ডিপিডিসির উপ-প্রকৌশলী নাসিরউদ্দিনের ঘুষের ফাঁদে লঙ্কাকান্ড!

0
481

স্টাফ রিপোর্টার: ডিপিডিসির যাত্রাবাড়ী জোনের স্বামীবাগ অফিসের উপ-প্রকৌশলী নাসরউদ্দিনের মনগড়া নিয়মে গ্রাহকের জরিমানা করা হয়েছে ৫ লাখের পরিবর্তে ৩ লাখ। আর এই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নি:স্ব এখন বিদ্যুতের গ্রাহক। তবে মোটা অংকের ঘুষ দিলে এই জরিমানার টাকা পরিশোধ করার দরকার হয় না বলে জানায় গ্রাহকেরা। নানা কারন দেখিয়ে বিদ্যুতের গ্রাহকদের মনগড়া নিয়মের ফাঁেদ ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রকৌশলী নাছিরউদ্দিন চক্র। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর এলাকার ৩৩নং বাড়ির গ্রাহক রাশিদা বেগমের বিদ্যুত বিল বকেয়া হয়ে ছিল। ডিপিডিসির স্বামীবাগ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৗশলী খন্দকার মাসুকুর রহমান পরিদর্শনে গিয়ে রাশিদা বেগমের সাথে বকেয়া বিল নিয়ে আলোচনা করে জানায় ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে বকেয়া বিলের সমস্ত ঝামেলা শেষে করে দেয়া হবে এবং বকেয়া বিলের দায়ে তার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হবে না। রাশিদা বেগম সরল মনে মাসুকুর রহমানের কথা বিশ্বাস করে তার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়।

একারনে মাসুকুর রহমান বিদ্যুতের লাইন চেক করে সমস্যা দেখে খাম্বা থেকে তার কেটে জোড়া লাগিয়ে টেপ পেচিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে এটা ঠিক করে নিতে বলেন, তানাহলে ডিপিডিসির লোক এসে জরিমানা করতে পারে বলে শর্তক করে দেন। সেই সাথে বিদু্যুতের বিল পেপার ঠিক করে দেয়ার আশ^াস চলে যান। কিন্তু মাসুকুর রহমানের কথা অনুযায়ী কাজ না হওয়াতে রাশিদা বেগম ডিপিডিসির অফিসে গিয়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাছির উদ্দিনকে অবগত করেন।

এতে ডিপিডিসির কর্তৃপক্ষ পুনরায় রাশিদা বেগমের বাসায় লোক পাঠায়। তারা এসে তারকাটা দেখতে পেয়ে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে সমস্ত সার্ভিস তারটি কেটে নেয়। রাশিদা বেগম পুনরায় লাইনটি চালু করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালে  উপ-প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন ৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন। এতে রাশিদা বেগম তার এক আত্মীকে নিয়ে অনেক অনুরোধ করার পর ডিপিডিসির ওই কর্মকর্তা ৪ লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু ডিপিডিসির কর্মকর্তারা রাশিদা বেগমের ওই আত্মীয়ের পরিচয়

জানার পর নামাজ বিরতির কথা বলে অপেক্ষা করতে বলেন এবং বিষয়টি ভালো ভাবে সমাধানের আশ^াস দেন। বিরতির পরে প্রকৌশলী নাছির উদ্দিনের রুমে বসে ৩ লক্ষ টাকার জরিমানা বিল বাউচার ধরিয়ে দেন এবং বলা হয় ১ লক্ষ প্রদান টাকা দিলে সংযোগটি চালু করা হবে। পরবর্তীতে রাশিদা বেগম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সংযোগটি চালু করেন এবং অবশিষ্ট টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু রাশিদা বেগম ঘুষখোর প্রকৌশলী মাসুকুর রহমানের অপকর্মের বিষয়ে উপ-প্রকৌশলী নাছির উদ্দিনকে জানালে তিনি বলেন, আপনারা একটি অভিযোগ দায়ের করেন আমি ব্যবস্থা নিব। পরবর্তীতে মাসুকুর রহমানের কাজে যোগদানের খবর পেয়ে রাশিদা বেগম পুনরায় তার নিকট ঐ আতœীয়কে নিয়ে ডিপিডিসির কার্যালয়ে উপস্থিত হলে ২ঘন্টা বৈঠক করে উক্ত ৫০ হাজার টাকার একটি বিল রাশিদাকে ধরিয়ে দেন।

রাশিদা বেগম এই বিষয়ে ডিপিডিসির ম্যানেজার শহিদুল মান্নান চৌধুরীকে বলেন, স্যার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমি কিস্তিকৃত বিল পরিশোধ করবো। মাত্র ৩ দিন আগে ধার দেনা করে ৫০ হাজার টাকার বিল দিয়েছি, এখন পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করতে হবে। আপনাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো মাসুকুর রহমান কর্তৃক হাতিয়ে নেয়া ৫০ হাজার টাকা বিষয়ে আপনারা কোন প্রকার দায় দায়িত্ব বহন করবেন না। অথচ এখন আপনারাই সেই টাকা কিভাবে বিল বাবদ আমাকে ধরিয়ে দিচ্ছেন। প্রতি উত্তরে ম্যানেজার কোন কথাই বলেননি।

ডিপিডিসির কর্মকর্তারা নাটকীয় ভাবে রাশিদা বেগমের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। রাশিদার বকেয়া বিলের নির্ধারিত অংশ জরিমানা হওয়ার বিধান থাকলেও নাছির উদ্দিন মনগড়া নিয়মে রাশিদাকে লাখ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে।

সুত্র জানায়, ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করার কৌশল হিসেবে। কারন এক লাখ টাকা ঘুষ দিলে গ্রাহকের কোন সমস্যাই থাকবে না। আর গ্রাহক মোটা অংকের জরিমানা থেকে বাচঁতে হলে নিজের ইচ্ছেতেই ঘুষ প্রদান করবে এটাই স্বাভাবিক। এব্যাপারে উপ-প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা এই অফিস থেকে কোন তথ্য দেয়া না। আপনারা কিছু জানতে চাইলে হেড অফিসে যান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × four =