প্রয়োজনে তিনি অবৈধ অস্ত্রেরও ব্যবহার করতেন

0
495

ক্লাব পরিচালনার আড়ালে দীর্ঘদিন ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ।শুক্রবার গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র‌্যাবকে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি অবৈধ অস্ত্রেরও ব্যবহার করতেন। মামলার এজাহারেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে র‌্যাব অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করেছে। দুই মামলায় ৫ দিন করে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, শফিকুল আলম ফিরোজকে কৃষক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শনিবার র‌্যাব-২ এর পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ খান বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় মামলা দুটি করেন। অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলাটির নম্বর ২০ এবং মাদক আইনে দায়ের হওয়া মামলার নম্বর ২১।

শুক্রবার অস্ত্র-গুলি, ইয়াবাসহ শফিকুল আলম ফিরোজ ও তার ৪ সহযোগীকে ক্লাব থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মামলায় শফিকুল আলম ফিরোজকে আসামি করা হলেও বাকি ৪ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ওই চারজন ছিলেন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী। সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অভিভাবক ডেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

শনিবার মামলা দায়েরের পর শফিকুল আলম ফিরোজকে ধানমণ্ডি থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। এরপর ধানমণ্ডি থানা পুলিশ দুপুর সোয়া ২টার দিকে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখে। বিকাল সাড়ে ৪টায় তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তারের আদালতে অস্ত্র আইনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই মো. নুরউদ্দিন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। একই আদালতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় একই থানার এসআই আশিকুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে আদালত আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন মো. আজাদ রহমান ও মো. হেমায়েত উদ্দিন খান। শুনানিতে তারা বলেন, আগে সিনেমায় ক্যাসিনো দেখা যেত। আজ তা বাংলাদেশে। আসামিদের মতো মানুষ দেশের যুবসমাজ ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেখানে হওয়ার কথা ক্রীড়া চক্র, সেখানে আজ জুয়াচক্র, মাদক আর অস্ত্রবাজি। আসামি নিজ হেফাজতে অস্ত্র ও মাদক রেখেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।

অপরদিকে আদালতে অ্যাডভোকেট মাসুদ এ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদনের শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, বিচার চাওয়া ও পাওয়ার অধিকার সবার আছে। আসামিকে নিজ বাসা থেকে ধরে নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য যে অফিস ঘিরে রেখেছে, সেখানে মাদক বিক্রি করছেন- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

তিনি (আসামি) ২৭ বছর ধরে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শত্রুতাবশত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে মামলা করানো হয়েছে। অস্ত্র ওনার (শফিকুল) অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে। তিনি (শফিকুল) সভাপতি। অফিস রুমের চাবি নিয়ে তিনি ঘুরেন না। চাবি থাকে পিয়ন, দারোয়ানদের কাছে। আর তাদেরই ধরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। উনি (শফিকুল) মাদকবিরোধী অনেক সভা-সমাবেশ করেছেন। বহু লোককে বিদেশ পাঠিয়েছেন। তিনি মাদক বিক্রি করেছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য না। ক্যাসিনোর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি হার্টের রোগী। রিমান্ডে নেয়ার কোনো যুক্তিকতা নেই। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।

এর আগে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে শফিকুল আলম ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব।

এজাহারে যা আছে : শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেছেন র‌্যাব-২ এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ খান। তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, শফিকুল ইসলামের হেফাজত থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। কাঠের বাঁটযুক্ত আট ইঞ্চি লম্বা পিস্তলটির গায়ে মেড ইন ইউএসএ লেখা। এতে ফায়ারিং পিন ও ট্রিগার সংযুক্ত আছে।

এতে একটি ম্যাগাজিনে তিনটি তাজা গুলি পাওয়া গেছে। এছাড়া ৭টি এয়ার টাইট নীল রঙের পলিথিন প্যাকেটে ৯৯০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। যার ওজন ৯৯ গ্রাম। এজাহারে বলা হয়, অভিযানের সময় শফিকুল আলম ফিরোজের অফিসের ফাইল ক্যাবিনেটের সেকেন্ড ড্রয়ার থেকে অস্ত্র ও গুলি এবং উপরের ড্রয়ার থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি এসবের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কোনো প্রশ্নের সদুত্তরও দিতে পারেননি।

জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল আলম ফিরোজ উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে স্বীকার করেন যে, তিনি ওই ক্রীড়া চক্রের সভাপতি এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজ হেফাজতে রেখে ক্রীড়া চক্রের কার্যক্রমের আড়ালে দীর্ঘদিন অবৈধ মাদকদ্রব্য (ইয়াবা) ব্যবসা করে আসছিলেন। শফিকুল আলম নিজ হেফাজতে ৯৯০ পিস ইয়াবা বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখার অপরাধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬-এর ১-এর ১০(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ম্যাগাজিন রাখায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের (সংশোধনী ২০০০) ১৯এ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় পৃথক একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে।

জানা গেছে, শফিকুল আলম ফিরোজ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বায়রার সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার রাঘই গ্রামের মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। ঢাকায় ধানমণ্ডির ৬নং রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি।

কৃষক লীগ থেকে বহিষ্কার : যুগান্তরের কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন কোটালীপাড়ায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, শফিকুল আলম ফিরোজকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × five =