সোনালী ব্যাংকে আরেক হলমার্ক ঘটনা: এফআরআই দিলীপের ৩ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের পকেটে!

0
613

স্টাফ রিপোটার: সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের তৎকালীন ডিজিএম আব্দুস সালাম একজন ডিএমডি ও তার অধীন্যস্ত কর্মকর্তারা ৩ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে নাম সর্বস্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে ১ম দফায় ১৮ কোটি টাকা শিল্প ঋণ দিয়েছে। সেই সাথে ২য় দফায় উক্ত ঋণ বর্ধিতকরনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রেখেছে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিভাবে উক্ত ঋণ প্রজেক্টের সকল তথ্য যাচাই বাছাই না করেই কোটি কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অপরাধ বিচিত্রায় এই অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। চলছে নানা তদন্ত। আর তদন্ত ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের এমডি দিলীপ কুমার দাস। তবে শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় রয়েছে উৎসুক জনতা।

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শিল্প ঋণ কর্মসূচির আওতায় হাটাব, মাসুমাবাদ রূপগঞ্জ নারায়নগঞ্জে ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের একটি প্রকল্পে ১৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে ২০১৫ সালে। উল্লেখিত ঠিকানায় ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করলেও সেখানে তাদের কোন কার্যক্রম ছিলো না। ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের এমডি দিলীপ কুমার দাস সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ৩ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে লোক দেখানো প্রকল্প সাজিয়ে ঋণ পাশ করিয়ে নেয়।

প্রকল্পে ১৫ শতাংশ জমি মধ্যে ৫ শতাংশ জমি রাস্তার জন্য বাদ অবশিষ্ট ১০ শতাংশ জমিতে কিভাবে এতো টাকা ঋণ পাশ হয়। রাবার মিক্সার রোলারের সরকারী দর জনতা ব্যাংক অনুসারে ১৬ হাজার ডলার। কিন্তু সোনালী ব্যাংক তা নির্ধারন করেছে ৮০ হাজার ডলার। ডিজেল জেনারেটর (পারকিনস ব্রান্ড এর স্ক্রাপ) ক্রয় করেছে মাত্র ১২ লাখ টাকা আর ব্যাংক ধরেছে ৪৮ লাখ টাকা।

কারখানায় দুটি হ্যান্ড প্রিন্ট মেশিন যার দাম ১ লাখ টাকার বেশী নয় তার মুল্য ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। ৩শ বস্তা ওভেন ব্যাগে বালি ঢুকিয়ে কাচামাল হিসেবে দেখানো হয়েছে। যা বর্তমানে কারখানাতেই মজুদ আছে। এটা মুলত পুরোটাই জালিয়াতি। বর্তমানে যেখানে ১ লাখ ডলারের মালামালও মজুদ নেই অথচ দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ডলারের মুল্য। স্থায়ী যন্ত্রপাতির হিসেবে যেগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো বাস্তবে লোহার প্লেট।

যাহা বাজারে ৫০ টাকা দরে বিক্রয় করা হয়। ১৫/০৮/২০১৯ তারিখে প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার কথা থাকলেও ফ্লাইরাবার তা পরিশোধ না করায় তারা খেলাপী গ্রাহকের তালিকায় চলে যায়। কিন্তু তারপরেও ব্যাংক তাদেরকে কিভাবে ঋণ দিচ্ছে সেই প্রশ্ন ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে। ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজকে তৎকালীন সময়ে লোকাল অফিসের জিএম নজরুল ইসলাম (বর্তমানে ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চে কর্মরত) ঋণ প্রদানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলো। ফ্লাইরাবারের এমডি দিলীপ কুমার দাস এখনো তাকে খুশি রাখার জন্য বড় বড় মাছ, টাকা পয়সা সহ নানা উপঢোকন দিয়ে থাকেন।

সুত্র জানায়, ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রধান কার্যালয় রাজধাণীর লালবাগের ৫০ সুবোল দাস রোডে দেখানো হলেও সেখানেও তাদের কোন  অফিস ছিলো না। ভূয়া কাগজপত্র ডিড ডকুমেন্ট দেখিয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। ঋনের বিপরীতে জামানত হিসেবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দীলিপ কুমার দাস ঢাকার খিলগাও থানাধীন গজারিয়া মৌজাস্থ ৫৩ শতাংশ জমির দলিল ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা মুল্য নির্ধারন করে বন্ধক রাখে।

যা ১৮ কোটি টাকা ঋণের সাথে সামঞ্জস্য নহে। কারন নিয়ম অনুযায়ী ৭০ শতাংশ হলে উক্ত জামানতে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা। কিন্তু ঘুষের টাকা নির্ধারিত থাকলে আব্দুস সালাম ও নজরুল ইসলাম সিন্ডিকেটের কাছে এটা কোন ব্যাপারই না। হলমার্কের মতো যে কোন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানই কোটি কোটি ঋণ বাগিয়ে নিতে পারে এমনটাই বলে বেড়ায় সোনালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।

এদিকে ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের জামানতের ৫৩ শতাংশ জমি নিয়ে দিলীপ কুমার দাসের সাথে তার প্রতিপক্ষের দুইটি মামলার বিচার কার্যক্রম আদালতে চলমান রয়েছে। যার একটি যুগ্ন জেলা জজ আদালত-১, মামলা নং-১১৫/১০ এবং অপরটি যুগ্ন জেলা জজ আদালত-২,মামলা নং-৪০৯/১৬। তবে আদালতে মামলা থাকার পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিভাবে ঋণ প্রদান করে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অপর একটি সুত্র জানায়, ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের কর্মচারীদের বেতনভাতা অনেকদিন যাবৎ পরিশোধ করছে না এমডি দিলীপ কুমার দাস। বেতন চাওয়ায় দিলীপ কুমার দাস তার কর্মচারী শাহ জালালকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। শাহ জালাল বর্তমানে চায়ের দোকানদার। দিলীপ কুমার দাসের পরিকল্পনা ছিলো গত কোরবানীর ঈদের উক্ত ঋণটি পাশ করাতে পারলে সমস্ত টাকা নিয়ে ভারত চলে যাবে।

কিন্তু বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ার তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবে যে কোন কিছুর বিনিময়ে ঋণটি পাশ করিয়ে সাজানো প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে ভারতে পালিয়ে যাবে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।এব্যাপারে ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের এমডি দিলীপ কুমার দাস বলেন, ১৮ কোটি টাকা ঋণের বিষয়টি সঠিক নয়। আমার প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে সাড়ে ১২ কোটি টাকা। অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধান শেষে থাকবে বিস্তারিত প্রতিবেদন

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen + 16 =