সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আসুন দাদা

0
687

চলচ্চিত্রের গানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শরীরে ক্যানসার ধরা পড়েছে। গতকাল শনিবার তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসার প্রথম ধাপে তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাঈদ খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন এন্ড্রু কিশোর। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং আরেকজন সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাঈদ। জাহাঙ্গীর সাঈদ ঢাকায় ফিরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এন্ড্রু কিশোরের কিডনি ও হরমোনজনিত সমস্যা ছিল। এ কারণে তাঁর ওজন হ্রাসসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এড্রেনাল গ্লান্ড বড় হয়ে গেছে। পাশাপাশি তাঁর আরেকটি সমস্যা হলো জ্বর। প্রতিদিন তাঁর জ্বর আসছে। এসব নিয়ে চিকিৎসকেরা চিন্তিত ছিলেন। কেন এভাবে জ্বর আসছে, তার সমাধান খুঁজছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া তাঁর শরীরের কিছু নমুনা বায়োপসির জন্য পাঠানো হয় ল্যাবে। সে রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হয়েছেন এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারের ভুগছেন। এখন তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

চিত্রনায়ক ওমর সানিও এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। আজ রোববার সকালে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সিঙ্গাপুরে আসলাম দাদার সঙ্গে দেখা হবে না? এন্ড্রু কিশোর অনেক কথা বললেন। তাঁর কেমো শুরু হয়েছে। ১৮টা লাগবে আর সময় লাগবে তিন মাস। সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আসুন দাদা।’

সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এন্ড্রু কিশোরকে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় তিনি এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক সমস্যার খোঁজ নেন এবং তাঁর হাতে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। জানা গেছে ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ শিল্পীর চিকিৎসায় সহায়তায় আরও ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুদান নয়, আমরা প্রতিদান স্বরূপ এন্ড্রু কিশোরের বিপদের সময় পাশে থেকেছি। বাংলা গানে বিশেষ করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে তাঁর অবদান অসামান্য। আমাদের দায়িত্ব তিনি না চাইলেও তাঁর পাশে থাকা। শিল্পীসমাজ নিজেদের উদ্যোগে তাঁর চিকিৎসার সহায়তার তহবিল গঠনের কাজ করেছে।’

এন্ড্রু কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। মা স্কুল শিক্ষিকা মিনু বাড়ৈ তাঁর প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের নামের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখলেন। শখের বশে রাখলেও তিনি হয়তো ভাবেননি যে তাঁর এই সন্তানই হবে বাংলা চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। রাজশাহীতে কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীত পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।

১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’ প্রভৃতি।

এন্ড্রু কিশোর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। কয়েজন বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ‘প্রবাহ’ নামে একটি নির্মাণ ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। তবে সেটি একসময় বন্ধ হয়ে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × one =