বাংলাদেশ রেলওয়েকে খাদে ফেলেছে ডেমু ট্রেন দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে না

0
762

মো: আলীম: বাংলাদেশ রেলওয়ে বহু বছর যাবত লোকসানের ঘানি টানছে। অদক্ষতা, অদুরদর্শীতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকারে পরিণত হয়ে পরিবহন সেক্টরের এই খাতটি আজ যেন অভিভাবক শুন্য। রেলওয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত এদেশের রেলওয়েতে এক সময় কয়লার ইঞ্জিন ছিল। এই ইঞ্জিনের সামনের অংশটি ছিল বয়লার যার ভেতরে পাথর কয়লা ও বাষ্প সৃুষ্টির জন্য পানি ও আগুন থাকতো। পেছনের অংশ ছিল মূল ইঞ্জিন যেটাতে চালক বসে নিয়ন্ত্রন করতেন। ইংল্যান্ডের ভালকান কোম্পানি থেকে তৈরি এ লোকোমোটিভগুলো যাত্রী ও মালামাল পরিবহণের জন্য ব্যবহার হতো। ১৯৭৫ সন পর্যন্ত এগুলো বাংলাদেশের রেলপথে দেখা গেছে। এরপর উধাও। রেল ভবন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে কয়লার ইঞ্জিনগুলো রেলওয়ের বিভিন্ন সেডে অযতেœ পড়ে থাকতে থাকতে মেরামত বা ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। রাতের আধারে এসব ইঞ্জিনের পার্টস ক্ষোদ লেওয়ের কর্মচারিরাই চুরি করে বাইরে বিক্রি করে দেয়।

রেলওয়ে এ ব্যাপারে অজুহাত দেখাচ্ছে দক্ষ কারিগরের অভাব ও খুচরা যন্ত্রপাতির অভাবে কয়লার ইঞ্জিনগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না এমনকি রেলওয়ের ঐতিহ্য হিসেবে তা প্রদর্শনী হিসেবেও রাখা যাচ্ছে না। বর্তমানে হারিয়ে যাওয়া কয়লার ইঞ্জিনগুলো দেশের কয়েকটি রেলওয়ের সেডে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে বলে রেল বিভাগের কিছু কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান। কয়লার ইঞ্জিনের আমলের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে খুব কমই লাভের মুখ দেখছে বলে রেলওয়ে থেকেই জানা গেছে।

লোকসানের পাল্লায় ডেমু ট্রেন। রেল ভবন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২০১৩ সালে জিওবি অর্থায়নে মোট ২০ সেট ডেমু সেট মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু সংগ্রহ করা হয়। সিডি-ভ্যাটসহ মোট ৬৮৬.৫৮ কোটি টাকা ব্যয় হয় এই ডেমু ট্রেন আনতে। প্রকাশ, তৎকালীন যোগাযোগ মস্ত্রী আবুল হোসেন এই ডেমু ট্রেন আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি শখের বসে এটা করেছেন না অন্য কোন কারনে করেছেন তার স্পষ্ট বক্তব্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কোন কর্মকর্তা দিতে পারছেন না। তবে এই ডেমু বাংলাদেশ রেলওয়েতে ডেঙ্গু সৃষ্টি করেছে। আয়ের চাইতে ব্যয় বেশি থাকায় এটা একটি বিরাট লোকসানী খাত।

দেশের বিভিন্ন লাইনে চলাচল করে ২০১৩ থেকে অদ্য পর্যন্ত ডেমু লাভ করেছে প্রায় ২১ কোটি টাকা যার হিসেব রেল ভবন থেকে প্রাপ্ত। এদিকে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি টাকার বেশি। তাছাড়া ২০ সেট ডেমুর মধ্যে বর্তমান ১১ সেট চালু, ৫ সেট মেইন্টেনেন্স স্পেয়ার ও ৪ সেট বিশেষ মেরামতাধীন রয়েছে। এই ৫ সেট+৪ সেট= ৯ সেট ডেমুর ভবিষ্যত কী হবে তা সময়েই জানা যাবে। তবে এগুলোর ভবিষ্যৎ যে ভাল নয় তা আন্দাজ করা যায়। কারন ডেমু আমদানির পর প্রায় ৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যবাধি কোন ডেমু ওয়ার্কসপ তেরী হয়নি। যেমন এক কালের কয়লার ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য কোন ওয়ার্কসপ, দক্ষ কারিগর বা স্পেয়ার পার্টস ছিল না।

কয়লার ইঞ্জিনের পথ অনুসরন করে  ডেমুও অচিরেই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে এমনটাই আশংকা করছে রেলওয়ের কর্মকর্তাগণ। শুধু পেছনে রেখে যাবে লোকসানের পাহাড়। ওয়ার্কসপের অভাবে ডেমু ওভারহলিং করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম ও পার্বতীপুরে কোন ডেমু সেড না থাকায় চট্টগ্রাম লোকো সেড এবং পার্বতীপুর লোকা সেডের জনবল এবং অভ্যন্তরীন আনুসাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে হালকা মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন করা হয়।

তবে তা দির্ঘস্থায়ী কোন সমাধান দিতে পারছে না। ৬৮৬.৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করে আনা ডেমু আর কতদিন চালু থাকবে ও কিভাবে এ টাকা যাত্রীসেবা থেকে ওঠে আসবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ডেমু আমদানিতে যেসব কর্মকর্তা উদ্যোগ নিয়েছেন, ক্রয় সংক্রান্ত কাগজে ও চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তাদের নাম, পদবি, বর্তমান কর্মস্থল ও যোগাযোগের সহজ মাধ্যম জানানোর জন্য তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও অদ্য পর্যন্ত উক্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদেরকে আড়াল করতে চেষ্টা করছে। দুর্নীতিবাজরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তবে সরকারের উর্ধ্বতন বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট মহল। কারন দুদক ইতোমধ্যে রেলওয়ের টিকেট কালোবাজারি, রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দুর্নীতি, পুকুর জলাশয় ইজারা নিয়ে দুর্নীত ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

ডেমু নিয়ে তদন্ত করলেও অনেক ঘটনা জনসাধারনের সামনে উন্মুক্ত হতে পারে। ডেমু ট্রেন নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতিসহ বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিরাজিত অপরাপর অনিয়ম দুর্নীতি সম্পর্কে এ প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় প্রকাশিত হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five − 1 =