিযুক্ত কোম্পানিটি এতদিন অবৈধভাবে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। সম্প্রতি ঈগল টিমের অনুসন্ধানে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জমিদখলের আগ্রাসন সম্পর্কিত একাধিক  প্রতিবেদন অপরাধ বিচিত্রায় প্রকাশের পর অভিযুক্ত কোম্পানিটি সাইনবোর্ডে ‘আমিন মোহাম্মদ সিটি লেখা’ সরিয়ে ‘আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ’ লিখেছে। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে প্লট বিক্রি এবং অন্যের জমি জবরদখল থেকে এখনও তারা পিছু হটেনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 17 =